মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, স্ত্রীর আত্মহত্যা
  •   ভারতকে কড়া বার্তা শ্রম উপদেষ্টার
  •   আধুনিক নৌ টার্মিনাল প্রকল্প পরিদর্শনে চাঁদপুরে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা
  •   ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি অভ্যন্তরস্থ খাল খননসহ ৫ দফা দাবিতে সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

শোক ও সঙ্কট উত্তরণের আগস্ট

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

শোক ও সঙ্কট উত্তরণের আগস্ট
অনলাইন ডেস্ক

প্রাণিজগতে যেমন বর্ণচোরা গিরগিটির অস্তিত্ব আছে তেমনি বাঙালির বর্ষপঞ্জিতেও আগস্ট নামে এক বর্ণচোরা মাস আছে। এ আগস্টের পরতে পরতে একদিকে লুকিয়ে আছে অতিভক্তি আর অন্যদিকে আগস্টের দেহজুড়ে বইছে রক্তগঙ্গা। আগস্ট তাই বরাবরই আমাদের কাছে গিরিগিটির মতো স্বরূপ লুকোনোর মাস। বঙ্গবন্ধুর পিতৃবিয়োগে এবং মাতৃবিয়োগে যে লোকটি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছিল, সেই ঘৃণ্যব্যক্তি তো আগস্টকেই পরোক্ষভাবে সরীসৃপে পরিণত করে তুলেছে। হিস্ হিস্ শব্দ করে সে-ই মেরেছে ছোবল নিকটজনের খোলসের আবরণে। সেদিনও যেমন কুচক্রীদের অতিভক্তিবাদই উদার জনকের সিঁড়িতে অন্তিম শয্যার কারণ হয়েছিলো, তেমনি আজকেও হাইব্রিড বা শংকরায়িত ভক্তিবাদের কারণে বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুর পরেও আবার হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে যাবতীয় ভূঁইফোড় সংগঠন তৈরি করে। আগস্ট মিথ্যে কাহিনী নির্মাণে পারঙ্গম। মৃত্যুর পরে যাঁর ব্যাংক হিসেবে মাত্র হাজার পাঁচেক টাকা সম্বল থাকে তাকে মিথ্যে গল্প ফেঁদে টুঙ্গিপাড়ায় ঘুম পাড়িয়ে রাখার অভিনব প্রক্রিয়ায় আগস্ট হয়ে উঠেছে প্রতারক ও প্রবঞ্চক। যারা আগস্টকে উল্লাসে লালন করে বুকে, তারা জীবনের সাথে যেমন বিশ্বাসঘাতকতা করে, তেমনি বাঙালির উন্মেষ ও বিকাশকেও ধ্বংস করে। জনকের পবিত্র রক্তের বন্যায় যখন দেশ কলংকিত হয়ে ওঠে, তখন বর্ণচোরা গিরগিটিরাই মেতে ওঠে জনক-হত্যার উন্মত্ত উৎসবে। আগস্ট তাই মনে ও মননে এক বিকলাঙ্গ মাসের প্রতীক, আগস্ট আত্মনিধনের এক অমোচনীয় ধ্বংসযজ্ঞ।

আগস্ট কেবল প্রাণহরণ কিংবা পিতৃহরণের মাসই নয়, আগস্ট স্বপ্নকে চূর্ণ করার মাস। জাতিকে কিংবা জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে স্বপ্নের দূরদর্শী নির্মাণ। যারা পশ্চিমা হন্তারকদের দোসর, তারা জানতো, শেখ মুজিব নামক স্বপ্নবৃক্ষের কর্তন সম্পন্ন হলেই বাঙালি আর দাঁড়াতে পারবে না, পারবে না বেশি দূর যেতে। বাংলাদেশকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার এক আন্তর্জাতিক নীল-নকশার মাস হলো আগস্ট। যে দীঘল দেহের পর্বতসম মানুষটি চীনের গ্রেট ওয়াল কাঁপিয়ে দিয়ে এলেন বাংলায় ভাষণ দিয়ে, যিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাকে করে তুলেছেন মহৎ, আগস্ট তাঁকেই বৃন্তচ্যুত করেছে রাতের ছল ধরা শয়তানের থাবায়। আগস্ট তাই ক্ষমার অযোগ্য এক ছদ্মবেশি দুষ্টুচক্রের প্রতীক। দ্বিতীয় বিপ্লবের বীজকে সবেমাত্র রোপণ করার মহান কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। যে বিপ্লব ছিলো অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির বিপ্লব। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্তির যে বিপ্লবের স্বপ্নবীজ বঙ্গবন্ধু রোপণ করেছিলেন বাংলাদেশজুড়ে, আজ সে স্বপ্নবীজ যদি মহাতরুর রূপ নিয়ে বাংলার আকাশকে ধরে রাখতে পারতো তবে পৃথিবী তাকিয়ে থাকতো অবাক বিস্ময়ে। অর্বাচীন ঘাতকের দল সে স্বপ্নবীজকে মহাদ্রুম হতে দিলো না। কিন্তু ঘাতক জানে না, স্বপ্নবীজ কখনো নষ্ট হয় না। অনুকূল পরিবেশে সে স্বপ্নবীজ আবারো অঙ্কুরিত হয়। বাংলাদেশ আজ সেই অঙ্কুরোদ্গমের সুফল পেয়ে এগিয়ে গেছে উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বমারীর সংক্রমণ ও বিশ্বরাজনীতির সঙ্কটের এই দিনে আজ কোনো বাঙালি না খেয়ে মরেনি, সবার জন্যেই নিশ্চিত হয়েছে টিকার সুরক্ষা। যিনি এ সুরক্ষার সর্বতোভাবে ব্যবস্থা করেছেন, তিনিই আজ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নের মশাল বহন করে চলেছেন এ ভূ-খণ্ডের আনাচে-কানাচে। তাই, বেপথগামীদের সৃষ্ট আগস্টের মূল উদ্দেশ্য পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়। যতোই আগস্ট নতুন নতুন ষড়যন্ত্র আঁটুক, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নবীজ এদেশে অঙ্কুরিত হবে, ফলবতী হবে স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে। আগস্ট আজ এই বাইশের দ্বারে এসে বাংলাদেশকে বিজয়ীর মুকুট পরিয়ে দিয়েছে জনক-তনয়ার নেতৃত্বে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়