মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৩১

ঘোড়ায় চড়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যুবক!

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হাজারো প্রতিবাদী জনতা

মো. জাকির হোসেন
ঘোড়ায় চড়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যুবক!
ঘোড়ায় চড়া যুবক, হাতে ফিলিস্তিন পতাকা।ছবি:সংগৃহীত

ইসরায়েলের বর্বরোচিত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত হলো বিশাল ‘মার্চ ফর গাজা’। সকাল থেকেই জনতার ঢল নামতে থাকে এই ঐতিহাসিক উদ্যানে। তবে সকাল থেকেই এক ব্যতিক্রমধর্মী চিত্র নজর কেড়েছে সবার — ঘোড়ায় চড়ে হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে এক যুবক হাজির হন গণজমায়েতে।

ঘোড়সওয়ার সেই যুবক, প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠলেন সকাল ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দেখা মেলে সেই যুবকের, যিনি ঘোড়ায় চড়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে এসেছেন। ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা হাতে তিনি যখন উদ্যানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন উপস্থিত হাজারো মানুষ তাঁকে ঘিরে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে —“ফিলিস্তিনের মানুষ একা নয়!”, “গাজার শিশুরা আমাদের সন্তানের মতো!” সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যে সেই ঘোড়সওয়ার যুবকের ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। প্রতিবাদী ভঙ্গিতে তিনি জানান,"আমি এসেছি গাজার শহীদ শিশুদের পাশে দাঁড়াতে। এ ঘোড়া আমার প্রতীক—প্রাচীন কালের মুজাহিদদের মতো আমরা প্রতিবাদ জানাতে এসেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে।" সমবেত মানুষের মূল বার্তা: গণহত্যার বিরুদ্ধে ঈমানি অবস্থান

বিকেল ৩টায় শুরু হয় মূল কর্মসূচি। হাজারো মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, জাতীয় ও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে সমবেত হন সেখানে। “Free Palestine”, “Stop the Genocide in Gaza”, “Boycott Zionism” — এমন সব লেখা ছিল প্ল্যাকার্ডগুলোতে। কেউ কেউ শিশুকে কোলে নিয়ে এসেছেন, কেউবা স্ত্রীর হাত ধরে এসেছেন প্রতিবাদের ভাষা হতে।

চার স্তরের দাবি ও অঙ্গীকার

এ আয়োজনে পাঠ করা হয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্র, যাতে চার স্তরের দাবি তুলে ধরা হয়—

১. জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি: ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি ও যুদ্ধ থামানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান।

২. মুসলিম বিশ্ব ও ওআইসির প্রতি: ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন, বাণিজ্যিক অবরোধ, গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও ভারতের ওয়াকফ আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিবাদ।

৩. বাংলাদেশ সরকারের প্রতি: পাসপোর্টে ‘Except Israel’ পুনঃস্থাপন, সকল ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল, রাষ্ট্রীয়ভাবে বর্জন নীতি গ্রহণ এবং শিক্ষানীতিতে আল-আকসা ও ফিলিস্তিন অন্তর্ভুক্তি।

৪. নিজেদের প্রতি অঙ্গীকার: ইসরায়েলি পণ্যের বর্জন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আত্মসচেতন করে গড়ে তোলা, ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং প্রতিরোধচেতনাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া।

রাজনীতিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টদের বার্তা

‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিকে ঘিরে শুক্রবার থেকেই ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান, অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লিয়াকত আলী লাকী, ক্রিকেটার তামিম ইকবালসহ অনেকে গাজার জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

তাদের মতে, “গাজা এখন শুধুই এক ভূখণ্ড নয়—এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঈমানদারদের প্রতিরোধের প্রতীক।” গণমানুষের অংশগ্রহণ: লাখো জনতার ঢল

আয়োজকরা দাবি করেন, এ কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে লাখো মানুষ অংশ নিয়েছেন। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর, নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা থেকে মিছিল নিয়ে সক্রিয়ভাবে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

অনেকে জানান, “নীরবতা এখন পাপ। গাজার জন্য আমাদের কণ্ঠ, আমাদের অবস্থান দরকার। এই গণজমায়েত তারই প্রমাণ।”

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়