প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
ভুইঁফোড় মানবাধিকার সংগঠনের ছড়াছড়ি
নামে আছে কাজে নেই
চাঁদপুরে প্রায় তিন ডজন নাম সর্বস্ব মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ঝুলে আছে যাদের সাইনবোর্ড। আবার কিছু মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে প্যাড সর্বস্ব। শুধু তা-ই নয়, অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নেই, নেই কোনো কার্যক্রম। অনেকেই এসব নাম ব্যবহার করছে পদণ্ডপদবীর আশায়। আবার কোথাও কোথাও মানবাধিকার সংগঠনের নামে পরিচালনা করা হয় দেনদরবার বা সালিস। সালিস-দরবারের নামে বাণিজ্যের অভিযোগও আছে কোনো কোনো মানবাধিকার সংগঠনের বিরুদ্ধে।
চাঁদপুরেও রয়েছে বেশ ক’টি মানবাধিকার সংস্থার কমিটি। তবে কতোটি সংগঠন চাঁদপুরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সুনির্দিষ্টি করে কেউ বলতে পারছে না। জেলা সম্মিলিত মানবাধিকার পরিষদ যেটি ১৩টি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত, তার সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ মহসিন জানান, চাঁদপুরে ২৬-২৭ টি মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে। সব সংগঠনের নাম বা কারা দায়িত্বে আছেন সেটা তার জানা নেই বলে জানান। তার সংগঠনের কার্যক্রম সচল বলে দাবি করলেও কেউ কেউ তার কার্যক্রম নিয়ে নানা মন্তব্যও করেন।
বিগত বছরগুলোতে গুটি কয়েক সংগঠনকে মানবাধিকার দিবস উদ্যাপনে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। মাঝে মাঝে এসব সংগঠনের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ সংগঠনের নাম বিক্রি করলেও প্রয়োজন শেষে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় না। এছাড়া বেশ ক’টি মানবাধিকার সংস্থার কার্যক্রম এখন প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু তারপরও তারা মানবতার সেবক বলে বীরদর্পে চলছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মানবাধিকার সংগঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছে এ রকম সংগঠনের মধ্যে রয়েছে : আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস্ ক্রাইম রিপোর্টার্স ফাউন্ডেশন, জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটি, আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস এক্টিভিটিস ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস্ রিভিউ, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইউনিট, ইউনিভার্স হিউম্যান রাইটস্ অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস্ ক্রাইম রিপোর্টার্স, হিউম্যান রাইটস্ ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, জাতীয় মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা, বাংলাদেশ মানবাধিকার কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থাসহ নামে বেনামে আরো অনেক সংগঠন।
সংস্থাগুলোর ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ ক’জন অভিযোগ করে বলেন, কোথায় ছিল এই মানবাধিকার সংস্থাগুলো? যখন করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করলো তখন তাদের কার্যক্রম কি ছিলো? এছাড়া হতদরিদ্র, অসহায় এবং পথশিশু নিয়ে তাদের কোনো কার্যক্রম তো আমরা দেখছি না। যারা মানবেতর জীবনযাপন করছে তাদের নিয়ে কথা বলতে বা পাশে এসে দাঁড়াতে এসব সংগঠনকে দেখছি না। অনেকে আবার ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, মানবাধিকার কর্মীদের কেউ কেউ নির্বাচন আসলে দেখা যায় নানা মানবাধিকার সাংবাদিক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কার্ড ঝুলিয়ে কেন্দ্র দাবড়িয়ে বেড়াতে। আবার কেউ কেউ থানার দালালি, ভূমি অফিসে তদবির করে, প্রতারণাও করে বেড়ান। এছাড়া খুন, ধর্ষণ, টাকার দেনা-পাওনা, বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মীমাংসা করে দেয়ার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন অসহায় গরীব মানুষের কাছ থেকে-এমন অভিযোগও আছে কারো কারো বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল চাঁদপুর শাখার সাবেক আইন সম্পাদক অ্যাডঃ মোঃ মহসীন খান বলেন, মানবতাকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সারাবিশ্বে রয়েছে কয়েক হাজার মানবাধিকার সংগঠন। এসব সংগঠনের কাজ হচ্ছে মানবতার সেবা করা। হতদরিদ্র অত্যাচারিত নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু এ সংগঠনের দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম না থাকায় অনেক আগেই সরে এসেছি। বর্তমানে এ সংগঠনটির কোনো কার্যক্রম চলে কিনা আমার জানা নেই।
চাঁদপুরে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কার্যক্রম প্রসঙ্গে সনাক চাঁদপুরের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মোশারেফ হোসেন বলেন, মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার কথা, অথচ চাঁদপুরের আঙ্গিকে কোনো বিষয় নিয়ে এসব সংগঠনকে সোচ্চার হতে বা কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখি না। মূলত চাঁদপুরে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কার্যক্রম আছে বলে মনে হয় না-এমনটি মনে করেন তিনি।
পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার বলেন, মানবাধিকার সংগঠন এখানে আছে বলে জানি না। কেননা কোনো কিছুতেই তাদের কার্যক্রম দেখি না। তবে তাদের সম্পর্কে নানা নেতিবাচক কথা মাঝে মাঝে শুনেন বলে জানান।