প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২১, ০৩:৪৫
সারাদেশে আইসিইউর জন্য হাহাকার
ক্রমেই বাড়ছে করোনা সংক্রমন। প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে ২শ' জনের। আক্রান্ত হচ্ছে ১১ হাজারের উপরে। এত সহস্র রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। বিশেষ করে যে সকল রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন তাদের জরুরী ভিত্তিতে আইসিউতে নেয়ার প্রয়োজন পড়লে অসহায় হয়ে পড়েন রোগীর অভিভাবকরা। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে চলেন ঠিকই দিন শেষে ফলাফল শূণ্য। কারন ঢাকার প্রায় প্রতিটি হাসপাতালের চিত্র একই। আইসিইউ সংকট।
|আরো খবর
শুধু রাজধানীতেই নয়, রাজধানীর বাইরের হাসপাতাল গুলোতে হাহাকার পড়ে গেছে আইসিইউর জন্য। কোন কোন হাসপাতালে কয়েকদিন ধরে আইসিইউয়ের শয্যার জন্য অপেক্ষা করতে করতে মৃত্যুবরণ করছেন রোগীরা। ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ও অধিক পরিমাণে অক্সিজেন প্রয়োজন হওয়ায় তাদের অনেকে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এভাবে রোগীর চাপ বাড়তে থাকলে শুধু আগামীতে হাসপাতালে শয্যা পাওয়া কঠিন হবে। এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেও।
রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি আইসিইউ বেড রয়েছে ঢাকা মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অথচ ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে গত সাতদিন ধরেই কোন আইসিইউ শয্যা খালি থাকছে না। তবে হাসপাতালটিতে সাধারণ শয্যা প্রতিদিনই কিছু না কিছু ফাঁকা থাকছে। কিন্তু রাজধানীর বাইরে থেকে আসা গুরুতর রোগীর চাপ বেশি থাকায় আইসিইউ শয্যা ফাঁকাই পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গুরুতর রোগীর স্বজনরাও আইসিইউ শয্যা ফাঁকা হওয়ার প্রত্যাশায় সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করছেন। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগী মারা গেলে অথবা সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হলেই কেবল মিলছে আইসিইউ বেড। ফাঁকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শয্যাটি পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কোন কোন রোগীর জরুরী ভিত্তিতে আইসিইউ সাপোর্ট লাগলেও তিনি সেটি পাচ্ছেন না।
রাজধানীর একটি হাসপাতালের কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, ডেল্টা ধরনের কারণে সারাদেশই এখন হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এই ধরনের রোগীর ফুসফুস দ্রুত আক্রান্ত হয় এবং বেশিরভাগ আক্রান্ত রোগীকে সময়মতো চিকিৎসা দিতে না পারলে সুস্থ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আক্রান্ত রোগীদের কেউ কেউ ফুসফুসের ৭০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর হাসপাতালে আসছেন। তখন আর কিছু করার থাকছে না।
ডেল্টায় আক্রান্তদের অন্য ধরনগুলোর চেয়ে অক্সিজেন সাপোর্ট বেশি লাগছে। সারাদেশেই করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোতে সীমাবদ্ধতার কারণে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী গত বছরের মতো এ্যাম্বুলেন্সেই মারা যাচ্ছেন।
সরকারি তালিকা অনুযায়ী এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজধানীর বেসরকারী হাসপাতাল গুলোতে আইসিইউ ফাঁকা রয়েছে ২০ শতাংশ। সরকারী তুলনায় বেসরকারী পর্যায়ে আইসিইউ চিকিৎসার ব্যাপক খরচ হলেও রাজধানীর ২৮টি হাসপাতালে মোট ৫০৫টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ৯৯টি শয্যা। তবে ঢাকার নামকরা প্রায় সকল হাসপাতালেই আইসিউতে রোগী ভর্তি রয়েছে।