প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৩, ২০:৩৭
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি
সংসার খরচ আরও বাড়ল, এখানেই শেষ নয়
হিসাব করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। তারপরও হাজার টাকার কম বিল আসে না। সামনে রমজান, গরমের মৌসুম। স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। কিন্তু সরকার যেভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, তাতে কিছুদিন পর পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। এক মাসে দুই ধাপে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে সরকার। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক ব্যয়ে। কাজেই শুধু মনোয়ারা বেগমই নন, তার মতো অবস্থা রাজধানীর অধিকাংশ নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের।
|আরো খবর
যেমন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, দফায় দফায় সরকার যে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, একবারও কি সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করছে? বাজারে এখন সবকিছুর দাম বাড়তি। প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতেই সব টাকা চলে যাচ্ছে, বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের বোঝা কীভাবে সামাল দেব?
পেশায় ব্যাংকার শামসুল আরেফিন পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ধানমন্ডির সোবহানবাগে। তিনি বলেন, গত এক বছর ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া। পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বেড়েছে, এলপিজি গ্যাসের দাম বেড়েছে, সর্বশেষ বাড়ল বিদ্যুতের দাম। কিন্তু সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়েনি। অনেক কাটছাঁট করে চলার পরও হাতে টাকা থাকছে না। আর বিদ্যুতের দাম বাড়া মানে সবকিছুর দাম আবার বাড়বে। যা জনগণের ওপর চাপ ছাড়া আর কিছু নয়।
তিনি বলেন, নির্বাহী আদেশে প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তার মানে সব মাসেই দাম বাড়বে। এ দফায় দাম বৃদ্ধির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর আরেক দফা দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসবে। কাজেই দাম বৃদ্ধির এ সাইকেল সহসা থামছে না।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে সরকার। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে ১২ বার এবং গত দুই মাসে তিনবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হলো।
এমন একটি সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো, যখন মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভঅবে আবাসিক খাতে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ বাড়বে ১০ থেকে ২০ শতাংশ।
সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ (৫০ ইউনিটের কম) ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ৪.১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪.৩৫ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যমান দর ৪.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৪.৮৫ টাকা, দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ৬.৩১ থেকে বাড়িয়ে ৬.৬৩ টাকা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ৬.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬.৯৫ টাকা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের বিদ্যমান দর ৬.৯৯ থেকে বাড়িয়ে ৭.৩৪ টাকা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ১০.৯৬ থেকে বাড়িয়ে ১১.৫১ টাকা, সর্বশেষ ধাপ ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ব্যবহারকারীদের বিদ্যমান দর ১২.৬৩ থেকে বাড়িয়ে ১৩.২৬ টাকা করা হয়েছে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এক অদূরদর্শী পরিকল্পনায় চলছে। যার দায়ভার পড়ছে সাধারণ জনগণের ওপর। বিদ্যুতের এভাবে মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, গণশুনানি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। এখন নির্বাহী আদেশে সরকার সরাসরি সেটা করছে। সরকার কোনোরকম জবাবদিহিতা ছাড়া মূল্যবৃদ্ধি করে যাচ্ছে। যা মূল্যস্ফীতি আর জনগণের বোঝা দুটোই বাড়িয়ে চলেছে।