রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫

মতলব উত্তরে লেংটার মেলা

পাঁচ শতাধিক গাঁজার দোকান ও নৃত্যের আসর বসানোর পাঁয়তারা!

মাহবুব আলম লাভলু
পাঁচ শতাধিক গাঁজার দোকান ও নৃত্যের আসর বসানোর পাঁয়তারা!

আসছে ১৭ চৈত্র শুরু হতে যাচ্ছে মতলব উত্তর উপজেলার বেলতলী এলাকার বদরপুর গ্রামে সাতদিনব্যাপী ১০৬তম শাহসুফি সোলায়মান (রহ.)'র ওরশ উপলক্ষে লেংটার মেলা। আর এ মেলাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি চক্র মাদক কেনাবেচা, সেবন ও অশ্লীল নৃত্যের আসর বসানোর পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এ মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই ঘটে থাকে কোনো না কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা।

পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও প্রতি বছর সেখানে প্রকাশ্যে পাঁচ শতাধিক গাঁজার দোকান, আফিমসহ বিভিন্ন মাদকের পসরা সাজিয়ে বিক্রি হয়। সারাদেশ থেকে ছুটে আসে নেশাখোররা । এছাড়া মেলার কয়েকটি এলাকায় নারীদের অশ্লীল নৃত্যের জমজমাট আসরও দেখা গিয়েছে বিগত বছরগুলোতে।

জানা যায়, উপজেলার বদরপুর এলাকায় সূফী সাধক হজরত শাহসুফি সোলায়মান (রহ.) ওরফে লেংটা বাবা বাংলা ১৩২৫ সালের চৈত্র মাসে মারা যান। এরপর প্রতি বছর তাঁর মাজার এলাকায় চৈত্র মাসের ১৭ তারিখে ওই মাজারের খাদেম ও আশেকানরা মেলা ও বার্ষিক ওরশের আয়োজন করেন। স্থানীয়ভাবে মেলাটি লেংটার মেলা নামে পরিচিত। এতে ২০ লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়ে থাকে।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হজরত শাহসুফি সোলায়মান (রহ.) ওরফে লেংটার নামে ওরশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিটি। এই ওরশকে কেন্দ্র করে মাজার কমিটির খাদেম মতিউর রহমান লাল মিয়াসহ আশপাশের লোকদের কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। পাগল ও নেশাখোররা আস্তানা গেঁড়ে বসে। চলবে চাঁদাবাজি, জুয়া, ছিনতাই, অশ্লীলতা, অবাধে মাদক বিক্রি ও সেবন।

শুক্রবার (১৪ মার্চ ২০২৫) দুপুরে ওই মেলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেলতলী লঞ্চঘাট থেকে সাদুল্লাপুর মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে মেলার নানা কার্যক্রমের প্রস্তুতি। দোকানপাট মেরামতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। মাজার এলাকায় বাড়ছে আশেকান-ভক্তের ভিড়। মাজারটির পশ্চিম দিকে পুকুরের পাড়ে, পুকুরসংলগ্ন বাগানে ও বেড়িবাঁধ এলাকায় গাঁজা-মদ সেবন ও বিক্রির জমজমাট হাট বসবে।

শরীয়তপুর থেকে আগত নেয়ামত আলী নামে এক লেংটার ভক্ত জানান, আমি প্রতি বছর মেলা শুরু হবার ১ মাস আগেই চলে আসি। এখানে এসে মনের সুখে সিদ্ধি (গাঁজা) সেবন করতে পারি। আমি লেংটা বাবার ভক্ত। ৪০ বছর যাবৎ আমি এখনে আসি। এবারও এসেছি, মেলার পরেও পনরো দিন থাকবো।

উপজেলার তালতলী গ্রামের গাজী এমদাদুল হক মানিক অভিযোগ করেন, লেংটার মেলার নামে এখানে যেভাবে দিন-রাতে মাদক ও অশ্লীল নাচগানের আসর বসবে, তা মেনে নেয়া যায় না। মেলা এলাকার শতাধিক স্থানে মাদক কেনাবেচা ও সেবনের জমজমাট আড্ডা চলবে। এতে মেলা ও আশপাশের এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। নেশাগ্রস্ত ও বিপথগামী হয়ে পড়ছে এলাকার কিশোর-তরুণরা। নষ্ট হবে সামাজিক পরিবেশ। ওপরে চলবে মেলা আর ভেতরে চলবে লাখ লাখ টাকার মাদকের ব্যবসা। প্রশাসনের কাছে আবেদন করছি, এবার যেনো এই মেলাকে কেন্দ্র করে কোনো রকমের মাদক, জুয়া, নারী ব্যবসা না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্যে।

সাদুল্লাপুর ইউপি সদস্য জানান, করোনাকালীন সময়ে মেলার কার্যক্রম বন্ধ করেছিল প্রশাসন। তারপরে দুই বছর লেংটার মেলার সময় রোজা ছিল। তখন স্বল্প পরিসরে মেলার কার্যক্রম হয়েছিল। এবার মেলা শুরু হবে ঈদের দিন অথবা ঈদের পরের দিন। তাই অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর লোকজন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো, এ বছর যাতে মেলায় প্রশাসনের নজরদারি বেশি থাকে।

এ বিষয়ে হজরত শাহসুফি সোলায়মান (রহ.) ওরফে লেংটার মাজারের খাদেম মতিউর রহমান লাল মিয়া জানান, মাজারের বাউন্ডারির ভেতরে কোনো ধরনের খারাপ কাজের জায়গা নেই। এই অপকর্মগুলো কোথায় হয় সেই স্থান উল্লেখ করে আপনারা সংবাদ লিখেন। আমিও চাই ওরশ মাহফিলকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের খারাপ কাজ না হয়। এগুলো বন্ধের জন্যে আমি কর্তৃপক্ষ বরাবর দরখাস্ত করেছি। মাজার কমপ্লেক্স এরিয়ায় ১৫০জন ভলান্টিয়ার কাজ করবে।

মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল হক জানান, বদরপুর গ্রামে প্রতি বছরই লেংটার মাজারকে কেন্দ্র করে ওরশ ও মেলা হয়ে থাকে। অনেক লোকজনেরও সমাগম হয়। অন্যান্য বছর কী হয়েছে জানি না, এ বছর চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনা স্পষ্ট। কোথাও আইন-শৃঙ্খলার যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে লক্ষ্যেই মতলব উত্তর থানা পুলিশ কাজ করছে।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি জানান, মেলাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনোরকম চাঁদাবাজি, জুয়া, ছিনতাই, অশ্লীলতা, মাদক বিক্রি হতে না পারে সেই লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়