সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৭

ব্রেনস্ট্রোক : প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়

ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
ব্রেনস্ট্রোক : প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়

সাধারণ অর্থে স্ট্রোক মানে হলো আঘাত বা ঘাত। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্ট্রোক বলতে বোঝা যায় মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ রোধজনিত বা রক্তক্ষরণজনিত কারণে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া। কারও স্ট্রোক হয়েছে শুনলেই প্রিয় ও নিকট সম্পর্কের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয় এবং অনিশ্চয়তা গ্রাস করে। স্ট্রোক আক্রান্ত ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন যেমন শয্যাশায়ী হতে হয় তেমনি অন্যের সহযোগিতা ব্যতিরেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

ব্রেন স্ট্রোক কী

ব্রেন বা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী নালীগুলো কোন কারণে ব্লক হয়ে গেলে বা আটকে গেলে কিংবা উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে ফেটে গেলে তৎপরবর্তী অংশে আর রক্ত পৌঁছায় না কিংবা রক্তসরবরাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। এতে মস্তিষ্কের ঐ অংশের কেষগুলো আর অক্সিজেন পায় না। এতে তাদের মধ্যে পঁচন ধরে যায় বা কোষগুলো মৃত হয়ে যায়। ফলে দেহে বিভিন্ন রকম পরিণাম ও ফলশ্রুতি তৈরি হয়। যেমন : চলচ্ছক্তিহীন হওয়া, কথা না বলতে পারা, স্মৃতি নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। শরীরের এই অবস্থাকেই স্ট্রোক বলে। সাধারণত স্ট্রোক বলতে ব্রেন স্ট্রোককেই বোঝায়।

স্ট্রোকের ধরন

স্ট্রোক মুখ্যত দুরকমের। যথা :

১. ইশকেমিক স্ট্রোক বা রক্তসরবরাহ হ্রাসে স্ট্রোক

২. রক্তনালী ফেটে গিয়ে স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণের স্ট্রোক

এছাড়া ট্রান্সিয়েন্ট ইশকেমিক স্ট্রোক বা ক্ষণস্থায়ী স্বল্প রক্ত চলাচলজনিত স্ট্রোক বলে আরও একধরনের স্ট্রোক আছে।

মানবদেহে সংঘটিত অধিকাংশ ব্রেন স্ট্রোক ইশকেমিক স্ট্রোক ধরনের। যখন কোন রক্ত কণিকার দলা বা অন্যান্য চাকা (বায়ু বুদবুদ, চর্বির দলা বা প্ল্যাক প্রভৃতি) রক্তনালীর ছিদ্রপথ আটকে দেয় তখন আটকে যাওয়া অংশের পরবর্তী অঞ্চলে রক্ত সরবরাহ কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। এতে ইশকেমিক স্ট্রোক সংঘটিত হয়।

রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক

মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্তনালী ছিঁড়ে গেলে কিংবা ফুটো হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় এবং মস্তিষ্কের কোষের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। এতে মস্তিষ্কের কোষগুলোতে পঁচন ধরে ও কোষগুলো মারা যায়। ফলে বিভিন্ন রকমের দৈহিক অবনতি দেখা দেয়। এ অবস্থাকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক বলে।

উচ্চ রক্তচাপ, বেলুনাকৃতির রক্তনালী স্ফীতি প্রভৃতি কারণে রক্তনালী গাত্রে চাপ তৈরি হয় এবং এতে রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হয়।

টিয়া (ঞওঅ) বা ট্রান্সিয়েন্ট ইশকেমিক স্ট্রোক এমন এক ধরনের স্ট্রোক যাকে বড়স্ট্রোকের সতর্কতামূলক প্রতিচ্ছবি বলা যায়। স্ট্রোক হলো এক ধরনের মেডিকেল ইমার্জেন্সি।

স্ট্রোকের লক্ষণ

* কথা বলতে সমস্যা হয় এবং তার কথা অন্যের বুঝতে অসুবিধা হয়। কথা জড়িয়ে যায়।

* স্ট্রোকাক্রান্ত ব্যক্তি বিভ্রান্ত থাকে

* তার মুখ ও হাত-পা অবশ থাকে, নড়াচড়ায় অক্ষম হয়, মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়।

