প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯
ইমাম ও শিক্ষকের সম্মানজনক বিদায় প্রসঙ্গে
আমাদের সমাজে মসজিদের ইমাম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক যদি ব্যক্তিগতভাবে নীতি-আদর্শে সর্বোচ্চ বলীয়ান হন, তাহলে তিনি ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতায় সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। এমন ইমাম ও শিক্ষক তাঁদের প্রতিষ্ঠানে নীরবে যোগদান করেন, তবে বিদায় নেন এতোটা সরবে, যেটা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। মতলব ও ফরিদগঞ্জ সহ চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪০-৫০ বছর ধরে ইমামতি করা ক'জন ইমামকে এবং শাহরাস্তি সহ বিভিন্ন স্থানে ৩০-৩৫ বছর শিক্ষকতা করা ক'জন শিক্ষককে যেভাবে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে, তাতে সাধারণ্যে সৃষ্টি হয়েছে অসাধারণ আলোড়ন। এর মানে হচ্ছে, সুদূর অতীতের কোনো একদিন নীরবে যোগদান করা ব্যক্তিরা বিদায় নিয়েছেন সরবে ব্যাপক আলোড়ন তুলে। সাম্প্রতিক কালে এঁরা বিরল। এঁদের একজন হচ্ছেন হাজীগঞ্জের জনপ্রিয় শিক্ষক মোঃ মকবুল হোসেন। তাঁকে নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে একটি সংবাদ।
‘মেনাপুরে প্রিয় শিক্ষকের জাঁকজমকপূর্ণ বিদায় সংবর্ধনা’ শিরোনামের সংবাদটিতে আলমগীর কবির লিখেছেন, হাজীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মেনাপুর বাদশা মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, সবার প্রিয় স্যার নামে খ্যাত মোঃ মুকবুল হোসেনের অবসরজনিত বিদায় ও সংবর্ধনা দিলো বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদ। ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মেনাপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশাল আকারে জাঁকজমকভাবে এ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রথম উক্ত বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে বিশাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নগদ অর্থ, সংবর্ধনা ক্রেস্ট, বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দেয়া হয়। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও লন্ডন প্রবাসী কাজী মোঃ জাহিদুল ইসলাম জিলনের সার্বিক সহযোগিতায় প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ নজরুল ইসলাম ও মোঃ কাউছার আহমেদ পাটওয়ারীর পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রাজারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মফিজুর রহমান।
সংবর্ধিত শিক্ষক মোঃ মুকবুল হোসেন বলেন, আমি মেনাপুর বাদশা মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ১১ এপ্রিল ১৯৯২ সালে এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করি। ক্রমান্বয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং দুবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বকালীন অবস্থায় ৩২ বছর শিক্ষকতা পেশা শেষে অবসর গ্রহণ করি। চেষ্টা করেছি ন্যায়নীতির আদর্শ বজায় রাখতে। কতোটুকু পালন করতে পেরেছি তা উপস্থিতি থেকে বুঝা যায়। এলাকার মানুষজন, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রাক্তন ছাত্র মোঃ দেলোয়ার হোসেন দুলুর সভাপতিত্বে ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ছাবের হোসেনের পরিচালনায় টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন লন্ডন প্রবাসী প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের উপদেষ্টা সদস্য কাজী মোঃ জাহিদুল ইসলাম জিলন, সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আখন্দ সহ আরো অনেকে। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রী, বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানশেষে বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত একটি ছাদখোলা গাড়িযোগে তাঁর গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়। যেমনটি অন্যান্য স্থানের ইমাম/ শিক্ষককে ঘোড়ার গাড়িযোগে পৌঁছে দেয়া হয়।
গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নিজের দোষে কিংবা কারো ঈর্ষাবশত/ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিনা দোষে যেভাবে অপমানিত অপদস্থ হয়ে পদত্যাগ করতে হয়েছে, পালিয়ে যেতে হয়েছে, সেসব ঘটনা এখনও মন থেকে মুছে যায়নি অনেকেরই। এমন প্রেক্ষাপটে হাজীগঞ্জের দূরবর্তী গ্রাম মেনাপুরে একজন শিক্ষককে কিংবা মতলব উত্তরের প্রত্যন্ত এলাকায় একজন ইমামকে আত্যন্তিক সম্মানে বিদায় সংবর্ধনা দেয়ার সংবাদ যখন পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তখন কার না মন ভরে। এজন্যে আয়োজকদের জানাতে হয় ধন্যবাদ, সাধুবাদ, কৃতজ্ঞতা সহ আরো অনেক কিছুই। অনেক হতাশা, অনেক বেদনা, অনেক মনঃকষ্টে শিক্ষক-ইমামের প্রতি এমন সম্মান জ্ঞাপনের সংবাদে সত্যিই আমরা ভীষণ উজ্জীবিত হই, গভীর অন্ধকারেও পথ চলার সাহস পাই।