শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২১, ২০:০৩

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকে নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ডাকাত চক্র

রাসেল হাসান:
চাঁদপুরগামী নৌ রুটে ডাকাত আতঙ্ক

পদ্মা, মেঘনায় চাঁদপুরগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ, ট্রলার ও স্পিডবোটে ডাকাত আতঙ্ক বাড়ছেই। ঈদকে কেন্দ্র করে গত দুই সপ্তাহে ছোট-বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৭টি এবং নৌ পুলিশ দ্বারা ডাকাতদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৫টি। রহস্যজনকভাবে প্রতিটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন রুট থেকে চাঁদপুরের দিকে আসা যাত্রীবাহী ট্রলার বা লঞ্চে।

ডাকাত চক্র দ্রুত গতির স্পিডবোটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক পড়ে পদ্মা মেঘনায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে জানা যায়। যাত্রীবাহী ট্রলারগুলো দূর থেকে নৌ পুলিশ বা সেনাবাহীনির ট্রলার ভেবে তাদের ইশারায় সাড়া দিয়ে ট্রলারের গতি কমিয়ে আনে আর তাতেই চৌকশ ডাকাত চক্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

সর্বশেষ গত ২০ জুলাই ভোরে নারায়নগঞ্জ থেকে চাঁদপুরগামী একটি যাত্রীবাহী মিনি লঞ্চে ডাকাতির ঘটনা ঘটে বলে জানায় নৌ পুলিশ। গজারিয়া নামক স্থানে ডাকাত দল লঞ্চে হানা দিলে তাৎক্ষণিক লঞ্চের এক যাত্রী নৌ পুলিশকে জানায়। এতে স্বল্প সময়ের মধ্যে নৌ পুলিশের স্পিড বোটের হুইসেল শুনায় ডাকাত দল অল্প কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল, ব্যবহৃত স্বর্ণ ও নগদ অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়।

১৯ তারিখ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে চিরার চরের কাছে একটি যাত্রবাহী ট্রলারে। খবর পেয়ে নৌ পুলিশ ধাওয়া করলে ডাকাত দল মরা পদ্মার চরের দিকে চলে যায়। নৌ পুলিশের স্পিডবোট থেকে ডাকাতদের স্পিডবোটের গতি বেশি থাকায় তাদের ধারা যাচ্ছিলো না। নৌ পুলিশ দল অভিযান অব্যাহত রাখায় ডাকাতরা বাংলা বাজারের কাছে স্পিডবোট রেখে স্থলভাগ দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে নৌ পুলিশ ১টি স্পিড বোট, ৭টি লাইফ জ্যাকেট ও কিছু পোশাক উদ্ধার করে। পোশাকগুলো সেনাবাহীনির পোশাকের মত ডোরাকাটা ছিলো। ধাওয়া করা ডাকাতদের দূর থেকে সেনা সদস্যদের মতই মনে হচ্ছিলো বলে জানায় উদ্ধারকারী নৌ পুলিশ।

এর পূর্বে বাবুর চর, গুচ্ছগ্রাম ও মিনি কক্সবাজার নামক চরের কাছে ঘটেছে পৃথক আরও তিনটি ছোট ডাকাতির ঘটনা। নৌ পুলিশ টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছার পূর্বেই পালিয়ে যায় ডাকাত দল।

১৭ জুলাই রাত ২টায় ষাটনল টু দাউদকান্দি রুটে আরো একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটার আগেই ডাকাতদের উপস্থিতা টের পেয়ে ধাওয়া করে নৌ পুলিশ। ডাকাতদের স্পিড বোটে ৮/১০ জন ছিলেন। তাদের পড়নেও ছিলো মিলিটারির সদস্যদের মত ডোরাকাটা সবুজ-খাকি পোশাক।

১৭ তারিখের পূর্বে গত দুই সপ্তাহে বিজির পার ফরিদপুর, ষাটনল, চাঁদপুর রাজরাজেশ্বর, মাঝির চর এলাকায় যাত্রীবাহী ট্রলারে ডাকাতরা হানা দিয়েছে বলে স্থানীয় ট্রলার চালকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

পদ্মা মেঘনায় ডাকাতির জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হলো সুরেশশ্বর, নারায়নগঞ্জ মোহনপুর চাঁদপুর ষাটনল, কাচি কাটা ও মরা পদ্মার মুখ। এসব স্থানে ডাকাতি করে ডাকাতরা সহজেই তাদের আস্তানায় পালিয়ে যেতে পারে।

চাঁদপুরগামী যাত্রীবাহী ট্রলারগুলোতেই কেন এত ডাকাতি? এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর, শরিয়তপুর, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা নৌ পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, চারটি অঞ্চলের মধ্যে চাঁদপুর অঞ্চলে মেঘনায় বেশ কয়েকটি ছোট ছোট চর থাকায় ডাকাত দল চরে মিলিয়ে যেতে পারে বলে এ অঞ্চলকে টার্গেট করা হয়। এ ছাড়াও ডাকাতদের ধারণা যারা ঈদের বাড়ি ফিরছে তাদের কাছে অধিক পরিমান টাকা-পঁয়সা থাকতে পারে।

মেঘনার ডাকাতির ঘটনায় লঞ্চ বা ট্রলার চালকদের হাত থাকতে পারে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই পারে। গুচ্ছগ্রামে ট্রলার ডাকাতির ঘটনায় ট্রলার চালকের হাত ছিলো। ডাকাতির শিকার ট্রলারের যাত্রীদের দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী ট্রলার চালক সন্দেহের তালিকায় রয়েছে।

নদীপথে ডাকাত আতঙ্ক কমাতে করণীয় কী জানতে চাইলে নৌ পুলিশ সুপার বলেন, আমাদের জনবল বাড়ানো অতীব জরুরী। সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে বৃহত্তর এই নৌ পথ নিয়ন্ত্রন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

নৌ পুলিশ সুপারের দাবী নৌ পুলিশরা টহলে না থাকলে এত দিনে পদ্মা মেঘনায় ৫শ' ডাকাতির ঘটনা ঘটতো। তিনি বলেন, সীমিত সংখ্যক সদস্য নিয়ে আমরা নৌ এরিয়াকে সাধ্যমত নিয়ন্ত্রন করে যাচ্ছি। নৌ পুলিশ সদস্যরা প্রতি রাতে টহল অব্যাহত রেখেছে। ১৯ জুলাই সারা রাত আমি নিজেই নদীতে টহলে ছিলাম। আমরা আমাদের সেরাটি দিয়ে চেষ্টা করছি কিন্তু সরকার থেকে আমাদের গতি সম্পন্ন স্পিড বোট, আরো পুলিশ সদস্য মোতায়েন না করলে ডাকাত মুক্ত নদীপথ করা যাচ্ছে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়