* দেহের একপাশ প্যারালাইজড্ হয়ে যায়। একে স্থানীয় ভাষায় অর্ধাঙ্গ ব্যারামও বলে।

* মুখের একপাশ ঝুলে যায়। মুখ দিয়ে লালা পড়ে। খাবার চিবিয়ে খেতে পারে না।

* এক চোখের পাতা বন্ধ করা যায় না। ঘুমালেও তা খোলা বা অর্ধ খোলা থাকে।

* চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। কখনো কখনো চোখে কিছু দেখা যায় না। অর্থাৎ আঁধার দেখে। একে ব্ল্যাক আউটও বলে।

* রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে হঠাৎ তীব্র মাথা ব্যথা হয়।

* মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে বমি হয়

* মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়ে গেলে বা ফেটে গেলে মাথা ঘোরায়, চেতনা লোপ পায়।

* মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে চোখের মণির আকার বিন্দুর মতো হতে পারে।

* স্ট্রোকাক্রান্ত ব্যক্তি হাঁটতে পারে না বা হাঁটতে অসুবিধা হয় এবং ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।

স্ট্রোকের ঝুঁকি

* উচ্চ ও অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ

* ডায়বেটিস

* ধূমপান

* রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল

* নিদ্রাকালীন নিঃশ্বাস আটকে যাওয়া

* হার্ট ফেইলিওর

* অ্যালকোহল ও অন্যান্য মাদক সেবন

* হৃদপিণ্ডের বেতাল চলা বা অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন

* ব্রেনস্ট্রোকের পারিবারিক ইতিহাস

* করোনা সংক্রমণ

* বয়স পঞ্চাশ বা তদূর্ধ্ব

* জন্ম বিরতিকরণ বড়ি সেবন

স্ট্রোকের জটিলতা

* শারীরিক প্রতিবন্ধিতা

* চলাচলে অক্ষম হয়ে যাওয়া

* খাবার গলাধঃকরণে অসুবিধা

* স্মৃতি বিলোপ হওয়া

* চিন্তা-ভাবনা-যুক্তিতে অক্ষমতা

* রাগ-ক্ষোভ দমনে ব্যর্থতা

* বিষণ্নতা তৈরি হওয়া

* বেডসোর বা বিছানায় দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী হওয়ার কারণে শরীরের ওজনবাহী অংশে ঘা হয়ে যাওয়া।

স্ট্রোকের জন্যে পরীক্ষা

* রক্তের নিয়মিত পরীক্ষা

* মূত্রের নিয়মিত পরীক্ষা

* রক্ত-শর্করার মান নির্ণয়

* রক্তের কোলেস্টেরল ও চর্বি জাতীয় পদার্থের মান নির্ণয়

* রক্তে ইলেকট্রোলাইটের মান নিরূপণ

* রক্তে ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিয়ার মাত্রা নিরূপণ

* ব্রেনের সিটি স্ক্যান ও এমআরআই

স্ট্রোকের চিকিৎসা

* প্লাটিলেট যাতে দলা পাকাতে না পারে বা অনাকাক্সিক্ষত প্ল্যাক তৈরি করতে না পারে সেজন্যে অ্যাস্পিরিন ও ক্লোপিডোগ্রল জাতীয় ঔষধ নিয়মিত সেবন

* রক্তে চর্বি বা কোলেস্টেরলের মান নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে অ্যাটরোভাস্টেটিন বা রসুভাস্টেটিন জাতীয় ঔষধ নিয়মিত সেবন।

* মস্তিষ্কে রক্তসরবরাহ বলবৎ রাখার জন্যে ভিনপোসেটিন জাতীয় ঔষধ সেবন।

* উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়নপটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা

* শারিরীক প্রতিবন্ধিতা দূরীকরণে ফিজিওথেরাপী ও নির্দেশিত ব্যায়াম

* প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা।

* রক্তক্ষরণজনিত দলা পাকালে তা অপসারণে চিকিৎসকের নির্দেশনা গ্রহণ।

ব্রেনস্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়

* প্রফুল্ল থাকা ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা

* ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা

* অতিরিক্ত লবণ ও চিনি বাদ দেওয়া

* নিয়মিত শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম করা

* লাল মাংস ও চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা

* আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্যে ধ্যান অনুশীলন করা

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়