মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:২৪

শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট পাঁচ মাস।। রোগীদের ভোগান্তি

ফয়সাল আহমদ।।
আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট পাঁচ মাস।। রোগীদের ভোগান্তি

৫০ শয্যাবিশিষ্ট শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটি গত জুন মাস থেকে বিকল হয়ে আছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সরকারি ব্যবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাম না হওয়ায় সাধারণ রোগীরা বাধ্য হচ্ছে বেশি খরচে প্রাইভেটভাবে পরীক্ষা করাতে, এতে গরিব ও অসহায় রোগী এবং তাদের স্বজনরা সমস্যায় পড়ছে। তাদের দাবি, দ্রুত মেশিনটি মেরামত অথবা নতুন মেশিন স্থাপন করে রোগীদের ভোগান্তি দূর করা হোক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

জানা যায়, শাহরাস্তি উপজেলার মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসা এই ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই হাসপাতালে প্রতিদিন উপজেলার শত শত মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে গড়ে প্রতিদিন ভর্তি সংখ্যা শতাধিক, আর আউটডোরে চিকিৎসা নেয় প্রতিদিন শত শত রোগী। ফলে রোগীদের ওষুধের পাশাপাশি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার ফি কম হওয়ায় সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেই থাকে। বিশেষ করে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের কাছে এ হাসপাতালই একমাত্র ভরসাস্থল। কিন্তু গত পাঁচ মাস ধরে আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন বিকল থাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩০-৪০ জন রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে যেখানে মাত্র ২০০ টাকায় আলট্রাসনোগ্রাফি করা যেতো, সেখানে রোগীদের বাধ্য হয়ে প্রাইভেটভাবে প্রায় ২ হাজার বা তারও বেশি টাকা দিয়ে করতে হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে চাপে পড়ছে রোগীরা। আবার অনেকে এতো খরচ করার সামর্থ্য না থাকায় পরীক্ষা করাতে পারছে না, ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। আলট্রাসনোগ্রাফির কক্ষে বারবার এসে ফিরে যাওয়া কয়েকজন রোগী জানান, চিকিৎসক আলট্রা করার নির্দেশ দিলেও মেশিন নষ্ট থাকায় বারবার ফিরে আসতে হচ্ছে। পরে জানলাম, মেশিন নষ্ট হয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বাইরে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করে করতে হয়।

পেটে ব্যথা নিয়ে আসা জেসমিন আক্তার নামের এক রোগী জানান, সরকারি হাসপাতালে মানুষ আসে কম খরচে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নষ্ট থাকায় আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে ২ হাজার টাকার বেশি খরচ করে আলট্রাসনোগ্রাম করানো সম্ভব নয়। অথচ সরকারি হাসপাতালে করলে মাত্র ২০০ টাকা লাগতো।

জানতে চাইলে হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাফি ল্যাবের ইনচার্জ বিমল চন্দ্র ভট্টাচার্য জানান, সর্বশেষ জুন মাসে কয়েকজনের আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এরপর মেশিন নষ্ট থাকার কারণে দরজার বাইরে নোটিস লাগিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন বহু রোগী এসে ফিরে যাচ্ছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

মেশিন বিকল থাকার বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আকলিমা জাহান বলেন, ‘হাসপাতালে একটি পুরাতন আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ছিলো, গত জুন মাস থেকে সেটি একেবারে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু আমরা আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন পাইনি। আমি প্রতিটি মাসিক মিটিংয়ে এ বিষয়ে বলে থাকি। এর জন্যে বারবার চাহিদা পাঠানো হলেও এখনো পাওয়া যায়নি। আশা করছি শিগগিরই একটি অত্যাধুনিক মেশিন সরবরাহ করা হবে এবং আলট্রাসনোগ্রাম কার্যক্রম আবার চালু করতে পারবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিয়া হোসেন জানান, আলাদা মন্ত্রণালয় হওয়ায় একটু জটিলতা রয়েছে। পাশাপাশি এটি একটি ব্যয়বহুল মেশিন, তারপরও আমরা পৌরসভা থেকে উদ্যোগ নিয়েছি। সেটি এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়