সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৫:২৪

অলিপুরের তিন শতাধিক বছরের পুরানো দুটি মসজিদ অযত্ন-অবহেলায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে

কামরুজ্জামান টুটুল
অলিপুরের তিন শতাধিক বছরের পুরানো  দুটি মসজিদ অযত্ন-অবহেলায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে

হাজীগঞ্জের অলিপুরে তিন শতাধিক বছরের পুরানো মোগল বাদশা আলমগীর ও শাহ সুজার নামে তৈরি করা দুটি মসজিদ অযত্নে আর অবহেলায় হারাতে বসেছে ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সৌন্দর্য। দুটি মসজিদের কিছুটা দূরত্বে প্রায় মাঝামাঝি স্থানে শায়িত আছেন ৪ জন অলি তথা আওলিয়া। ইতোমধ্যে মসজিদ দুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। মূলত এই আওলিয়াগণের নামানুসারে ঐ গ্রামের নাম অলিপুর গ্রাম। ডাকাতিয়া নদীর পাড় ঘেরা অলিপুর গ্রামটি হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫ নং সদর ইউনিয়নে। মসজিদ দুটির ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন, আর সংস্কার করতে হলে প্রয়োজন সরকারের সুদৃষ্টি।

বিভিন্ন ইতিহাস ও স্থানীয় বয়োবৃদ্ধদের কাছ থেকে জানা যায়, মসজিদগুলো এ উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামলের পূর্বে মোগল রাজত্বকালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। ইতিহাস ঐতিহ্যে জেলার তথ্য বাতায়নে এ দু মসজিদের নাম থাকলেও এতে স্থানীয় প্রশাসন বা কুমিল্লা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কোনো সুদৃষ্টি নেই ।

স্থানীয়রা জানান, আনুমানিক ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বাপর মসজিদ দুটি নির্মাণ করা হয়। বড়ো তথা আলমগীরি মসজিদের দেয়ালে ফার্সি ভাষায় বাদশাহ আওরঙ্গজেব তথা আলমগীরের নাম উল্লেখ রয়েছে। একটি মসজিদ থেকে আরেকটি মসজিদের দূরত্ব প্রায় ৫ শ' গজ।

সরজমিনে দেখা যায়, শাহী বা আলমগীরি মসজিদের মূল স্থাপনা ৪টি পিলারের ওপর দাঁড়ানো থাকলেও গম্বুজ রয়েছে ৫ টি। মূল ও বড়ো গম্বুজটি মাঝে আর চার কোণায় চারটি ছোট গম্বুজ। প্রতিটি দেয়ালের উচ্চতা প্রায় ১৬ ফুট। ছোট-বড় মিলিয়ে দরজা রয়েছে তিনটি।

অপরদিকে শাহ সুজা মসজিদ ৩ টি গম্বুজের ওপর দাঁড়ানো। মাঝখানের মূল অংশে বড়ো ধরনের একটি গম্বুজ আর তার দু পাশে ছোট দুটি গম্বুজ রয়েছে।

এ মসজিদে একসাথে শতাধিক মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। দেয়ালের উচ্চতা প্রায় ১৬ ফুট।

কুমিল্লা শহরের মোগলটুলীতে ১৬৫৮ সালে শাহ সুজা মসজিদ আর অলিপুরের শাহ সুজা মসজিদ একই ব্যক্তির নামে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র ও বাংলার সুবেদার ছিলেন শাহ সুজা। কথিত আছে, ত্রিপুরা জয় করে শাহ সুজা তা স্মরণীয় করে রাখতে এই মসজিদ নির্মাণ করেন।

চাঁদপুর জেলার ব্র্যান্ডিং বুক 'ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে' এই দুটি মসজিদের নির্মাণকালের হিসেবে একটি থেকে আরেকটি ৫৪ বছরের প্রাচীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 'চাঁদপুর পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য' নামক গ্রন্থের ১৩১ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে, শাহী (বড়ো) মসজিদটি বাদশা আওরঙ্গজেবের শাসনামলে স্থানীয় প্রশাসক আব্দুল্লাহ কর্তৃক ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে (১১০৪ হিজরিতে) নির্মাণ করা হয় অর্থাৎ পলাশীর যুদ্ধের অর্ধশতাব্দীরও অধিক পূর্বে। এ মসজিদটি নির্মাণের ৫৪ বছর পূর্বে ১০৭৭ হিজরিতে, ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে ছোট তথা শাহ সুজা মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। কুমিল্লা জেলার ইতিহাস গ্রন্থের ২৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত তথ্য থেকে জানা যায়, সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র শাহ সুজা এ মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে এটি শাহ সুজা মসজিদ নামে সমধিক পরিচিত। মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট ও প্রস্থ ২৪ ফুট এবং দেয়ালের ঘনত্ব বা পুরুত্ব পাঁচ ফুট। উল্লেখ্য, শাহ সুজা এই মসজিদটি নির্মাণের দশ বছর পর ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লার মোগলটুলীতে প্রায় অনুরূপ, তবে এর চাইতে বড়ো একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

শাহ সুজা জামে মসজিদের মুসল্লি স্থানীয় মনির হোসেন (৭০) জানান, কয়েক বছর আগে এ মসজিদটি স্থানীয়ভাবে সংস্কার করা হয়। আর এ কাজ করতে গিয়ে এর মূল কারু শিল্প অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে।

শাহী বা আলমগীরি মসজিদের ইমাম হাফেজ জিকরুল্লাহ্ জানান, প্রায় ৩৫/৪০ বছর আগে সরকারিভাবে একবার মসজিদটি সংস্কার করা হয়। তখন এর মূল সৌন্দর্যের কারু কাজ নষ্ট করে ফেলা হয় । মসজিদের গায়ে আনারস, ফুলসহ বিভিন্ন সৌন্দর্য খচিত কারুকাজ ছিলো। বিদ্যুৎ বিলসহ মসজিদের সকল ব্যয়ভার স্থানীয় মুসল্লিদের পরিশোধ করতে হয়।

স্থানীয় ঠাকুর বাড়ির বাসিন্দা ও মসজিদের মুসল্লি আব্দুল ওহাব নুরুল আমিন পাঠান জানান, এ মসজিদগুলো মোগলরা নদী পথে কুমিল্লায় ভ্রমণে এসে নির্মাণ করেন। দু মসজিদের মাঝামাঝি স্থানে ৪ অলির মাজার রয়েছে। এ অলিগণের মাজারের পাশে একটি বিশালাকৃতির দিঘিও রয়েছে। এ দিঘিতে অলৌকিক বেশ কিছু ঘটনা ঘটেতো আগে। এখানে এক সময় গভীর রাতে অনেক উচ্চ স্বরে কোরআন পাঠ আর জিকিরের শব্দ ভেসে আসতো। ঠিক কারা কোথায় কোরআন পাঠ করতো তা’ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যেতো না। এখন এ দুটি মসজিদ ও ৪ অলির মাজারকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো বরাদ্দ হয় কিনা প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন বলেন, মসজিদগুলোর সংস্কারের জন্যে বরাদ্দ চাওয়া হবে।

মসজিদ দুটির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রসঙ্গে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, স্থানীয়দের সাথে কথা বলে মসজিদগুলো রক্ষণাবেক্ষণে যা প্রয়োজন তা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়