শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিরোধের জের

পুরাণবাজারে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ঝরে গেলো তাজা প্রাণ, পুলিশসহ আহত ২৫

মোহাম্মদ আলী মাঝির নির্দেশে তার ছেলে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে : নিহতের পিতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥
পুরাণবাজারে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ঝরে গেলো তাজা প্রাণ, পুলিশসহ আহত ২৫

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে স্থানীয় যুবকদের দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে আল-আমিন খান (৩২) নামে এক নিরীহ যুবক মারা গেছে। সংঘর্ষের সময় দোকানপাটে হামলা-ভাংচুর, বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ও কাচের বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় পুলিশের ৩ সদস্যসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে।

নিহত আল-আমিন খান (৩২) পৌর ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঃ মজিদ খান ডেঙ্গুর মেজো ছেলে। পেশায় তিনি অটোচালক। তার দুটি কন্যা শিশু রয়েছে। এই সংঘর্ষের ঘটনা সদ্য সমাপ্ত সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধের জের বলে নিহতের পরিবার এবং পুরাণবাজারবাসী দাবি করেছেন। এদিকে নিহতের পিতা আবদুল মজিদ খান ডেঙ্গু দাবি করেছেন, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী মাঝির নির্দেশে তার ছেলে সজিব মাঝি গুলি করে আমার ছেলে আল-আমিনকে হত্যা করেছে। অপরাধ হলো আমরা কেনো উপজেলা নির্বাচনে মোহাম্মদ আলী মাঝির ছেলে রাকিব মাঝির নির্বাচন করলাম না।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে তিন পুলিশ ও তিন যুবক চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন স্বপন, আল-আমিন ও মনিরুল। রাত সাড়ে নয়টা থেকে পৌনে এগারোটা পর্যন্ত পুরাণবাজার ম্যারকাটিজ রোড পলাশের মোড় ও নিতাইগঞ্জ সড়কে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষ নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ নেতা আইয়ুব আলী বেপারীর দোয়াত-কলম মার্কার, অপর পক্ষ করে পৌর প্যানেল মেয়র যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী মাঝির ছেলে রাকিব মাঝির আনারস মার্কার। ওই নির্বাচনের পর থেকে এ এলাকার অনেকের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ দ্বন্দ্বের জেরই এই সংঘর্ষের ঘটনা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনার রাতে মধুসূদন হাইস্কুল মাঠে ম্যারকাটিজ রোডের ছেলেরা আড্ডা দিচ্ছিলো। ওই সময় নিতাইগঞ্জ এলাকার একদল যুবক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে।

এ ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে ওই দুই এলাকার যুবকদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় উভয় গ্রুপ দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের উপর হামলা চালায় এবং আশপাশের বেশ কিছু দোকানপাটেও হামলা চালায়। ওই দুই সড়কের মাঝামাঝি পলাশের মোড় সংঘর্ষের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়।

নিতাইগঞ্জ এবং ম্যারকাটিজ রোডের দুটি গ্রুপের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী চলে এ সংঘর্ষ। এ সময় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় দুদিকের যানবাহন চলাচল।

খবর পেয়ে প্রথমে পুরাণবাজার ফাঁড়ি পুলিশ সংঘর্ষে লিপ্তদের নিবৃত করার চেষ্টা করে। তাতেও সংঘর্ষ না থামায় চাঁদপুর সদর মডেল থানাসহ অন্যান্য পুলিশ ফোর্স যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে। এরপরই ওই এলাকার সংঘাতময় পরিস্থিতি শান্ত হয়। সংঘর্ষে লিপ্ত সবাই সরকার দলীয় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী বলে জানা যায়। সংঘর্ষ চলাকালে মাথার পেছনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আল-আমিন মারা যায়। আল-আমিনের মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্নকে গুলি বলে মন্তব্য করেছেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মহসিন আলম।

