প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৮
কর্মস্থলে না এসেই বেতনভোগীর সংখ্যা আরো আছে--
এক মাস দুমাস নয়, মাসের পর মাস রোগীদের সেবা না দিয়েই বেতনসহ সরকারি সব সুবিধা ভোগ করছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (স্যাকমো) মোঃ নূর হোসেন। কর্মব্যস্ততা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটি করেন এমন অজুহাতে এখানে এসে রোগী দেখেন না। এমনকি হাজিরা বইতে নেই স্বাক্ষর। ২০২৩ সালে যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাসে ৩/৪ দিন অফিস করলেও সর্বশেষ গত ১ আগস্ট থেকে একদিনের জন্যেও অফিসে আসেননি।
|আরো খবর
চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় গতকাল প্রকাশিত সংবাদে প্রতিবেদক সরেজমিন অভিজ্ঞতার আলোকে লিখেছেন, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার নূর হোসেনের দরজা বন্ধ এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষে ধূলাবালি ও ময়লা আবর্জনায় ভরপুর অবস্থায় দেখা গেছে । দেখলে মনে হয়, এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিন থেকে চার বছর ডাক্তারের চেম্বারে কেউ প্রবেশ করে নি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে ডাক্তারের জন্যে অপেক্ষারত রোগীরা জানান, গত ১ আগস্টের পর থেকে ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায় নি। অবসরপ্রাপ্ত একজন পিয়ন মিজান প্রাথমিক কিছু চিকিৎসার ঔষধ প্রদান করেন। মিজানুর রহমান জানান, ডাক্তার দু- তিন মাস আসেন না। রোগী আসলে বলতে হয় কাল আসবে। স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফারুক আহমেদ মিয়াজী বলেন, গত তিন মাসেও ডাক্তারকে দেখা যায়নি। প্রতিদিনই রোগীরা এসে ভিড় করেন। আমাদের দু-তিনটা ইউনিয়ন মিলে এই একটি মাত্র উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আমাদের ইউনিয়ন ব্যতীত অন্যান্য ইউনিয়ন থেকে স্বাস্থ্য সেবার জন্যে প্রতিদিনই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে রোগী আসেন, কিন্তু ডাক্তারের দেখা মিলে না।
অভিযোগের বিষয়ে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার নূর হোসেন জানান, এই বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে পারবেন না। ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল জানান, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক অনুপস্থিতির বিষয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তদন্তে সাপেক্ষে ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জের নূর হোসেন শুধু নয়, দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্যাকমোরা কর্মস্থলে যেতে চান না। তারা তদবির করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেপুটেশনে দায়িত্বপালন করেন কিংবা 'বস'কে 'মান্থলি' দিয়ে সুবিধাজনক স্থানের চেম্বারে রোগী দেখেন। চাঁদপুরে এমন স্যাকমো ছিলেন ও আছেন, যিনি বা যারা এমন অনিয়ম করে টাকা কামিয়ে শহরে একাধিক বাড়ি করেছেন, গাড়ি কিনেছেন, হাসপাতালের মালিক হয়েছেন। ‘বস’ সহ রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে খারাপ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ধর্মীয় লেবাসে ভালোই চলছেন। পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য বিভাগের বাইরে এমন কিছু কর্মকর্তা কৃষি বিভাগেও রয়েছেন, যারা মাঠ পর্যায়ের কর্মস্থলে একেবারে না গিয়ে কিংবা নামমাত্র ক'দিন গিয়ে পুরো মাসের বেতন তুলে জেলা সদরে সপরিবারে আরামদায়ক জীবনযাপন করেন। এরা সাবেক ব্লক সুপারভাইজার, বর্তমানের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। এদের দায়িত্বপালনে অনিয়ম নিয়ে সম্প্রতি চাঁদপুর কণ্ঠে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদন অর্থের বিনিময়ে বন্ধ করার প্রস্তাবও আসে চাঁদপুর কণ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ অন্যদের যে করেই হোক ম্যানেজ করে কিছু উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আগের মতোই কর্মস্থলে ঠিকভাবে যাচ্ছেন না--এমন অভিযোগ রয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও কৃষি বিভাগসহ আরো কিছু সরকারি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপরোল্লিখিত অনিয়ম রোধে কার্যকর/শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের বিষয়ে সংস্কারবাদী বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।