শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

যে সেতু নির্মাণে সময় যায় কাজ ফুরায় না

যে সেতু নির্মাণে সময় যায় কাজ ফুরায় না
এমরান হোসেন লিটন ॥

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন নদীর উপর একের পর এক সেতু নির্মাণ করছে। যার ফলে শুধু দুপাড়ের মানুষই নয়, সেতুর সংযোগকারী সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী সকল যানবাহন ও যাত্রীরাই উপকৃত হয় এবং উন্নয়ন ও গতিশীল হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার অর্থনৈতিক গতিধারা। কিন্তু কারো গাফিলতির কারণে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ যদি অসম্পন্ন অবস্থায় পড়ে থাকে অথবা সময় গেলেও যদি কাজ না ফুরায় তাহলে দেখা যায় উল্টোচিত্র। তাতে করে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, চলে আসে বিরক্তিবোধ।

এমনটিই লক্ষ্য করা গেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর উপর ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর ক্ষেত্রে। গত ৬ বছরেও সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দুইপাড়ের লক্ষ লক্ষ মানুষ সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরজমিনে অনুসন্ধান করে এবং এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, ঠিকাদারের অবহেলার কারণেই সেতুটির নির্মাণকাজের এই অবস্থা।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা ও চাঁদপুর সদর উপজেলা ঘেঁষে ডাকাতিয়া নদীর ওপর ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চররনবলিয়া গ্রাম ও চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর গ্রামের বগার গুদাড়া নামক স্থান দিয়ে ২৭৭ মিটার দীর্ঘ ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং চাঁদপুর সদর আসনের এমপি ডাঃ দীপু মনি ও চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়াসহ যৌথভাবে সেতুটির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।

নদীর উপরে সেতুটির মূল কাজ ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার মেসার্স নবারণ টেড্রার্স লিঃ সময়মত সম্পন্ন করে। পরে আবার সেতুর দুপাড়ের এপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্য ২৮ কোটি ৯৫ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৫৪ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশন ও ইউনুছ আল মামুন (জেবি)কে যৌথভাবে কাজ দেয়া হয়। তারা প্রথম থেকেই ঢিলেঢালাভাবে কাজ শুরু করেন। নির্মাণকাজের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি কাজ শেষ হয় না। পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

সম্প্রতি সরজমিনে সেতুর নির্মাণকাজ দেখতে গেলে দেখা যায়, সেতুর ফরিদগঞ্জ উপজেলা অংশে এলজিইডির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো ইঞ্জিনিয়ার না থাকা অবস্থায় ৫-৬ জন শ্রমিক সেতুর ভায়াডাক্টের পিলারের ক্যাপের ঢালাইয়ের কাজ করছেন এবং ভাইব্রেটর ছাড়াই হেভি পিলারে বাঁশ দিয়ে ঢালাই মিলিয়ে নিচ্ছেন। এতো বিশাল কাজের পাশে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ অথবা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকদের যে কর্মব্যস্ততা থাকার কথা তার কিছুই নজরে পড়েনি।

এ সময় সাংবাদিকদের আগমনের কথা জেনে সেতু এলাকার বাচ্চু মিয়া, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল সোবহান, মুছাব্বর পাটোয়ারী, সফিক, রফিকুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত হয়ে এ প্রতিনিধিকে জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি যেভাবে কাজ করছে, মনে হয় আগামী ৩-৪ বছরেও এ সেতুর কাজ শেষ হবে না। কাজের ধীরগতি ও শ্রমিক কম দিয়ে কাজ করানোর কারণে ভায়াডাক্টের সমস্ত পিলারের ক্যাপের রডে মরিচা ধরছে। বিশাল এই কাজে তাদের নিজস্ব কোনো ভাইব্রেটর নেই, ঢালাই শেষে পানি দেয়ার জন্য কোনো মোটর এবং পাইপ নেই। এছাড়া ঢালাই মিলানোর মধ্যে কোনরকম নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না। সিলিকন বালু এবং পাথরগুলো কোনোরকম পরিষ্কার না করেই কাজ করছে। ঠিকমত এখানে নির্মাণ সামগ্রীও আনা হয় না বলে তারা জানান। এ সময় এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই সেতুর কাজের অনিয়মের বিষয়ে যদি আমরা সত্য কথা বলি তাহলে আমাদেরকে চাঁদাবাজির মামলার ভয় দেখায়। এ সময় বয়োবৃদ্ধ একজন বলেন, আমি এই ধরনের কাজের সাথে ৩০ বছর জড়িত ছিলাম। কিন্তু এ ধরনের হেভী সেতুতে এতো নিম্নমানের কাজ করা হয় তা আমার জানা ছিল না। প্রতিদিনই তাদের ৫-৭ জন লোক তাদের নিজস্ব নিয়মে কাজ চালিয়ে নেয়। মাঝেমধ্যে এলজিইডির দু-একজন লোক আসলেও কাজের তদারকি না করেই আবার চলে যান।

এ সময় উপস্থিত এলজিইডির কার্যসহকারী জাহিদুল ইসলাম ও বশির আহমেদ নামের দু'জন বলেন, সেতুর পশ্চিম পাড়ের কাজের অনেক অংশ এগিয়েছে। তবে কবে নাগাদ এই সেতুর কাজ শেষ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা সঠিক কোনো জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সেতুর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে ফরিদগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আবরার আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি কাজের অগ্রগতির বিষয়টি এড়িয়ে বলেন, সেতুর কাজ আমরা এ বছরের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছি। এ সেতুটির কাজ শেষ হলে ফরিদগঞ্জ এবং চাঁদপুরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে বলে তিনি জানান।

চাঁদপুর জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আহছান কবিরের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সেতুটির কাজ আগামী জুন নাগাদ শেষ হওয়ার কথা। আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, চাঁদপুর-হাইমচর আসনের এমপি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির পিতা ভাষা সৈনিক মরহুম এমএ ওয়াদুদের নামানুসারে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়