প্রকাশ : ২১ জুন ২০২১, ১১:৩১
বন কর্মকর্তা ও সরকারি গাছ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরেস্ট্রি বিভাগ খোলার পর শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে আনন্দ-আমেজ লক্ষ্য করা যায়। কেননা এ বিভাগ থেকে অনার্স সহ মাস্টার্স ডিগ্রি পাসের সনদ করায়ত্ত করতে পারলেই সরকারের বন বিভাগে সরাসরি কর্মকর্তা পদে চাকুরি পাওয়া যায়। আর এ বন কর্মকর্তা হতে পারলেই সরকারি গাছ বিভিন্ন অজুহাতে কাটার সুযোগ লাভ করা যায় এবং অবৈধ উপায়ে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা অর্জন করা যায়। একজন প্রধান বন কর্মকর্তা যে কতো অবৈধ টাকার মালিক হতে পারেন সেটা ওয়ান ইলেভেনের সময় ধৃত ওসমান গণির বাসায় তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধারের ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়। তবে সকল বন কর্মকর্তা খারাপ, এটা ঢালাওভাবে বলা যায় না। কোনো কর্মকর্তা সৎ থাকতে গেলে তাকে কী পরিমাণ ধকল পোহাতে হয় সেটি বর্ণনাতীত।
|আরো খবর
চাঁদপুর সদর উপজেলার বর্তমান লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক নাম সাখুয়া ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে পুরাণবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ইউনুছ মিয়াজী (বর্তমানে মরহুম) স্বাধীনতোত্তরকালে যখন দায়িত্ব পালন করেন, তখন তিনি দোকানঘর থেকে বহরিয়া-লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত চাঁদপুর সেচ প্রকল্প (সিআইপি) বেড়িবাঁধের দুপাশে উড ভ্যালু আছে এমন কিছু গাছের চারা রোপণ করেন এবং চারাগুলোর অসামান্য যত্ন-পরিচর্যা করেন। ফলস্বরূপ এ গাছগুলো আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের পর ক্রমশ মহীরূহে পরিণত হওয়া শুরু করে, আর নব্বইর দশকে এসে বিরল দৃষ্টি নন্দন পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা গণমাধ্যমের বিশেষ খবর বা প্রতিবেদনের উপজীব্য হয়ে যায়।
এক সময়ে এসে সাখুয়া ইউনিয়ন পরিষদের এ গাছগুলোর প্রতি প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর কিছু মানুষের শ্যেন দৃষ্টি পড়ে। প্রতিটি গাছের মূল্য যখন লক্ষাধিক টাকা পেরিয়ে যায়, তখন গাছগুলো নানা অজুহাতে কীভাবে কাটা যায়, তার ফন্দি ফিকিরে লিপ্ত হয় এসব মানুষ। তারা বন কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে একের পর এক গাছগুলো কাটতে থাকে, আর এ গাছ রোপণকারী ইউনুছ মিয়াজীর হৃদয়েও রক্তক্ষরণ ঘটতে থাকে। তিনি এজন্যে পুরাণবাজারে বসবাসকারী সাংবাদিকদের মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশনের তাগিদ দেন। এতে অনেক গাছের আয়ুষ্কাল বাড়লেও শেষ রক্ষা আর হয়নি।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের ১ম পৃষ্ঠায় ‘বন কর্মকর্তার যোগসাজশে অনুমতিবিহীন সরকারি গাছ কর্তনের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদে কীভাবে ফরিদগঞ্জের বন কর্মকর্তা একজন বেসরকারি ব্যক্তিকে চারটি মূল্যবান সরকারি গাছ অনুমতির প্রক্রিয়া চলাকালে কেটে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, তার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের লোক ও গ্রাম পুলিশের উপস্থিতিতে এ গাছগুলো কাটার উদ্যোগ নেয়া হয় গত ১৯জুন। খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের আইলের রাস্তা-রামপুর সড়কে পৌঁছলে তাদেরকে সমঝোতার (!) প্রশ্নে প্রলোভন দেখানো হয়।
সংবাদটিতে দাবি করা হয়েছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বন কর্মকর্তা কাউছার আহম্মদের যোগসাজশে সরকারি গাছ কাটা ও অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু তদন্ত দাবি করছি। আমাদের বিশ্বাস, সঠিকভাবে তদন্ত হলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে।