প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ১৬:২৩
হাত খরচের টাকা না পেয়ে ক্ষোভে বড়ো ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে ছোট ভাই

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামে সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুর রহিম রাফি (২৬) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভাইয়ের কাছে হাত খরচের জন্যে ৫০০ টাকা চায়, এ সময় বড় ভাই তাকে টাকা না দিয়ে শাসন করে। এর জের ধরে বড়ো ভাই রাফিকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে ১৬ বছর বয়সী ছোট ভাই। পরে খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের ঘর থেকে গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং- ০৫, তারিখ-১০/০৮/২০২৫ খ্রি., ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড।
|আরো খবর
ঘটনার পর হত্যা রহস্য উদঘটনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান এবং কমলগঞ্জ থানার ওসি আবু আফর মো. মাহফুজুল কবিরসহ থানার একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং প্রাথমিকভাবে হত্যার কারণ ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করে।
গোপন সোর্স, তথ্য প্রযুক্তি, এলাকাবাসীর বক্তব্য এবং আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় নিহতের ছোট ভাই রানাকে (ছদ্ম নাম, বয়স ১৬) সেদিনই (৯ আগস্ট) জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে নিহতের স্ত্রী এবং আশেপাশের মানুষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রোববার (১০ আগস্ট ২০২৫) সে তার ভাইকে ঘুমের মধ্যে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ গত ৮ আগস্ট রাত অনুমান ৮টার সময় তার ভাই নিহত রাফির কাছে সে ৫০০ টাকা চায়। রাফি ছোট ভাইকে টাকা না দিয়ে গালিগালাজ এবং দুর্ব্যবহার করে। এই ঘটনায় বড়ো ভাইয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। পরের দিন শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে ঘাতক ছোট ভাই দেখে তার মা ও ভাইয়ের বউ বাড়িতে নেই। রাফির ঘরের সব দরজাও খোলা ছিল। রাফি ঘুমিয়ে ছিল। এই সুযোগে আগের রাতের ঘটনায় ভাইয়ের উপর রাগের বশবর্তী হয়ে খাটের নিচে থাকা ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ভিকটিম রাফিকে ঘাড়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে।
পরবর্তীতে ঘাতক ছোট ভাই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা বেসিনে ধুয়ে পরিষ্কার করে পুনরায় খাটের নিচে রেখে দেয় এবং তার পরনে থাকা রক্তমাখা লুঙ্গিও খাটের নিচে রেখে দেয়। ঘটনার পর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে থাকে। তবে শুধু এটাই হত্যাকাণ্ডের পেছনে একমাত্র কারণ নয়। নিহত রাফির বাবার স্বপ্ন ছিলো ছোট ছেলে রানা (ছদ্মনাম) মাদ্রাসায় পড়াশোনা করবে, আলেম হবে। কিন্তু রানার পড়াশোনার প্রতি উদাসীনতা ছিলো। রাফিদের বাবা মারা যাওয়ার পর বড়ো ভাই হিসেবে রাফিই ছিলো ছোট ভাইয়ের অভিভাবক। রাফি চাইতো তার ছোট ভাই বাড়িতে না থেকে মাদ্রাসায় থেকে পড়াশোনা করবে। কিন্তু তার ভাই মাদ্রাসা না থেকে বাড়িতেই বেশি থাকত। এসব কারণে অভিভাবক হিসেবে বড়ো ভাই রাফি প্রায়ই তার ছোট ভাইকে শাসন করতো। কিন্তু বড়ো ভাইয়ের শাসন সে মেনে নিতে পারেনি।
আবার, নিহত বড়ো ভাই রাফি পরিবারের অমতে প্রেম করে বিয়ে করে। এই বিয়েতে রাফির পরিবার বা আত্মীয় স্বজন কারোরই মত ছিল না। বিয়ের পর থেকে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে রাফির স্ত্রীর সাথে রাফির মা ও ভাইয়ের কিছু টানাপোড়েনের তথ্যও পাওয়া যায়। বিয়ের এতোদিনেও যেটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। প্রায়ই দেবর-ভাবী এবং ভাইয়ের সাথে পারিবারিক অশান্তির তথ্য পাওয়া যায়।
সময়ের সাথে সাথে এই বিষয়গুলো নিয়ে বড়ো ভাইয়ের ওপর ক্ষোভ বাড়তে থাকে। যেটা শেষ পর্যন্ত হত্যার মাধ্যমে শেষ হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা এবং তার ঘরের খাটের নিচ থেকে তার রক্তমাখা লুঙ্গি উদ্ধার করা হয়েছে।