প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:২৫
সেলিম খানের জামিন মঞ্জুর
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় চাঁদপুরের আলোচিত চেয়ারম্যান সেলিম খানকে জামিন দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
|আরো খবর
তবে এই জামিনে কিছু শর্ত দিয়েছেন। আসামির পাসপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে এবং মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হওয়া পর্যন্ত এই জামিন বহাল থাকবে।
গত বছর ১২ অক্টোবর সেলিম খানকে এই মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সেলিম চেয়ারম্যান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতের নির্দেশক্রমে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। একই সঙ্গে জামিনের আবেদন করেন। ওই দিন বিস্তারিত শুনানি শেষে আদালত সেলিম চেয়ারম্যানকে জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে যেমন আছে তেমন থাকার অনুমতি দেন।
পরে ১২ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। ওই দিন জামিন আবেদনের ওপর পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে সেলিম চেয়ারম্যানকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর বেশ কয়েকবার তাঁর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়।আজ মামলার ধার্য তারিখে আবার জামিনের আবেদন করা হয়। সেলিম খানের পক্ষে জামিন চেয়ে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আদালতে স্বেচ্ছায় এসেছিলেন সেলিম খান। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জামিনে পালাবেন না।
শাহিনুল ইসলাম আরও বলেন, আসামি একটি টাকাও অবৈধভাবে অর্জন করেননি। তিনি কোনো তথ্য গোপন করেননি। তিনি নিয়মিত আয়কর দিয়ে আসছেন। তাঁর নামে সরকারি চেক ছিল কোটি কোটি টাকার। সরকার টাকা দিয়েছে তাঁর জমি অধিগ্রহণ করে। ঠিকাদারি করে সরকারি তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা পান। এই টাকা কীভাবে অবৈধ হয়?
আইনজীবী আরও বলেন, যে সম্পদ সেলিম খান তাঁর সম্পদ বিবরণীতে দেখিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ বৈধ আয়ের সম্পদ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের হিসাবে গরমিল করেছে।
দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ৩৪ কোটি টাকারও বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদক অনুসন্ধান শেষে এই অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মামলা করেছে। মামলাটির তদন্তাধীন। প্রথমে তাঁকে হাইকোর্ট আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পরে আরেকটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। দুদক আসামি সেলিম খানের আগাম জামিনের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে আবেদন করে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি সেলিম খানের আগাম জামিনের আদেশ স্থগিত করেন। গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন চাইলে তাঁকে চার সপ্তাহের জন্য জামিন দেওয়া হয়। পরে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন। একই সঙ্গে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেলিম খানকে ঢাকার মহানগর দায়রা আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ সেলিম খান আত্মসমর্পণ করেন।
গত ১ আগস্ট সেলিম খানের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ এই মামলা করে দুদক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সেলিম খান অবৈধ উপায়ে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে অর্জন করে নিজ ভোগদখলে রেখেছেন। এ ছাড়া তিনি ৬৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সেলিম খানের ইউনিয়নের মেঘনা পারে একটি এলাকা নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান সেলিম খান, তাঁর ছেলেমেয়েসহ অন্য জমির মালিকেরা অস্বাভাবিক মূল্যে দলিল তৈরি করেছেন। ফলে ওই জমি অধিগ্রহণে সরকারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি টাকা।
জমির অস্বাভাবিক মূল্য নিয়ে জেলা প্রশাসকের তদন্তে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করার পরিকল্পনা ধরা পড়ে। পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক; যা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এর আগে চাঁদপুর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উপস্থাপন করায় চেয়ারম্যান সেলিম খানকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে কয়েক বছর ধরে চাঁদপুরের নদী অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ওই চেয়ারম্যানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এ কারণে তিনি 'বালুখেকো' সেলিম খান নামেও পরিচিত।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য তাঁকে জরিমানাও করা হয়।