সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭

আপেক্ষিক তত্ত্ব

বিমল কান্তি দাশ
আপেক্ষিক তত্ত্ব

আদিকাল থেকেই এদেশের মানুষ সরল-সহজ-আবেগপ্রবণ। এরা আবেগমথিত বাতাবরণে তথাকথিত গণতন্ত্র কায়েম করে ফেলে। যা ভাবীকালে কোনোটা সামরিক গণতন্ত্র, কোনোটা বা স্বৈরতন্ত্র আবার কোনোটি বা নিছক পরিবারতন্ত্র, আবার কোনোটি বা দুর্বৃত্তায়ন তন্ত্র রূপে আত্মপ্রকাশ করে। যেগুলোর অন্তর্নিহিত তত্ত্ব হলো সমূলে পাষব।

সর্বপ্রথম বিশ্ব নবীজী (সাঃ) খোলাফায়ে রাশেদীনের চার খলিফার নির্বাচন করেছিলেন যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, তার সার-সংক্ষেপ হলো যে, গণতন্ত্রের ধারক ও বাহকের মধ্যে গ্রহণীয় চারিত্রিক বেশিষ্ট্য সমন্বিত, বর্জনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সমাহার থাকতে হবে। অন্যথায় তামাম আশরাফুল মাকলুকাত তার স্বাধিকার হারাবে। যা অবশ্যই মানবতাবিরোধী।

আবার আমেরিকার সুযোগ্য রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন ১৮৬০ সালের ১৯ নভেম্বর গণতন্ত্রের যে যুগান্তকারী সংজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা হলো : অ উবসড়পৎধঃরপ মড়াবৎহসবহঃ রং ঙভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ইু ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ঋড়ৎ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব.

দেশ পরিচালনায় এই বস্তুনিষ্ঠ ভাবধারার অনুসরণে আজ আমেরিকা বিশ্ব মাতব্বর হয়েছে। এ কাজটি করতে আমেরিকাকে সুনীতির অনুসরণ, অনুকরণ এবং যথাযথ বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হয়েছে। তাই আমেরিকা আজ অনুকরণীয়।

জাপান পৃথিবীতে প্রথম সূর্যোদয়ের দেশ। জাপানে একই সাথে রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মিশ্রণ রয়েছে। কিন্তু জাপানী নাগরিকরা হাড়ে হাড়ে সুনাগরিকত্ব বোধের অধিকারী। যা আমাদের বাংলাদেশে অত্যন্ত বিরল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সমাপনান্তে জাপনীরা নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সংগ্রহের প্রয়োজনে বাজারে যেত বাস্কেটভর্তি টাকা নিয়ে, বাজার থেকে ফিরতো পকেটভর্তি জিনিস নিয়ে। আর আজকের জাপান বিশ্বে অনুপম বললেও অত্যুক্তি হবে না। এটা সম্ভব হয়েছে সুনাগরিকত্ব বোধের কারণে। আমাদের দেশের নাগরিক এতোই অতৃপ্ত জীব যে, কোনো অফিসের সর্বোচ্চ চেয়ারখানা আচারে বিমুখ কিন্তু প্রচারে ব্যস্ত। এতেই দেশটি আজ একেবারেই দুর্নীতিগ্রস্ত রসাতলে। দেশে গণতন্ত্রহীনতা জাতিকে সার্বিক দৈন্যতায় নিমগ্ন করে দিয়েছে।

গণতন্ত্রহীনতায় মানবতা বিসর্জিত হয়, নাগরিকত্ব বোধের দায়-দায়িত্ব বিলুপ্ত হয়। বস্তুনিষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষা থেকে জাতি বঞ্চিত হয়, ফলে সমাজে কিশোর সন্ত্রাসীর উদ্ভব ঘটে। তখনই স্বেরতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে, কারণ এ দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় মাতৃভাষার প্রাঞ্জল্যে শিখে নাই 'ঔদার্য অতি মহৎ গুণ'। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত যদি শক্ত না হয় তবে মাধ্যমিক শিক্ষা ও মেরুদণ্ডহীন, তৎপরবর্তী উচ্চশিক্ষাও 'না ঘরকা না ঘাটকা'। বিগত দীর্ঘদিন যাবৎ এদেশে তথাকথিত প্রায়োগিক শিক্ষা কারিকুলামের বাতাবরণে যে সমস্ত নামসর্বস্ব শিক্ষিত লোক সমাজে এসেছে, তাদের কিশোর সন্ত্রাসী হওয়ার পেশা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

বাংলাদেশে একটা জুলুমবাজ সরকারের পতন হয়ে একটা মনোনীত অন্তর্র্বতী সরকার এসেছে। একটা নির্বাচিত সরকার কড়া নাড়ছে। সেই হবু সরকারকে হতে হবে অবশ্যই ক্ষমতার দ্বন্দ্বাতীত শিক্ষাপ্রেমিক সরকার।

একটা আদর্শ দেশের ভূষণ হলো আদর্শ শিক্ষক। কোনো জাতিকে প্রগতিশীলতার অনন্য উচ্চতায় আরোহণ করাতে পারে কেবলমাত্র একজন আদর্শ শিক্ষক। যাকে সহায়তা করবে একটা গণতান্ত্রিক সরকার। যার মধ্যে থাকবে না দলীয় সংকীর্ণতার মতান্তর বিষবাষ্প। শুধুই অতিশয় নির্মল সহমর্মিতা দ্বারা পরিচালিত হবে তার সংসদ।

বাঙালির একটা মন্দ সংস্কৃতি রয়েছে, যা হলো 'নিজকে না জেনেই' অন্যের ধারাবাহিক সমালোচনায় কোমর বেঁধে লেগে যায়। কিন্তু ভাল-মন্দ দুটি জিনিস আপেক্ষিক ব্যাপার মাত্র। আগে নিজের শুদ্ধতা প্রমাণ করেই প্রতিপক্ষের সমালোচনায় ব্যাপৃত হওয়াটিই অতি মানবীয় গুণ। অন্যথায় এই সমালোচনা একদিন অবশ্যই হাস্যকর হবে। কথায় আছে 'নিজে আচরি ধর্ম অপরে শেখাও'।

বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রাবন্ধিক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়