রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২১, ১১:৪৬

কোরবানির গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল

মুফতি ফজলুল কাদের বাগদাদী
কোরবানির গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।এটি আদায় করা ওয়াজিব সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করেনা তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (মুস্তাদরাক হাকেম হাদিস নং৩৫১৯, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২/১৫৫ )

#কার উপর কুরবানী ওয়াজিবঃ

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পূর্ণ প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা- পয়সা, সোনা-রুপা, অলংকার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও ও প্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত(৭.৫) ভরি, রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা-রূপা কিংবা টাকাপয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

(আল মুহিতুল বুহানী ৮/৪৫৫, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫ )

#নেসাবের মেয়াদঃ

কোরবানির পুরো বছর থাকা জরুরি নয়, বরং কোরবানির তিন (১০,১১ও১২ জিলহজ্ব)দিনের মধ্যে যেকোনো দিন থাকলেই কোরবানি ওয়াজিব হবে।

(বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রুদ্দুল মুহতার ৬/৩১২)

#কোরবানির সময়ঃ

মোট তিন দিন কোরবানি করা যায় জিলহজের ১০,১১ও১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে উত্তম হল ১০ তারিখে কুরবানী করা।

(মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৯৫)

#নাবালকের কোরবানিঃ নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রুপ যে সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নয়, নিসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দারা তাদের পক্ষে কোরবানি করলে তা সহীহ হবে।(বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬)

#মুসাফিরের জন্য কোরবানিঃ

যে ব্যক্তি কোরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তি এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।

(ফতুয়ায় কাযীখান ৩/৩৪৪)

#নাবালকের পক্ষ থেকে কোরবানিঃ নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের ওপর ওয়াজিব নয়, বরং মুস্তাহাব। (ফাতাওয়া কাযীখান৩/৩৪৫)

#দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুমঃ দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, কিন্তু সে যদি কোরবানির নিয়তে কোন পশু কিনে তাহলে তা কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২)

#প্রথম দিন কখন থেকে কোরবানি করা যাবেঃ

যেসব এলাকার লোকদের ওপর জুমা ও ঈদের নামাজ ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের জামাতের আগে কোরবানি করা জায়েজ নয়। অবশ্যই বৃষ্টি-বাদল বা অন্য কোন ওজর যদি প্রথম দিন ঈদের নামাজ না হয় তাহলে ঈদের নামাজের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিন ও কুরবানী করা জায়েয।

(সহীহ বুখারী ২/৮৩২)

#কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবেঃ

উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।

( কাযীখান ৩/৩৪৮)

# নর ও মাদি পশুর কুরবানী :

যেসব পশু কোরবানি করা যায় সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কোরবানি করা যায়। (কাযীখান ২/৩৪৮)

# কোরবানির পশুর সময়সীমাঃ

উট কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। আর ছাগল ভেড়া ও কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। তবে ভেড়াও দুম্বা এক বছরের কিছু কমে হয় কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে দেখতে এক বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দারাও কোরবানি করা জায়েজ। অবশ্যই এক্ষেত্রে কমপক্ষে ছয় মাস বয়সের হতে হবে। উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স এক বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েজ হবে না।

(কাজীখান ৩/৩৪৮)

#এক পশুতে শরীকের সংখ্যাঃ একটি ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কোরবানি দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কোরবানি করলে কারো হবে না। আর উট, গরু-মহিষ সর্বোচ্চ ৭ জন শরিক হতে পারবে। ৭ এর অধিক শরীক হলে কারও কোরবানি সহীহ হবে না। ( সহীহ মুসলিম হাদিস নং ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯ )

সাতজন মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে‌। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেয় ভাগ। এমন হলে কোন শরীকের কোরবানি সহীহ হবেনা। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)

উট,গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং হাতের কমে যেকোন সংখ্যা যেমন ২, ৩, ৪, ৫, ও ৬ ভাগে কুরবানী করা জায়েয (সহীহ মুসলিম ১৩১৮)

#কোন অংশীদারের গলদ নিয়ত হলেঃ

যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কারো কোরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরিক নির্বাচন করতে হবে।

(বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮)

# কুরবানীর পশুতে আকিকার অংশঃ

কোরবানির গরু, মহিষ ও উঠে আকিকার নিয়তে শরিক হতে পারবে এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই সহীহ হবে।

(তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২)

# শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কোরবানি হবে না।

# যদি কেউ গরু, মহিষ, উট একা কোরবানি দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরিক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কোরবানি করাই শ্রেয়। শরিক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরিব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরিক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরিক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয় এর সময় নিয়ত করে নেবে। (কাযীখান ৩৩৫০,৩৫১)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়