সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২১, ১৩:১৪

কোরবানির পশু বিক্রি অনলাইনে!

পিছিয়ে নেই নারী দেশের উদ্যোক্তারাও

অনলাইন ডেস্ক
কোরবানির পশু বিক্রি অনলাইনে!

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এরই মধ্যে জমে উঠেছে সারাদেশের অনলাইন ও ডিজিটাল পশুর হাটগুলো। সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে এবার অনলাইনে পশু কিনতেই বেশি ঝুঁকছে মানুষ। এ ক্ষেত্রে তরুণ উদ্যোক্তাদের অবদান অনেক বেশি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে তারা খুব সহজেই গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন কোরবানিযোগ্য পশু। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই নারী উদ্যোক্তারাও। অতীতে হাতেগোনা কয়েকজন নারী এমন উদ্যোগ নিলেও এ বছর তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ভালো সাড়া পাওয়ায় আগামীতে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।

সিলেটের খাদেমনগরে নিজস্ব খামার রয়েছে কাজী লুপা রহমানের। এবারই প্রথম অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন ‘কাজীস শিপ ফার্ম’-এর এই উদ্যোক্তা। নারী উদ্যোক্তাদের অনলাইন প্ল্যাটফরম ‘উই হাটবাজারে’ ছবি আপলোড করার দুদিনের মধ্যেই দুটি গরু ও ছয়টি ভেড়া বিক্রি করেছেন লুপা। এতে প্রায় চার লাখ টাকা আয় হয়েছে তার। কথা প্রসঙ্গে আমাদের সময়কে লুপা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত প্রসাধনী, ফ্যাশন পণ্য, বেবি ফুডসহ বিভিন্ন পণ্য দিয়ে অনলাইনে ২০১৮ সাল থেকে ব্যবসা শুরু করি। এখন জামদানি ও পাঞ্জাবি নিয়ে অনলাইনে ‘কাজীস ক্লাউড’ নামের প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছি। এবার নিজের খামার থেকে প্রথমবারের মতো কোরবানির পশু বিক্রি করছি। পথটা অবশ্য অনেক দীর্ঘ ও কঠিন ছিল। শুরুতে এলাকার অনেকে গরুর ব্যাপারী, গরুর পাইকার বলে কটু কথাও শুনিয়েছে। সেসব কথায় কান দেইনি। আমার পরিবার সবসময় আমার সঙ্গে ছিল। পুরুষরা যদি অনলাইনে পশু বিক্রি করতে পারেন, তা হলে নারীরাও পারবে। নারী হয়েও আমি আমার পরিবারে অবদান রাখতে চাই। তাই লোকের কথায় দমে যাইনি।’ লুপা বলেন, ‘আমার খামারে

এখনো পাঁচটি গরু ও বেশকিছু ভেড়া রয়েছে। ক্রেতাদের আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে অল্পদিনের মধ্যে এগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে লাভের মুখ দেখেছি। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে ব্যবসার পরিকল্পনা রয়েছে।’

কেবল লুপা একাই নন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ রকম অন্তত ৫৬ নারী উদ্যোক্তা একত্রিত হয়ে একটি অনলাইন প্ল্যাটফরমে এ বছর কোরবানির পশু বিক্রি করছেন। তাদের সাফল্য দেখে আরও অনেক নারী উদ্যোক্তাও যুক্ত হচ্ছেন এই প্ল্যাটফরমে। ই-কমার্স প্ল্যাটফরম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের প্রোফাইলে নিয়মিত পোস্ট করছেন কোরবানিযোগ্য পশুর বিবরণসহ অসংখ্য ছবি ও ভিডিও। গরুর ওজন, কয়টা দাঁত, মাংস কতটুকু পাওয়া যাবে, ক্রেতাদের এ ধরনের নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন নারীরা। লাইভে বা ভিডিও কলেও চলছে গরুর দরদাম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ১১ লাখের বেশি সদস্যের গ্রুপ ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)’-এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার আমাদের সময়কে বলেন, ‘এবারই প্রথম উই হাটবাজারে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কোরবানির পশু বিক্রির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। গত ৯ জুলাই থেকে চালু হওয়া এ উদ্যোগে এখন পর্যন্ত ৫৬ নারী উদ্যোক্তা পশু বিক্রির জন্য নিবন্ধন করে যুক্ত হয়েছেন। আরও অনেকে নিবন্ধনের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পাশাপাশি ক্রেতাদের সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে অনেক। ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ লাখ টাকার কোরবানির পশু বিক্রি করে ফেলেছেন নারী উদ্যোক্তারা। এখনো বিক্রি চলছে।’ নাসিমা আক্তার বলেন, ‘নিবন্ধনের ঘোষণা দেওয়ার সময় ধারণা করেছিলাম নারী উদ্যোক্তারা খুব একটা আগ্রহ দেখাবেন না। কারণ পুরো বিষয়টি অনেক চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই আমরা অবাক হয়েছি উই-এর নারী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ দেখে। উদ্যোক্তারা এখন গরু বা ছাগলের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। ক্রেতারা আগ্রহ দেখালে ভিডিও কল ও মেসেজের মাধ্যমে কথা হচ্ছে। কথা পাকাপাকি হলে পছন্দের পশুটি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতার বাড়িতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কলেজের ছাত্রী থাকাবস্থায় আমি নিজের একটি গরুর খামার করার কথা ভাবতাম। তবে সাহস করে উঠতে পারিনি। এখন অনলাইনে গরু, ছাগল ও ভেড়া বিক্রিতে নারী উদ্যোক্তাদের সাহস দেখে মুগ্ধ হই। তারা দারুণ দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসা করছেন এবং ভালো সাড়াও পাচ্ছেন।’