মঙ্গলবার রাতে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ ওমর ফারুক সবুজ বলেন, মাথায় বুলেট ইঞ্জুরির কারণে ওই যুবক নিহত হতে পারেন। কেননা মাথায় অনেকটা রক্তক্ষরণ হয়েছে।

পরিস্থিতি থমথমে হওয়ায় হাসপাতালে এসে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, আমরা পুরাণবাজারে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। ওখানের উত্তপ্ত পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনতে একপর্যায়ে পুলিশকে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে গুলি ছোঁড়া হয়নি। আমরা অভিযান চালাচ্ছি এবং ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে দোষীদের দ্রুত আটক করতে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এদিকে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) রাশেদ চৌধুরী, সদর মডেল থানার ওসি শেখ মহসীন আলমসহ অন্যরা।

জেলা পুলিশের ওই কর্মকর্তারা জানান, পুরাণবাজারের দুটি গ্রুপের মধ্যে আগে থেকেই ঝামেলা ছিলো। এরপর তারা মারামারিতে লিপ্ত হয়। পুলিশ টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তদন্ত হচ্ছে। যারাই এর সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পুরাণবাজারে এর আগেও এলাকার আধিপত্য নিয়ে একই দলের রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে চলা স্থানীয়দের মধ্যে কয়েক দফা মারামারি হয়।

২০২০ সালের ২ জুলাই সংঘটিত দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শামীম গাজী (২৬) নামে এক আবাসিক হোটেল কর্মচারী যুবক নিহত হয়। এবার মারামারিতে ঝরে গেলো আরেক যুবকের প্রাণ।

পুরাণবাজারের অধিকাংশ পাড়া-মহল্লা ও এলাকায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি হচ্ছে এবং তাদের প্রভাব জানান দিতে মাদক, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে এবং অনেকে দলবল নিয়ে নিরীহ মানুষের উপর জুলুমণ্ডঅত্যাচার, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাচ্ছে। মুষ্টিমেয় চিহ্নিত কিছু লোক জেলার নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী অপরাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে এলাকার সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে।

এদিকে ঘটনার রাতেই চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী মাঝির বাড়িতে এবং তার চানাচুরের কারখানায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।

এ সময় প্যানেল মেয়র ও তার ছেলেরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। পুলিশ বাসা থেকে পৌরসভার এক স্টাফ ও প্যানেল মেয়রের ছোট ছেলের এক বন্ধুকে এবং চানাচুর কারখানা থেকে তিনজন কর্মচারীসহ পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

নিহত আল-আমিনের লাশ পোস্টমর্টেম শেষে বুধবার দুপুরে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাদ আসর পুরাণবাজার বড় মসজিদের সামনে জানাজার নামাজ শেষে মধ্য শ্রীরামদী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জানাজাপূর্বক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, প্রচার সম্পাদক হাসান ইমাম বাদশা, সদস্য মোঃ আইয়ুব আলী বেপারী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবুল, চাঁদপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও চেম্বারের সিনিয়র পরিচালক সালাউদ্দিন মোঃ বাবর, পৌর প্যানেল মেয়র অ্যাডঃ হেলাল হোসাইন ও নিহত আল-আমিন খানের পিতা আব্দুল মজিদ খান ডেঙ্গু।

এ সময় সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে ডেঙ্গু খান বলেন, মোহাম্মদ আলী মাঝির ছেলে সজীব মাঝি গুলি করে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমাকেও হুমকি দেয়া হয়। আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা কোনো আইয়ুব আলী বেপারীর নির্বাচন করলাম সেজন্যে মোহাম্মদ আলী মাঝি তখন আমাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। সেটাই এখন আমার ছেলেকে মেরে দেখাল।

তদন্তসাপেক্ষে আমি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।

জানাজা ও দাফনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মোঃ শেখ মহসিন আলম জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তদন্ত চলছে এবং মামলা প্রক্রিয়াধীন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়