প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১৮
সরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপ ও করণীয়

বাংলাদেশের পাবলিক (সরকারি) হাসপাতালগুলোতে মন্ত্রণালয়ের বড়ো বড়ো কর্তাগণ সরেজমিনে দেখতে গিয়ে দেখতে পান, হাসপাতালে বেড সংখ্যার তুলনায় তিনগুণ রোগী ভর্তি আছেন। অর্থাৎ বেড সংখ্যা যদি হয় ৫০০, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১৬০০ থেকে ২০০০ জন। এই অতিরিক্ত রোগীগণ চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ফ্লোরে, বারান্দায় মানে মানবেতর অবস্থায়। এতে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালে কর্মরত মানবসম্পদ ও অন্যান্য সম্পদের বরাদ্দ কিন্তু ৫০০ জনের তুলনায় অপ্রতুল, সেখানে বাকি অতিরিক্ত রোগীদের যাবতীয় ম্যানেজমেন্ট ভালোভাবে কী করে সম্ভব? এরপর মুখস্থ কথা তো আছে নার্সদের ব্যবহার ভালো না। হুম, আমিও বলছি আমাদের নার্সদের ব্যবহার ভালো না! খুঁজে বের করুন তো, কেন? এতো মানুষের (রোগী ও রোগীর এটেনডেন্টস) সাথে কতো কথা বলতে হয় বিশেষ করে নার্সদের। কারণ নার্সরাই পড়হঃরহঁড়ঁং ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ দিয়ে থাকে রোগীদের পাশে থেকে। তারপর দেখুন, এই একই নার্স বা ডাক্তাররা যখন প্রাইভেট হাসপাতালে কিংবা বাইরের দেশের হাসপাতালগুলোতে কাজ করছেন, তখন কিন্তু তাদের ব্যবহার নিয়ে কেউ কথা কোনো বলতে পারেন না।
তাহলে ভাবুন তো, কেন পাবলিক হাসপাতালগুলোতে ব্যবহার-আচার-আচরণ নিয়ে কথা উঠে? তার মধ্যে পাবলিক হাসপাতালগুলোতে বেশিরভাগ রোগীই সহজ-সরল, যাদের সাথে কমিউনিকেশন করা, অল্প কথায় বোঝানো খুবই ডিফিকাল্ট এবং এর জন্যে অনেক বেশি কথা বলতে হয় নার্সদের। তাই যে কোনো ঘটনা কী হচ্ছে সেটা না খুঁজে ঘটনার পেছনের কারণগুলোকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন এবং সমাধান করুন।
এবার মূল কথায় আসা যাক, পাবলিক হাসপাতালগুলোতে এই অতিরিক্ত রোগীদের কারণ আমরা পঁৎধঃরাব চিকিৎসার উপরে ফোকাস করে থাকি। সরকার এবং পাবলিক যদি প্রতিরোধে ফোকাস করতো, সচেতন থাকতো নানারকম রোগ প্রতিরোধে। তারপর কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা এবং সেটাকে যথোপযুক্তভাবে পরিচালনা করতে পারলে ডিস্ট্রিক্ট লেভেল এবং টারশিয়ারি লেভেল হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চাপ কমে যাবে, রোগীরাও ভালো চিকিৎসা সেবা পাবেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেকখানি উন্নত হবে। এবং জনগণের ও রোগীর অনুপাতে ডাক্তার, নার্স, অন্যান্য টেকনিশিয়ানের সংখ্যাও বাড়াতে হবে পাবলিক হাসপাতালগুলোতে। জব ফবংপৎরঢ়ঃরড়হ অনুপাতে একজন নার্সের কাজ করতে হলে চার থেকে ছয়জন ংঃধনষব ঢ়ধঃরবহঃ দেখাশোনা করবেন, আর ক্রিটিক্যাল পেশেন্ট হলে ১:১।
Community health & School health এই দুটো এরিয়াতে আমাদের ফোকাস করতে হবে। কারণ প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। এখন প্রচলিত আছে ঐ লেভেলগুলোতে ডাক্তার, নার্সরা কাজ করতে চান না। কথা সত্য। কারণ, এদেশের সব সুযোগ-সুবিধা, ফ্যাসিলিটিজগুলো রাজধানী কিংবা বিভাগীয় শহরকেন্দ্রিক। সুযোগ-সুবিধা ফ্যাসিলিটিজগুলো বা সিস্টেমকে বিকেন্দ্রীকরণ করুন, তাহলে শহরের স্কুল কলেজ বা বাসা বাড়িতেও এতো চাপ পড়বে না আর বাসা ভাড়াও বাড়বে না। সবাই বাচ্চাদের ভালো স্কুল কলেজে পড়ানোর জন্যে শহরে দৌড়াদৌড়ি করবে না। সব জায়গায় একই রকম সুযোগ-সুবিধা, ফ্যাসিলিটিজ তৈরি করুন, সব সেক্টরের সবাই যেন নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন দেশকে এগিয়ে নিতে এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবা মোটামুটি একটা মানদণ্ডে দাঁড় করানো যাবে। সবার তো আর ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার অবস্থা ও উপায় নেই। এতে দেশ এবং এ পেশার মানুষের অযোগ্যতা প্রমাণ করে।