প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩, ১৩:৩৫
হাজীগঞ্জে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা, ধর্ষক ও সালিসসহ আটক ৫

রায়হান (১৫) নামের এক কিশোরের ধর্ষণে ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরী (১৪) দেড় মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। এ ঘটনায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় দফারফার পরেই পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরে অভিযুক্ত কিশোর, কিশোরের দুই বোন, চাচাত ভাইসহ এক সালিসকে গ্রেফতার করে। একই ঘটনায় আরো কয়েক সালিসকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাটি হাজীগঞ্জের হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের লাওকোরা গ্রামের। কিশোরী একই বাড়ির ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। বাড়ির সম্পর্কে উভয়ে চাচা-ভাতিজি। আসামীরা হলেন : একই গ্রামের সর্দার বাড়ির সেরাজল হকের ছেলে রায়হান (১৫), রাযহানের দুই বোন মোসাঃ হাজেরা বেগম (২৫), মোসাঃ খালেদা আক্তার (২২), হাছান সর্দারের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩০) ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মৃত অলি উল্লাহর ছেলে রহমত উল্লাহ্ (৪০)। এদের মধ্য প্রধান আসামী রায়হান ছাড়া বাকিদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলা করার দিনেই পুলিশ প্রধান আসামীসহ সবাইকে গ্রেফতার করে।
|আরো খবর
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২১ মার্চ বিকেলের দিকে নিজ বাড়িতে কিশোরী ও কিশোর বাড়িতে ধানের খড় (ক্ষের)-এর কাজ করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটায়। পরে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসলে নড়চড়ে বসে কথিত সালিসদাররা। এদিকে এই ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দেবার জন্যে স্থানীয় ইউপি সদস্য রহমত উল্যাহ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাইয়ুম বেপারীর নেতৃত্বে শুক্রবার ১২ মে বিকেলে একটি সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে রফাদফা হয়। কিশোর রায়হান স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে চলতি শিক্ষাবর্ষে আর মাদ্রাসায় যায়নি। কিশোরী স্থানীয় অপর একটি মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও দুই পরিবারের লোকজনকে নিয়ে সালিসি বৈঠকে বসেন ইউপি সদস্য রহমত উল্লাহসহ স্থানীয় একটি চক্র। ওই বৈঠকে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করে টাকার বিনিময়ে রফাদফা এবং দুই পক্ষের কাছ থেকে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীর চিকিৎসার জন্যে অভিযুক্ত রায়হানের পরিবারকে নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই বৈঠকে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাইয়ুম বেপারী ও কুদ্দুস সর্দারসহ অন্যান্য সালিস ও দুই পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরীর স্বজনরা জানান, মেম্বার (ইউপি সদস্য)সহ সবাই চেয়েছে বিষয়টির সমাধান হোক। তাই তাদের কথায় আমরা রাজি হয়েছি।
ইউপি সদস্য রহমত উল্যাহ্ জানান, উপর মহলের সঙ্গে কথা বলে এবং এলাকার শান্তির জন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিসি বৈঠক করা হয়েছে। তবে উপর মহলের কে বা কার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাইয়ুম বেপারী সালিসি বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত শুক্রবার মেম্বার (ইউপি সদস্য) রহমত উল্যাহ তাকে নিয়ে ওই বাড়িতে যায়। এরপর মেম্বারের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের চারজন সালিস ও দুই পরিবারের লোকজন বসে বিষয়টির সমাধান করেন। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়ে উভয় অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজি হয়। তাই আমি তাদের থানা বা কোর্টে (আদালত) যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু মেম্বার দুই পক্ষের লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা বিষয়টির সমাধান করে নেয়। পরে শুনেছি মেয়ের চিকিৎসার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। ওই সময়ে আমি ছিলাম না।
ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি এমনটি হয়ে থাকে, তাহলে ইউপি সদস্য রহমত উল্লাহ এমন ঘটনার সমাধান না করে, ধর্ষিতার পরিবারকে আইনী সহায়তা দিতে পারতেন।
হাজীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম জানান, কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, অন্য সালিসদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে, প্রয়োজনে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ জানান, এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধন) ২০০৩-এর ৯(১) তৎসহ ২০২/২১২/২১৩ মামলা হয়েছে। মামলায় সকল আসামীকে আটক করা হয়েছে।