প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১৯:১০
তাফাজ্জল কাজী মাদরাসা মসজিদে বিনা হাদিয়ায় তারাবিহ নামাজ পড়ান তারা
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের বাণী নিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের দুয়ারে আবারও উপস্থিত হয়েছে পবিত্র রমজান। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মুসলমানরা এ তিনধাপে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের প্রশান্তি লাভ করেন। সিয়াম সাধনার দ্বারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে তারা যে নাজাতের পথ খুঁজবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। হাজার রজনীর শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদর রমজান মাসকে করেছে বিশেষভাবে মহিমান্বিত। এ রাতেই রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) ওপর সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কুরআন নাজিল করেন।
|আরো খবর
প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন—‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবির নামাজকে সুন্নত করেছি; অতএব যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবির নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নবজাত শিশু মাতৃগর্ভ থেকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) ভূমিষ্ঠ হয়।’ (নাসায়ি শরিফ, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা ২৩৯)।
রমজান মাসের প্রত্যেকটি ইবাদতই গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময়। এর মধ্যে তারাবিহ নামাজ অন্যতম। দেশ ও বিদেশে রমজান মাসে মসজিদগুলোতে তারাবিহ নামাজের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে অনেক মসজিদে তারাবি নামাজ পড়ানোর জন্য কোরআনে হাফেজদেরকে হাদিয়া দিয়ে থাকেন মসজিদ পরিচালনা কমিটি।
কিন্তু এর মধ্যেও ব্যতিক্রম আছে কোন কোন মসজিদে। তেমনি চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের ইসলামিয়া তাফাজ্জল কাজী হাফিজিয়া মাদ্রাসা মসজিদে এ বছর ৩ জন কোরআনে হাফেজ কোন ধরণের হাদিয়া ছাড়াই তারাবিহ নামাজ পড়াচ্ছেন। হাফেজ আব্দুল্লাহ জিহাব, হাফেজ নাজমুল হাসান ও হাফেজ তালহা জানালেন হাদিয়া নয়, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারা তারাবিহ নামাজ পড়াচ্ছেন।
প্রথম রমজানে মনুফা কমপ্লেক্সের হাফিজিয়া মাদ্রাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ হয় তিন হাফেজের সাথে। তারা এর আগেও হাদিয়া ছাড়াই তারাবিহ নামাজ পড়িয়েছেন। তিনজনের মধ্যে মাত্র ১৪ বছর বয়সী হাফেজ মো. তালাহ। তিনি ২০২১ সালে এই মসজিদে প্রথম তারাবিহ নামাজ পড়ান। এছাড়া আব্দুল্লাহ ৩ বছর ও হাসান ৫ বছর আগ থেকেই বিভিন্ন মসজিদে তারাবিহ নামাজ পড়িয়েছেন। আব্দুল্লাহ ও হাসান ইসলামিয়া তাফাজ্জল কাজী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও করেন। তাদের দু’জনের বয়সও ২৫ বছরের মধ্যে।
মাদ্রাসার মুহ্তামিম হাফেজ মাওলানা মো. আবুল কাশেম বলেন, ২০১৮-২০১৯ সালে মনুফা কমপ্লেক্সের আওতায় ইসলামিয়া তাফাজ্জল কাজী হাফিজিয়া মাদ্রাসা মসজিদ নির্মাণ হয়। নির্মাণ কাজে ব্যয় হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার নক্সা মিস্ত্রি ও চাঁদপুরের স্থানীয় মিস্ত্রি ধারা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। নির্মাণের নক্সাগুলোর মধ্যে বাহিরের গেট দিল্লির শাহী মসজিদ ও ভিতরের কিছু নকশা তাজমহলের আদলে করা হয়েছে। কমপ্লেক্সের অর্থয়ানে এই মসজিদ নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধান করেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব কাজী হুমায়ুন কবির।
তিনি আরো বলেন, ২০২১ সাল থেকে এই মসজিদে তারাবিহ নামাজ আদায় শুরু হয়। এ বছরও চলমান। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত এই মসজিদে সবসময়ই কোন ধরণের হাদিয়া ছাড়াই কোরআনে হাফেজগণ তারাবিহ নামাজ পড়াবেন। মসজিদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মনোরম পরিবেশে দিন দিন মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। দ্বিতল এই মসজিদে একত্রে প্রায় ৬ শতাধিক মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন। শুক্রবারে জুম’আর নামাজে মুসল্লীর সংখ্যা বেড়ে যায়। মসজিদের প্রাণবন্ত পরিবেশ দেখে অনেক দূর থেকেও মুসল্লীরা এখন নামাজ পড়তে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা গাজী মো. ইমাম হাসান বলেন, এই এলাকার লোকজন খুবই ধর্ম ভীরু। এলাকার প্রত্যেকটি মসজিদ খুবই সুন্দর কারুকাজ সম্পন্ন। ইসলামিয়া তাফাজ্জল কাজী হাফিজিয়া মাদ্রাসা মসজিদে এ বছর ৩জন হাফেজ কোন ধরণের হাদিয়া ছাড়া তারাবিহ নামাজ পড়াচ্ছেন। এটি এই এলাকার জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। কারণ অধিকাংশ মসজিদেই হাদিয়ার বিনিময়ে তারাবিহ নামাজ পড়ানোর রীতি চালু আছে।