প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:১০
কেউ মারা যায়নি।।একাধিক আহতের অবস্থা আশঙ্কাজনক
হাজীগঞ্জে ১ বাড়ি ১ গ্রামের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের নেপথ্যে যা জানা গেলো
হাজীগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত সংঘর্ষ হয়েছে মুলত মকিমাবাদ সর্দার বাড়ি ও টোরাগড় গ্রামকেন্দ্রিক। টোরাগড় গ্রাম আর সর্দার বাড়ি মূলত বিএনপি সমর্থিত হওয়ার কারণে কেউ কেউ এই ঘটনাকে বিএনপির আধিপত্য নিয়ে হয়েছে বলে বলাবলি করছেন। বিএনপি দাবি করেছে, এটি দলীয় কোনো ঘটনা না, নিতান্তই এটি ভিন্ন একটি ঘটনা। শুক্রবার রাতের সংঘর্ষ আর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে, যাদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কজনক হওয়ার কারণে তাদেরকে কুমিল্লা ও ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। এর মধ্যে সাইমন নামের এক কিশোরের অবস্থা আশংকাজনক। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে সংঘর্ষস্থল হাজীগঞ্জ বাজারে সেনাবাহিনী ও পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একই সময়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন ও পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব।
|আরো খবর
খোঁজ নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়, গত আগস্ট মাসে তুচ্ছ ঘটনায় টোরাগড় গ্রামে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন এলাকায় মকিমাবাদ গ্রামের সর্দার বাড়ির এক ছেলেকে মারধর করে স্থানীয় কয়েক কিশোর বা যুবক। ওই ঘটনার ক্রোধ থেকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে সর্দার বাড়ির ছেলেরা হাজীগঞ্জ বাজারে টোরাগড় গ্রামের অপর এক ছেলেকে পেয়ে মারধর করে। বিষয়টি জানতে পেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টোরাগড়ের কয়েকজন কিশোর একত্রিত হয়ে আবারও সর্দার বাড়ির দুজনকে মারধর করে। এতেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এই ঘটনায় দুই গ্রামের কিশোর ও যুবকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যা বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। দুদিন রাতেই সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে দুদিনের সংঘর্ষে হাজীগঞ্জ বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল ও কাচের বোতল নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়। এতে দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় পথচারীসহ আহত হন অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি। এর মধ্যে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত কয়েকজনকে কুমিল্লা ও ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
দুদিনের এ সংঘর্ষের ঘটনায় ফেসবুকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দোষারোপ এবং সংঘর্ষে ২/৪/৬/১০ নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করে বিভিন্ন পোস্ট দিতে গেছে বহুজনকে। তবে দুই পক্ষের লোকজন বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থক হলেও দলীয় কোনো কারণে এ সংঘাত হয়নি এবং এই সংবাদ লিখা পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। আহতদের মধ্যে সাইমন নামের এক কিশোরের অবস্থা আশংকাজনক। তার বাড়ি পৌর এলাকার বিলওয়াই গ্রামে। বিষয়টি তার পরিবার নিশ্চিত করেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন সূত্রেও কোনো মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
বিষয়টি বিএনপিকেন্দ্রিক দলীয় কিছুই না এটা নিশ্চিত করেন সদ্য সাবেক উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম. এ. রহিম পাটওয়ারী, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আকতার হোসেন দুলাল ও পৌর যুবদলের সদস্য সচিব বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী। তারা বলেন, টোরাগড় ও মকিমাবাদ গ্রামের কয়েকজনের মধ্যে বিবাদের কারণে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এখানে দলীয় কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক জানান, সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বর্তমানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজমান। সংঘর্ষে আহতের খবর পাওয়া গেলেও কেউ নিহত হয়েছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।