প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২১, ১৮:১৫
যে কারনে প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন ড. শামসুল আলম মোহন
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কৃতি সন্তান ড. শামসুল আলম পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন। খবরটি অনেকের জন্যই চমক সৃষ্টি করেছে। একজন এমপি বা সরকারের উচ্চ পদস্থ কোন বিভাগে আলোচিত না হয়েও হঠাৎ করেই কেন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় ড. আলম নামে পরিচিত ড. শামসুল আলম? সে প্রশ্ন এখন অনেকেরই মনে।
|আরো খবর
চলতি বছর 'স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে বিশিষ্টজনদের ভাবনা শীর্ষক' ধারাবাহীক সংবাদে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন তৎকালিন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম। ওই প্রতিবেদনেই ফুঁটে ওঠে চাঁদপুরের এই কৃতি সন্তান নিরবে নিভৃতে দেশের অর্থনীতি ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্ণধার হিসেবে কাজ করে গেছেন দীর্ঘকাল ধরে।
সরকারের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তিনি। নীরবে, নিভৃতে পালন করে গেছেন তাঁর ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব। খুব বেশি আলোচনায় না থাকলেও তিনি সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকের সুনজরে ছিলেন বরাবরই। যে কারণে সদ্য অবসরে যাওয়ার পরও তাকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ড. আলম ১৯৯১ সালে ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল আপন টাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতায় ১৯৭৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ বছর নিয়োজিত ছিলেন। দেশের বাইরে ‘ড. আলম’ বা ‘ড. মোহন’ নামে পরিচিত এই কৃষি ও অর্থনীতি গবেষক জার্মানির হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও নেদারল্যান্ডের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকসে প্রফেসর হিসেবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায় অংশগ্রহণ করেন।
রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘ মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১), ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫) ড. শামসুল আলমের নেতৃত্বে ও অংশগ্রহণে প্রণীত হয়। ড. আলমের নেতৃত্বে প্রণীত বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০)-এর সফল বাস্তবায়ন হয়। তিনি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১০% কোটায় ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে প্রথম সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদা লাভ করেন। ড. শামসুল আলম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের প্রত্যক্ষ শ্রোতা। সেদিন তিনিও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ দিয়েছিলেন রেসকোর্স ময়দানে কালের সাক্ষী হতে। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় যখন শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়া হয় তখন মূল মঞ্চ থেকে ড. শামসুল আলম মাত্র কয়েক গজ দূরে। এমন বহু ইতিহাসের সাক্ষী বর্তমানে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করা সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম নিজ দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণের পরপরই মন্ত্রীপরিষদ থেকে তাকে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। আগামী ১৮ জুলাই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন তিনি।
মূলত দেশের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন, রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘ মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনাসহ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে বিতর্কের ঊর্ধ্বে নিরলস ভাবে কাজ করার স্বীকৃতি ও পুরস্কার হিসেবেই তিনি দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা। এমনটাই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।