প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২২, ১২:৫৫
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। যে দিনটি কার্যত বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণার দিন হিসেবে ধরে নেয়া হয়। ১৯৭১ সালের এ দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে উত্তাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধুর সেই জ্বালাময়ী ভাষণে ধ্বনিত হয়েছে, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম'। মূলত জাতির জনকের এ ভাষণের পর থেকেই বাঙালি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্যে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। তাই এ দিনটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। এ দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশ্বব্যাপী। তার কারণ হচ্ছে, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণ ২০১৮ সালে ইউনেস্কোতে 'মেমোরী অব দ্যা ওয়ার্ল্ড' হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি বাঙালির জন্যে বিশাল প্রাপ্তি এবং অত্যন্ত গৌরবের। ১৯৭১ সালের এদিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সামরিক জান্তার শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের পর বাঙালি জাতির চূড়ান্ত মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। অর্থাৎ এ দিনেই তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার সমাবেশে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য আর শোষণের বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার শিকল ভাঙ্গার আনুষ্ঠানিক ডাক আসে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর থেকে। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ের সূচনা হয়।
|আরো খবর
প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সংসদ এবং ১৭ ডিসেম্বর এমএনএ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। ওই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় জনসাধারণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভের আগুনে বাঙালি রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে একাত্তরের ২৬ মার্চ।
প্রকৃতপক্ষে ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয় মিছিল-সমাবেশ, আন্দোলন ও প্রতিরোধ। এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ৭১-এর এই দিনে তথা ৭ মার্চ পুরো জাতি বঙ্গবন্ধুর ঘোষণায় কী আসে তার জন্যে উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছিলো। একটি দৃঢ় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলো এ দিন বাঙালি জাতি।
একাত্তরের ৭ মার্চ ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম জনসমাবেশ ঘটেছিলো বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে। অগণিত মুক্তিকামী মানুষের পদভার ও আকাঙ্ক্ষার কথোপকথনে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলো চারপাশ। আর এজন্যেই সেদিন রেসকোর্স ময়দানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলো, যাদের কণ্ঠে ছিলো শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির দৃপ্ত শ্লোগান। এদিন ঢাকার রাজপথ উত্তেজনায় টানটান হয়ে উঠেছিলো মুক্তিপাগল মানুষের বিক্ষোভ মিছিলে। আর রেসকোর্স ময়দানের সেই জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন বাঙালির জাতীয় মুক্তির ঐতিহাসিক মহাকাব্যের সেই অমর বাণী 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল ঢেউ উঠে রেসকোর্স ময়দানের সেই উত্তাল জনসমুদ্রে। বঙ্গবন্ধু তাঁর এ ঐতিহাসিক ভাষণে সবাইকে দিকনির্দেশনা দিলেন 'তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।' ঘোষণা করলেন স্বাধীনতার রূপরেখা। সেখানে জাতীয় মুক্তির চূড়ান্ত ঘোষণাসহ আন্দোলনের কর্মপন্থা সুনির্দিষ্ট করে দিলেন বঙ্গবন্ধু। মূলত এদিন থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি।
এদিকে ৭ মার্চকে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। ঐতিহাসিক এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
ঐতিহাসিক এ দিনটি স্মরণে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান এবং এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় একই স্থানে আলোচনা সভা। বিকেলে বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং সন্ধ্যায় অথবা সুবিধাজনক সময়ে অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল।