শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা
  •   এক বছরের মধ্যে ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা
  •   হাজীগঞ্জের সকল মৃত্যুর খবরই গুজব!
  •   দিনমজুরকে জবাই করে হত্যা, ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
  •   অবশেষে চাঁসক সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাছানকে বদলি

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৪৪

হাজীগঞ্জে শিশু সন্তান কোলে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে গৃহবধুর আত্মহত্যা

কামরুজ্জামান টুটুল
হাজীগঞ্জে শিশু সন্তান কোলে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে গৃহবধুর আত্মহত্যা

আবদুর রহমান নামের ১৬ মাসের এক পুত্র সন্তানকে কোলে করে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে তাহমিনা আক্তার রিমা (২৪) নামের এক গৃহবধু আত্মহত্যা করেছে। ২৪ এপ্রিল বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চাঁদপুর-লাকসাম রেলসড়কের হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৬নং ওয়ার্ডের মকিমাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

তাহমিনা উপজেলার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের ধড্ডা গ্রামের দেওয়ানজী বাড়ির রফিকুল ইসলামের মেয়ে ও বাকিলা ইউনিয়নের সন্না গ্রামের হাওলাদার বাড়ির কুয়েত প্রবাসী মোঃ মাসুদুজ্জামান হাওলাদারের স্ত্রী। এই দম্পতির ৪ বছর বয়সী আরও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহের জেরে গত ২৮ মার্চ রিমা তার স্বামী বাকিলা ইউনিয়নের সন্না গ্রামের হাওলাদার বাড়ির নূরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মাসুদুজ্জামান হাওলাদার (৪০), তার ভাসুর মামুন হাওলাদার (৫৫) ও মাহবুব হাওলাদার (৫০) বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রিমার বাবা তার স্বামী মাসুদুজ্জামানকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে কুয়েত পাঠায়। বিদেশ যাওয়ার পর থেকে মাসুদ রিমাকে ভরণ পোষণ ও তাদের (স্বামী) বাড়িতে না দিয়ে মোবাইল ফোনে সবসময় অশ্লিল ভাষায় গালমন্দ করেন এবং হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে রিমা বাধ্য হয়ে সম্প্রতি সময় মাসুদজ্জামানকে তালাক দেয়।

তালাকের পর স্বামী মাসুদুজ্জামান দেশে এসে রিমাকে ইমোতে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ ও প্রাণনাশ এবং স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমমি-ধমকি দেন। এ ঘটনায় ভাসুরদের জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো রিমাকে হুমকি-ধমকি দেন বলে রিমার পরিবারের সদস্যরা জানান।

এক পর্যায়ে অপমান-অপদস্থ ও হুমকি-ধমকি সহ্য করতে না পেরে তার ষোল মাস বয়সি শিশু সন্তান আবদুর রহমানকে নিয়ে রিমা আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। তবে রিমা আত্মহত্যার পূর্বে তার ব্যবহৃত (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) ফেইসবুকে ‘আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়, তার মেয়েকে সবাই যেনো দেখে রাখে’ উল্লেখ করে একটি পোস্ট দিয়েই ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিষয়টি হাজীগঞ্জে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।

রিমার দায়ের করা অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি সুরাহার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ (বাকিলা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহাজাহন) অভিযুক্ত মাসুদুজ্জামান পরিবারের সাথে বসার চেষ্টার করা হয়। কিন্তু তারা রাজি হননি।

তিনি আরো বলেন, এক সপ্তাহ পূর্বে মাসুদুজ্জামান দেশে আসেন। কিন্তু সে বাড়িতে না এসে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকার কারণে বিষয়টি সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে জানতে পারি সে আবার প্রবাসে চলে গেছেন।

এ বিষয়ে মাসুদুজ্জামানের ওয়ার্ড বাকিলা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহজান বলেন, এসআই আব্দুর রহমান বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি তার (মাসুদ) সাথে কথা বলেছি। কিন্তু একবার কথা বলার পর সে আমার মোবাইল নম্বরটি ব্লক করে দেয়। যার কারণে আমি তার সাথে কথা বলতে পারিনি।

তিনি আরো বলেন, মাসুদের (মাসুদুজ্জামান) বাড়িতে যাওয়ার পর তার বড় ভাইদের বাড়িতে না পাওয়ায় মোবাইল নম্বর চেয়েছি, কিন্তু তাদের স্ত্রীরা মোবাইল নম্বর দেয়নি। যার কারণে তাদের সাথেও কথা বলতে পারিনি।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, আত্মহত্যার ঘটনাটি যেহেতু রেল লাইনে ঘটেছে, তাই এ বিষয়ে জিআরপি পুুলিশ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এসআই আবদুর রহমানের সাথে কথা বলেছি। সে বলেছে বিবাদীদের বাড়িতে গিয়েছে।

চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাসুদুর রহমান জানান, আমি ঘটনাস্থলে এসেছি। আমরা লাশ দুটির সুরতহাল তৈরি করেছি এবং ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়