প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:১০
৫০ বছর পুর্বের বিজয়ের মুহূর্তে কথা
পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ করার কথা শুনেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম : সহিদ উল্লা তপদার
আজ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ,মহান বিজয় দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব। আজ থেকে ৫০ বছর পুর্বে তথা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিন কী করেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধারা । ঢাকায় রেসকোর্স মাঠে পাক হানাদাররা মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের হয়তবা অনেকেই সাক্ষী হতে পারেননি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে গৌরব উজ্জ্বল ও দুঃসাহসী ভুমিকার কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু বিজয়ের সেই মুহূর্তের কথা অনেকের মুখে শুনতে পাই না। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মুহূর্তে কথা হয় ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের টানা কয়েকবারের নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির সদস্য এবং সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহিদ উল্লা তপাদারের সাথে।
|আরো খবর
তিনি জানান, ‘২১ নভেম্বর বাংলাদেশের তিন বাহিনী যখন একযোগে পাকবাহিনী বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে । এর ফলে মুক্তিযোদ্ধারাও মাঠে আরো দ্রত পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে একের এক যুদ্ধে জয় লাভ শুরু করে। চাঁদপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধকালিন গুরুত্বপূর্ণ থানা ফরিদগঞ্জ সর্বপ্রথম ২৫ নভেম্বর শত্রু মুক্ত হয়। আমরা ফরিদগঞ্জ থানা সদরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উঠাতে সমর্থ হই। তারপর পাক হানাদাররা পালিয়ে গেলে আমরা পরদির ফরিদগঞ্জের ২৬ নভেম্বর বিকাল ৪টায় লোহাগড় তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হই। ২৭ নভেম্বর চাঁদপুর উদ্দেশ্যে রওনা হই। চাঁদপুর স্টেশনে পাঞ্জাবী কিছু লোকদের সাথে যুদ্ধ করে তাদেরকে প্রতিহত করি। আমরা চাঁদপুরকে মুক্ত করার জন্য সকল মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হই। পরে ৭ ডিসেম্বর পযন্ত জেলার সদরে মুক্তিযুদ্ধাদের একের পর এক আক্রমণে কারণে ৮ ডিসেম্বর ভোর ৪ টায় নদী পথে পাকহানাদার বাহিনী চাঁদপুর থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়।
১০ ডিসেম্বর আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা থাকলে যেতে পারিনি । এর মধ্যে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি,শিক্ষক,সাংবাদিকসহ অসংখ্য লোকদের হত্যা করা রাজাকার ও আলবদর বাহিনী । ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকবাহিনী যখন মিত্রবাহনীর কাছে আত্ম সমর্পণ করলো তখন আমরা চাঁদপুর কলেজে ক্যাম্পে অবস্থান করছিলাম। আত্ম সমর্পনের কথা কানে আসার সাথে সাথে আমরা বিজয় উল্লাসে নেমে পড়ি। মুক্তিযোদ্ধারা কলেজের ক্যাম্পে ফাঁকা আওয়াজ, জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে মুখরিত করে তোলে পুরো এলাকা। পরে বিজয় মিছিলও বের করে আমরা। সেদিনের সেই আনন্দের কথা বলে বোঝানোার সামর্থ নেই। সেই দিনের আনন্দ পাওয়াও বর্তমানে সম্ভব না।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমি মেট্রিক পরীক্ষার্থী ছিলাম। বলতে গেলে টগবগে তরুণ। স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশ প্রেমের মোহে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। প্রতিটি মূহূর্ত কেটেছে মৃত্যুভয় নিয়ে। ফলে দিন যত গড়িয়েছে, আমরা ততো সাহসী ও দুধর্ষ হয়ে উঠে ছিলাম। ১৯৭১ সালে সেদিনগুলোতে আমরা যুদ্ধ করি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তখন আমাদের চিন্তাছিল কিভাবে পাকহানাদার বাহিনীকে পরাজিত করবো। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবো।
আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসবে আমরা যোগ দিচ্ছি এটা আমাদের কাছে বড় পাওয়া। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনা শুনে ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়েছি। অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। কখনো কিছু পাওয়ার জন্য নয়। আজ জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে আমাদেরকে যেই সম্মান দিচ্ছেন, তা অকল্পনীয়।
আজ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আমাদের সকল ক্ষেত্রে সম্মানিত করেছেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তবে ৫০ বছর পূর্তির এই শুভ ক্ষণে আমার ব্যক্তিগত কিছু আক্ষেপ রয়েছে। সবচেয়ে বড় হলো আমাদের সেই দেশপ্রেম বোধ খুঁজে পাচ্ছি না। নিজেকে উজার করে দিয়ে দেশের সেবা করার লোক আজ খুবই কম। অনেককেই মুখে দেশের কথা আসলে নিজের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত দেখেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকার ও আলবদরসহ স্বাধীনতা বিরোধী ছাড়া আমরা প্রতিটি মানুষের চোখেমুখে শতভাগ দেশপ্রেম দেখেছি। আর তাই বঙ্গবন্ধুর এক নিদের্শে আমরা কোন আগপাছ না ভেবে দেশের জন্য যুদ্ধে নেমে গিয়েছিলাম।
আজ আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে একটাই অনুরোধ স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানুন। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে সেই যুদ্ধকালিন ইতিহাস জেনে নিজেকে আগামীর বাংলাদেশর জন্য আদর্শবান দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলুন।