প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২২, ২৩:৪৮
নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ও অ্যাসেম্বলিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষির্কী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন
নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ও অ্যাসেম্বলিতে এবার আন্তর্জাতিক আবহে উদযাপিত হয়েছে ‘বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বাষির্কী’ এবং ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’।
গত ২৮ মার্চ সোমবার স্টেট সিনেট ও অ্যাসেম্বলিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষির্কী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়। এর আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের রেজুলেশনটি নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ও অ্যাসেম্বলিতে সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়। রেজুলেশনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস স্থান পায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে,অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ৮৭ (ব্রঙ্কস) থেকে নির্বাচিত অ্যাসেম্বলিওমেন কারিনা রাইস স্টেট অ্যাসেম্বলি হাউজে এবং সিনেট ডিস্ট্রিক্ট ৩২ (ব্রঙ্কস) থেকে নির্বাচিত সিনেটর লুইস সেপুলভেদা স্টেট সিনেটে এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করেন। রেজুলেশনে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট, দেশ স্বাধীনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার অবদান স্বীকার করে এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২২ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। এখানে বাংলাদেশিরা অনেক ভালো কাজ করছেন এবং নানাভাবে অবদান রাখছেন। আমেরিকার অর্থনীতি বিনির্মাণে তাদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সফল কয়েকজনের বাংলাদেশিদের কথাও সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। এসময় উভয় কক্ষের জনপ্রতিনিধিরা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযথ সম্মান নিবেদন করেন। স্টেট সিনেটর ও অ্যাসেম্বলিমেম্বারগণ এসময় তাদের বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশী কমিউনিটির অবদানেরও উচ্ছ্বসিত প্রসংশা করেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ অর্জনটির পিছনে সমন্বয়কের কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র মুজিব শতবর্ষ উদযাপন পরিষদ ও আমেরিকান-বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন ইনক নামে দু’টি সংগঠন।
অ্যাসেম্বলি ও সিনেটে রেজ্যুলেশন দুটি পাস হওয়ার পর নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষির্কী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আয়োজনে সহায়তাকারী যুক্তরাষ্ট্র সম্মিলিত মুজিববর্ষ উদযাপন পরিষদ ও আমেরিকান-বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনকে প্রক্লেমেশন ও সাইটেশন প্রদান করা হয়। স্টেট সিনেটের অধিবেশনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে ‘লুইস ভাই’ হিসেবে খ্যাত সিনেটর লুইস সিপুলভিদা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
বিলটি উপস্থাপনকালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা জয়-বাংলা স্লোগান আর বিপুল করতালির মধ্য দিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন।
সিনেট এবং অ্যাসেম্বলি গ্যালারি এদিন বাংলাদেশীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। বর্ণাঢ্য এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন প্রায় ২৫ জন বাংলাদেশী। এর মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশী কূটনীতিক, আমেরিকা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধা, সমাজকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী।
স্টেট অ্যাসেম্বলি হাউজ ও সিনেট হাউজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্টেট সিনেটর লুইস সিপুলভেদা আলবেনী হলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সম্মানে এক অভ্যর্থনা পার্টির আয়োজন করেন।
যুক্তরাষ্ট্র সম্মিলিত মুজিববর্ষ উদযাপন পরিষদের আবদুর রহিম বাদশা ও আমেরিকান-বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি আবদুস শহীদের যৌথ সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী জামাল হুসেন পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্টেট সিনেটর লুইস সিপুলভিদাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, চাঁদপুর সদর উপজেলা বালিয়ার কৃর্তী সন্তান আমেরিকান-বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক,যুক্তরাষ্ট্র সম্মিলিত মুজিববর্ষ উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক
ও নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামীলীগের
সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম মিলন।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেল নাজমুল হাসান, বাংলাদেশি কমিউনিটি লিডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাসুদুল হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল চৌধুরী,
যুক্তরাস্ট্র যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুক্তরাস্ট্র আওয়ামীলীগের মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মেজবাহ আহমেদ, যুক্তরাস্ট্র আওয়ামীলীগের
শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক
রেজা আবদুল্লাহ স্বপন, সাংবাদিক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, হাসানুজ্জামান সাকী, আব্দুল হামিদ, মোতাসিম বিল্লাহ তুষার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও জন্মদিনের কেক কাটা হয়। অতিথিদের সম্মিলিত মুজিববর্ষ উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষির্কীর কোর্ট পিন প্রদান করা হয় ।
এসময় বক্তারা ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশী কমিউনিটির ভূয়শী প্রশংসা করেন। তুলে ধরেন নানা ক্ষেত্রে তাদের অবদানের কথাও। মার্কিন জনগণের সেবা ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের ভূমিকার কথাও ওঠে আসে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি ও স্টেট সিনেটে ‘বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বাষির্কী’ এবং ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’র ওপর পৃথকভাবে রেজুলেশন গ্রহণ করায় সিনেটর লুইস সেপুলভেদা, অ্যাসেম্বলিওমেন কারিনা রাইস সহ সংশ্লিষ্টদেরকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, বহুজাতিক এই সমাজে বাঙালিরা তাদের মেধা আর শ্রমে অবদান রাখছেন। এর মূল্যায়নও ঘটছে নানাভাবে। এর মধ্য দিয়ে তা আরো দৃশ্যমান হলো।
বাংলাদেশীরা এ ঐতিহাসিক উদ্যোগের জন্য সিনেটর লুইস সেপুলভেদা, অ্যাসেম্বলিওমেন কারিনা রাইস সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান। তারা বলেন, আগামীতে নিউইয়র্ক স্টেটে দিবসটির নাম বিশেষভাবে লেখা থাকবে।
অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষির্কী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আয়োজনে সহায়তাকারী যুক্তরাষ্ট্র সম্মিলিত মুজিববর্ষ উদযাপন পরিষদ ও আমেরিকান-বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনকে সাইটেশন প্রদান করা হয়। সম্মাননা তুলে দেন সিনেটর লুইস সিপুলভিদা।
এসময় তিনি অ্যাসেম্বলিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষির্কী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের রেজুলেশনের কপিও হস্তান্তর করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের গলায় জড়ানো লাল-সবুজের উত্তরীয় এবং স্বাধীনতার আমেজে পরিধেয় পোশাকে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট, এ্যাসেম্বলী হাউস এবং লবি হলের খোলা চত্বর হয়ে ওঠে এক খন্ড বাংলাদেশ।
মধ্যাহ্ন ভোজে নিউইয়র্কের বাঙালি মালিকানাধীন অন্যতম সেরা রেষ্টুরেন্ট খলিল বিরিয়ানী হাউজের ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানী দিয়ে সকলকে আপ্যায়িত করা হয়।