অনলাইনে এক সপ্তাহের মধ্যে ১৪টি গরু, ১২টি ছাগল ও ৯টি ভেড়া বিক্রি করে সাড়া ফেলেছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বজ্রাপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা মাহবুবা আক্তার জাহান বাঁধন। ছোটবেলায় বাবা হারানো বাঁধন কখনো পিছন ফিরে তাকাননি। স্বপ্ন দেখেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে। নিজের খামার না থাকা সত্ত্বেও প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে কোরবানিযোগ্য পশু সংগ্রহ করে ছবিসহ তথ্য অনলাইনে পোস্ট করছেন। সেখান থেকে পছন্দের পশু কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। কথা হলে ‘বাঁধন ফুড’-এর উদ্যোক্তা বাঁধন আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি গ্রামে থাকি। তাই এ সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছি। আমি দেখেছি করোনায় অনেক প্রান্তিক খামারি তাদের কোরবানির পশু বিক্রি করতে পারছেন না। তাই তাদের কাছ থেকে পশু সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করছি। এতে তারাও উপকৃত হচ্ছেন। এ বছর ভালো ফল পাওয়ায় আগামী বছর নিজের একটি খামার করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী রিপানুর ইসলামও এবার প্রথম অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করছেন। মানিকগঞ্জের পারিবারিক খামারে পালিত গরু ও ছাগলের ছবি ও তথ্য দিয়ে পোস্ট করছেন অনলাইনে। ক্রেতারা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন পোস্টগুলোতে। রিপানুর বলেন, ‘উই হাটবাজারে গত ১১ জুলাই পাঁচটি গরু ও দুটি খাশির ছবি ও তথ্য পোস্ট করেছি। এখন পর্যন্ত তিনটি গরু ও একটি খাশি বিক্রি করে ফেলেছি। বাকিগুলোও বিক্রি হতে বেশি সময় লাগবে না বলে আশা করছি। ছবি পোস্ট করার আগে এতটা ভালো ফল পাব তা আশা করিনি। আগামী বছর আরও গুছিয়ে অনলাইনে পশু বিক্রির পরিকল্পনা আছে।’

রাজধানীর মিরপুর ১-এর মারজান আরা ঊর্মি এবারই প্রথম অনলাইনে গরুর ব্যবসা করছেন। কথা হলে ‘মার্জান ফ্যাশন ক্রাফট’-এর উদ্যোক্তা ঊর্মি বলেন, ‘বিক্রি নাও হতে পারে- এমনটা ধরে নিয়েই শুরু করেছিলাম। ভেবেছিলাম আমার প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি পেলেই আমি খুশি। কিন্তু উই প্ল্যাটফরম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রোফাইলে যখন গরুর ছবি আপলোড দিলাম, সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক সাড়া পাই। এক সপ্তাহের মধ্যে আমার তিনটি গরু বিক্রির কথা প্রায় পাকা হয়ে গেছে। চার লাখ টাকায় গরুগুলো বিক্রি করছি। ডিল চূড়ান্ত হলে ট্রাকে করে ক্রেতার কাছে গরু পৌঁছে দেওয়া হবে।’ অনলাইনে অনেক ক্রেতা দ্বিধায় থাকেন উল্লেখ করে ঊর্মি আরও বলেন, ‘ছবির সঙ্গে বাস্তবে গরুর মিল আছে কিনা- এমন সন্দেহে থাকেন ক্রেতারা। এ জন্য লাইভে বা ভিডিওতে গরু নিয়ে কথা বলতে হয়। প্রথমবার হওয়ায় বিষয়টি অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবে ক্রেতাদের আগ্রহ দেখে অনেক ভালো লাগছে।’

এদিকে জেলাভিত্তিক অ্যাপ, ফেসবুক পাতা ও বিভিন্ন অনলাইন সাইটের মাধ্যমে গত ২ জুলাই থেকে পশু বিক্রির উদ্যোগ নেয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। আর ৪ জুলাই ডিজিটাল হাট নামে আরেকটি প্ল্যাটফরম উদ্বোধন করা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে ঝামেলাহীনভাবে পশু কিনতে অনলাইনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন ক্রেতারা। কোরবানিযোগ্য পশু বিক্রি কার্যক্রম অগ্রগতির সর্বশেষ প্রতিবেদনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, ২ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ১৩ দিনে অনলাইনে দুই লাখের বেশি পশু বিক্রি হয়েছে। এর বাজারমূল্য দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন অনলাইন বাজারে কোরবানির পশুর ছবি আপলোড হয়েছে ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬০টি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়