প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২১, ১০:৫৪
গর্ভকালীন করোনা ভ্যাকসিন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
করোনা বর্তমানে সার্বিকভাবে আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো বিশ্বের জনজীবন বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। বিশ্বের প্রায় সকল দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এবং অতি ছোঁয়াচে হওয়াতে এর সংক্রমণ রোধ করা প্রায় দুঃসাধ্য।
|আরো খবর
এই ভাইরাসে গর্ভবতী মায়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। গর্ভাবস্থায় শরীর স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল থাকে, সেই অবস্থায় করোনা সংক্রমণ মারাত্মক হুমকির মুখে ঠেলে দেয়।
সতর্কতা ও করণীয়:
গর্ভাবস্থায় শরীর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। করোনার কারণে যা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। দেশজুড়ে এই ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে, নতুন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, করোনা আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের প্রতি ত্রিশ জনের মধ্যে তিনজন করোনা আক্রান্ত শিশুর জন্ম দিচ্ছেন।গর্ভাবস্থায় প্রথম তিনমাস সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই তিনমাস যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাইরে চলাচল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
সচেতনতার অভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনা প্রতিরোধে নিয়মাবলী, অর্থাৎ মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, স্যানিটাইজার ও সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করা, এসব বিষয় বাকি সবার মতো অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিনমাস সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই তিনমাস যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বাইরে চলাচল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে গেলে সতর্কতা মেনে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। মুখমণ্ডলীতে অনাবশ্যক ধরা ছোঁয়া এড়িয়ে চলতে হবে। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
করোনা আক্রান্ত হলেও সাধারণত দেখা যায় প্রথম ট্রাইমেস্টারে বাড়িতে যথাযথ বিশ্রাম, খাওয়া-দাওয়া ও শরীরচর্চা করলে সেরে যায় তবে গর্ভবতীকে নিয়মিত মনিটরিং এ রাখতে হবে এবং জরুরি অবস্থায় বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। করোনা প্রতিরোধে মা ও শিশুকে ভিড় এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনু্যায়ী ভিটামিন সি, ডি ও জিংক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
ডায়াবেটিস, হাঁপানি বা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতা যাদের আছে, সেসব অন্তঃসত্ত্বা নারীরা সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশুর পানি কমে যাওয়া, অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়াসহ আরও জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই জটিলতা এড়াতে এবং দ্রুত মোকাবিলা করতে সবসময় তাকে মনিটরিং এ রাখতে হবে। সম্ভব হলে প্রতি ছয় ঘণ্টা পরপর অক্সিজেন লেভেল চেক করতে হবে এবং স্যাচুরেশন ৯৪ এর কম হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় করোনার টিকা দিতে তেমন বাঁধা নেই। ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোভ্যাক এই তিনটি ভ্যাকসিন গর্ভাবস্থায় নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এছাড়া দেখা গিয়েছে, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টটি পিসিআর টেস্টে অনেক সময় ধরা পড়ছে না। সেক্ষেত্রে উপসর্গ মিলে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত। তবে সচরাচর দেখা যায়, করোনা থাকলেও প্রসবে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
মা করোনা আক্রান্ত হলে জন্মের পরেও বাচ্চার প্রতি অধিক যত্নশীল ও সতর্ক হতে হবে। স্তন্যদান ও অন্যান্য সময় মাস্ক পরে শিশুর কাছে যাওয়া উচিত। হাঁচি ও কাশি যাতে শিশুর স্পর্শ না পায়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, স্তন্যপানে শিশুর কোনো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বরং মায়ের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং করোনা প্রতিরোধে সহায়ক। তবে সম্ভব হলে ব্রেস্টপাম্প ব্যবহার করা উচিত এবং সেই ব্রেস্টপাম্প ভালো করে ধুয়ে মুছে জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা উচিত। মা যদি করোনা আক্রান্ত হয়, তাহলে ব্রেস্টপাম্প করে সেটা বোতলে দিয়ে অন্য কারো মাধ্যমে বাচ্চাকে খাওয়ানো উচিত। করোনা খুব সহজেই একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে, তাই শুধু গর্ভবতী মা নয়, পরিবারের সকল সদস্যকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে কারণ পরিবারের একজনের করোনা হলে বাকিদের মধ্যে ছড়ানোর প্রবল সম্ভাবনা থাকে।সর্বোপরি, শুধু মা ও শিশু না, সকলকেই করোনার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং সতর্কতা ও দূরত্ব বজায় রেখে কাজকর্ম করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ভ্যাকসিন:
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গর্ভাবস্থায় করোনার টিকা দিতে তেমন বাঁধা নেই। ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোভ্যাক এই তিনটি ভ্যাকসিন গর্ভাবস্থায় নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম ও শেষ তিনমাসে ভ্যাকসিন না নিলেই ভালো। আর গর্ভধারণে ইচ্ছুক কেউ যদি ভ্যাকসিন নেন তাহলে পরবর্তী দুই তিন মাস গর্ভধারণ প্রতিরোধক ব্যবহার করা উচিত।
অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা ।। প্রসূতি, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন
সূত্র : ঢাকা পোস্ট