বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩৪

জুলাই আন্দোলনে নিহত

নাঈমা সুলতানার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না

সংবাদদাতা
নাঈমা সুলতানার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না

জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র- জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত নাঈমা সুলতানার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হবে। সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না, অকালে ঝরে গেলো একটি তাজা প্রাণ। নাঈমা বাবাকে বলেছিলো, তুমি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হয়েছো। আমি অ্যালোপেথিক চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে পুলিশের গুলিতে নিহত নাঈমা সুলতানা (১৫)-এর হতভাগ্য পিতা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মতলব উত্তরের সুলতানাবাদ ইউনিয়নের আমুয়াকান্দা গ্রামের ডা. গোলাম মোস্তফা।

সম্প্রতি মতলব উত্তরের সুজাতপুর বাজারে তাঁর চেম্বারে বসে তিনি রোগী দেখছিলেন। পত্রিকার প্রতিনিধি পরিচয় দেয়ার পর বসতে বললেন। জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত নাঈমা সুলতানার কথা জিজ্ঞাসা করার পরই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।

ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, তার স্ত্রী আইনুন নাহারও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। সন্তানদের বাসায় দেখাশোনা করার কারণে তাঁর স্ত্রী চেম্বারে বসেন না। বাসায় গৃহিণী হিসেবে সন্তান লালন পালন করেন। তাদের ২ মেয়ে ১ ছেলে। বড়ো মেয়ে তাসকিয়া সুলতানা উত্তরা মাইলস্টোন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। সে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। মেজো মেয়ে নাঈমা সুলতানা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। একমাত্র ছেলে আব্দুর রহমান (৯) ২য় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। নাঈমা সুলতানা বলতেন, বাবা আমি এমবিবিএস ডাক্তার হবো। জানা গেছে, নাঈমা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র- জনতার আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুকে কার্টুন এঁকে সমর্থন দিতো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র- জনতার আন্দোলনকারীদের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট শেয়ার করতো।

১৯ জুলাই বিকেল ৫ টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন তুঙ্গে। পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্যে ধাওয়া করে। তখন মিছিলকারীরা নাঈমাদের বাসার নিচে অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীদের শব্দ শুনে নাঈমা সুলতানা বারান্দায় গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ পর পুলিশের গুলি নাঈমার মাথার বাম পাশে লাগে। তাতে মাথার পেছনে মগজ ও রক্ত বের হতে থাকে । পরে তাকে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সে সময় নাঈমা সুলতানার পিতা মতলব উত্তরে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। রাতে তাঁরা মতলব উত্তরের সুলতানাবদ ইউনিয়নের আমুয়াকান্দা গ্রামে লাশ নিয়ে আসেন। পরদিন শনিবার সকাল ১০ টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। উত্তরায় নাঈমা সুলতানার স্মরণে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, আন্দোলন চলাকালীন নাঈমা সুলতানা তাঁর মাকে বলেছিলো, আন্দোলনে আমি যদি মারা যাই, তুমি আলহামদুলিল্লাহ বলবে। হায়রে নিয়তি! মেধাবী মেয়েটি যে স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করতে ছিলো, সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো। একটি নক্ষত্র বিদায় নিলো। এভাবে আর যেন কোনো বা-মার বুক খালি না হয়।

জানা যায়, জুলাই ফাউন্ডেশন নাঈমা সুলতানার পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খোঁজ খবর নিয়েছে। এমনকি আর্থিক সহায়তাও করেছে। সন্তানদের পড়াশোনার কথা চিন্তা করে ডা. গোলাম মোস্তফা উত্তরায় ৯ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়