প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:১১
সরকারের মহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে
ফরিদগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রায় সময়ই বন্ধ থাকে
লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলেও ফরিদগঞ্জ উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চলছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিজস্ব ইচ্ছায়। কমিউনিটি ক্লিনিক বাংলাদেশ সরকারের যুগোপযোগী একটি উদ্যোগ। সরকারের স্বাস্থ্যসেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যেই সরকারের এ মহৎ কাজ। কিন্তু কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে সরকারের সেই উদ্দেশ্যে এখনো শতভাগ সফল হয়নি।
|আরো খবর
ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সহকারীরা সেবা প্রদান করে আসছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
বর্তমানে ফরিদগঞ্জে ৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি) রয়েছে। বর্তমানে ৩৭টি সিসিতে কার্যক্রম চলমান আর বাকি দুটির ১টি চালু হবে অচিরেই। ৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি)-এর মধ্যে ১নং বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নে ৩টি, ২নং বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নে ৫টি (যার মধ্যে কৃষ্ণপুর নামক একটি সিসি মডেল হিসেবে মর্যাদাপ্রাপ্ত), ৩নং সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নে ২টি, ৪নং সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নে ২টি, ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নে ৩টি, ৬নং গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নে ২টি, ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নে ২টি (যার ১টি কাঁশারা কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণাধীন), ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নে ৩টি, ৯নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নে ২টি, ১০নং গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে ২টি, ১১নং চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নে ২টি, ১২নং চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নে ১টি (যদিও বর্তমানে এটির কার্যক্রম স্থগিত আছে, যা অচিরেই চালু হবে বলে জানা গেছে), ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় ৩টি, ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নে ৩টি, ১৫নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নে ২টি, আরো ১টি ক্লিনিক নির্মাণাধীন। ১৬নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একজন পরিবারকল্যাণ সহকারী নিয়োজিত আছেন।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হলেন সিসির মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। সিএইচসিপি সপ্তাহের শুক্রবার বাদে বাকি ৬ দিন সিসিতে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী প্রতি সিসিতে মাঝে মধ্যে মাঠ পর্যায়ে তাদের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া প্রতিটি সিসিতে এমবিবিএস বরাবর ২ বছর স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে, সরকারের সে নীতিতে প্রতিটি সিসিতে একজন এমবিবিএস সপ্তাহে ১ দিন স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার কথা থাকলেও উপজেলার সিসিতে সে পোস্ট খালি পড়ে আছে। কোনো কোনো সিসিতে গত ২ বছরেও দেখা মিলেনি কোনো এমবিবিএস ডাক্তারের।
চরমথুরা কমিউনিটি ক্লিনিকের এম.এইচ.বি (মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার) মোঃ ইয়াছিন আরাফাত বলেন, সরকার গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্যে খুবই তৎপর। সেবার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৭ জন করে হেলথ ভলান্টিয়ারের কর্মের সুযোগ রেখেছেন। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মানুষের দ্বারে সেবা পৌঁছে দিচ্ছি আমরা।
৯নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চরমথুরা গ্রামে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মাহমুদুল হাসান বলেন, আমার সিসিতে দৈনিক যে সমস্ত রোগী আসে তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। পুরুষ রোগীও আসে, তবে তাদের সংখ্যা একেবারেই কম। আমরা রোগীদের যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দেয়ার চেষ্টা করি। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ২৮ প্রকার ঔষধ বিনামূল্যে রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী দেয়া হয়।
১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণের হর্নি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি তাহমিনা সুলতানা বলেন, উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে রয়েছে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, সাধারণ রোগের চিকিৎসা যেমন : জ্বর, সর্দি-কাশি, সাধারণ জখম, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ইত্যাদির লক্ষণ দেখে বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ এবং জনসাধারণকে কাউন্সেলিং করা।
উপজেলার গ্রামগুলোতে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা একেবারেই কম। কমিউনিটি ক্লিনিক এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সহযোগিতা করার কথা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো গরিব মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবতা বড়ই নির্মম। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সের পরেই কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলোই গরিব মানুষের স্বাস্থ্যসেবার আশ্রয়স্থল। অথচ এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় সময়ই বন্ধ থাকে। থাকে না কর্মকর্তাগণ।
কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা কৃষ্ণপুর গ্রামের গৃহবধূ নির্মলা দাস বলেন, দুদিন যাবৎ জ্বর ও কাশিতে কষ্ট পাচ্ছিলাম। ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছি। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা সাধারণ রোগের জন্যে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকেই চিকিৎসা নিই। তবে গতমাসে আমার ছেলের প্রচ- জ্বর ছিলো। খুব আশা নিয়ে ক্লিনিকে এলেও আশাহত ছিলাম। জ্বরের মূল ওষুধ প্যারাসিটামলই তাদের কাছে নেই বললেন স্বাস্থ্য আপা। শুনলাম কয়েকমাস ধরেই নাকি ওষুধ আসছে না।
গত মঙ্গলবার ১২টা ৩০ মিনিটে উপজেলার সাহাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের নোয়াগাঁও/ভাটিরগাঁও কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলে তাও বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফ আহমেদ চৌধুরী বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতেই সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে ফরিদগঞ্জে ৩৯টি সিসি রয়েছে। যার মধ্যে ৩৭টি সচল সিসির মাধ্যমে ফরিদগঞ্জের সর্বস্তরের জনসাধারণকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার আওতায় আনতে পেরেছি। বাকি ২টি সিসির ওষুধপত্র ও সরঞ্জামাদির কাজ সম্পন্ন হলেই কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। আরও ১টি নির্মাণাধীন রয়েছে। দেখা গেছে নানারকম জটিল ও সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে সিসির দায়িত্বরতরা সেসব রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে রেফার করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে সারাবিশে^ নন-কমিউনিক্যাবল ডিজিজে মানুষ সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে। ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার জাতীয় রোগগুলো ছোঁয়াচে নয়; কিন্তু এসব রোগেই এখন মানুষ মারা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কমিউনিটি ক্লিনিকে এসব রোগের চিকিৎসা পরামর্শের সুযোগ রয়েছে।