শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৫৮

ফলোআপ

হাজীগঞ্জের সেই রিমাকে নিয়ে স্বামী আর বাবার পরিবারের রশি টানাটানি

হাজীগঞ্জ ব্যুরো
হাজীগঞ্জের সেই রিমাকে নিয়ে স্বামী আর বাবার পরিবারের রশি টানাটানি

হাজীগঞ্জে কোলের শিশু সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় তাহমিনা আক্তার রিমার বাবার পরিবার ও তার সদ্য তালাকপ্রাপ্ত স্বামী মাসুদুজ্জামান হাওলাদারের মাঝে পরস্পর রশি টানাটানি শুরু হযেছে। এ ঘটনায় রিমার বাবার পরিবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করলেও এখনো কোনো আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করেনি পরিবারটি। অপর দিকে মাসুদুজ্জামান তার সাবেক স্ত্রী রিমাকে দোষারোপ করে বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছেন গণমাধ্যমের কাছে।

রিমার দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমাকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে কুয়েতে পাঠানো হয়েছে। এমন অভিযোগ অস্বীকার করে মাসদুজ্জামান বলেন, আমি যখন বিয়ে করি, তখন তাদের (শ^শুর) টিনের দোচালা ঘর ছিলো, আমি টাকা দিয়ে তাদেরেক টিনশেড বিল্ডিং করে দেই। অভিযোগে আমার দুই ভাইকে আসামি করা হয়েছে। অথচ শ^শুর বাড়ির কারণে গত পাঁচ বছর ধরে ভাইদের সাথে আমি কোনো সম্পর্ক রাখি না।

মাসুদুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, শাশুড়ি (তাহেরা আক্তার) বলেছেন আমাকে হাজীগঞ্জে বাড়ি করে দিবেন। তার কথায় আমি শাশুড়ি ও স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্টে কুয়েত থেকে নিয়মিত টাকা পাঠিয়েছি। কিন্তু তিনি আমাকে বাড়ি করে দেননি। মাসুদুজ্জামান তার সাবেক শাশুড়ি ও স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্টে মোট কথা টাকা পাঠিয়েছেন, তা না জানালেও ৫ লাখ ৯১ হাজার ৯০৯ টাকার একটি স্ট্যাটমেন্ট গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।

মাসুদুজ্জামান আরো বলেন, আমি রিমাকে হাজীগঞ্জ বাজারে বাসা নেয়ার জন্যে টাকা পাঠাই। ওই টাকা দিয়ে রিমা বাসাভাড়া নেয় এবং আসবাবপত্র ও ফ্রিজসহ গৃহস্থালি মালামাল কিনে। পরে বাসা ছেড়ে দেবার কারণে আমার টাকায় কেনা সেসব আসবাবপত্র সে তার বাবার বাড়িতে নিয়ে যায়। আমার সেই মালামালসহ বাড়ি করার জন্যে আমি যে টাকা পাঠিয়েছি, ওই টাকাই বা কোথায়? নিশ্চয়ই আমার শ^শুর-শাশুড়ির কাছে।

সদ্য সাবেক জামাতা মাসুদুজ্জামানের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তাহমিনা আক্তার রিমার বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, আামার মেয়ে (রিমা) যেসব কথা উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দিয়েছে, সবকিছু সত্য ও সঠিক। মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে নাতিকে নিয়ে রিমা আত্মহত্যা করেছে। তিনি বলেন, আমরা জামাইকে (মাসুুদুজ্জামান) ৫ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছি। আর আমি টিনশেড বিল্ডিং করি আমার শ^শুর (রিমা নানা)-এর বাড়ির দেওয়া টাকা দিয়ে।

টাকা পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, রিমার বিয়ে হয়েছে ৫ বছরের বেশি। যদি জামাই টাকা না পাঠাতো, তাহলে রিমা ও তার দুই সন্তান কী খেয়ে বেঁচেছিলো? তবে সংসার খরচের বাইরে জামাই (মাসুদুজ্জামান) অতিরিক্ত কোনো টাকা পাঠিয়েছে কিনা, তা আপনারা দেখেন? বরং সংসারের জন্যে যা প্রয়োজন তাও সে ঠিকমতো দিতো না। এছাড়া কারণে-অকারণে সে আমার মেয়েকে ফোনে মানসিক নির্যাতন করেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল বুধবার বিকেলে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৬নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ এলাকায় তাহমিনা আক্তার রিমা তার ষোলমাস বয়সী শিশু সন্তান আব্দুর রহমানকে নিয়ে সাগরিকা টেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে এবং বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের ধড্ডা দেওয়ানজি বাড়ির কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

রিমার সিদরাতুল মুনতাহা নামের সাড়ে চার-পাঁচ বছর বয়সী আরও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। পারিবারিক কলহের জেরে গত ২৮ মার্চ রিমা তার স্বামী মাসুদুজ্জামান হাওলাদার (৪০), তার ভাসুর মামুন হাওলাদার (৫৫) ও মাহবুব হাওলাদার (৫০)-এর বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আরো আগে রিমা তার স্বামীকে তালাক পাঠায়।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রিমার বাবা তার স্বামী মাসুদুজ্জামানকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে কুয়েত পাঠান। এরপর পারিবারিক কলহের জেরে রিমাকে ফোনে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ এবং হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন মাসুদুজ্জামান। এক পর্যায়ে রিমা বাধ্য হয়ে তাকে তালাক দেন। তালাকের পর মাসুদুজ্জামান দেশে এসে ইমুতে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ ও প্রাণনাশ এবং স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমকি-ধমকি দেন। এ ঘটনা ভাসুরদের জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো রিমাকে হুমকি-ধমকি দেন বলে রিমার পরিবারের সদস্যরা জানান।

এক পর্যায়ে অপমান-অপদস্থ ও হুমকি-ধমকি সহ্য করতে না পেরে তার ষোল মাস বয়সী শিশু সন্তান আবদুর রহমানকে নিয়ে রিমা আত্মহত্যার পথ বেচে নেয়। তবে রিমা আত্মহত্যার পূর্বে তার ব্যবহৃত ফেসবুকে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) ‘আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়, তার মেয়েকে সবাই যেনো দেখে রাখে’ উল্লেখ করে একটি পোস্ট দিয়েই ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়