প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২১, ০০:২৫
কেনো এতো মৃত্যু, কেনো এতো লাশ? অনুসন্ধান-০৪
রোগীদের জিম্মি করে হাসপাতালে চলে অক্সিজেন বাণিজ্য, ওয়ার্ডবয়দের টাকা দিলেই মিলে সিলিন্ডার
‘হাসপাতালে দালালি’ শব্দ দু’টি কারো কাছে নতুন নয়। রোগীর স্বজনদের নানাভাবে প্রভাবিত করে নিজস্ব ডাক্তারের কাছে পাঠানো, সেবার অভিনয় করে কমিশন পাওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ফার্মেসীতে পাঠানোর চিত্রটা দীর্ঘদিনের। কিন্তু অতিমারির সময় মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকে জিম্মি করে তার মুখ থেকে অক্সিজেন কেড়ে নেয়ার ঘটনা হয়তো পূর্বে শোনেনি কেউ। সরকারি হাসপাতালের সরকারি অক্সিজেন নিয়ে চলে গোপন বাণিজ্য। বিনামূল্যের অক্সিজেনের জন্যে মূল্য চাওয়া হয় রোগীর স্বজনদের কাছে। বিভিন্ন দাতা প্রতিষ্ঠান ও বিশিষ্টজনদের দেয়া উপহারের অক্সিজেন সিলিন্ডারও বিক্রি হয় ৫শ’ থেকে হাজার টাকায়।
|আরো খবর
টাকা দিলে অক্সিজেন আছে, টাকা না দিলে নেই। এমন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত চাঁদপুরের একাধিক হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়রা। রোগীদের কাছ থেকে সরাসরি ওয়ার্ড বয়রা টাকা নিলেও এ কাজের সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন একই হাসপাতালের নার্সরাও। চাঁদপুর কণ্ঠের অনুসন্ধানে মিলেছে তার অসংখ্য প্রমাণ। বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়া না দেয়ার দাম কষাকষিতে হাসপাতালের স্টাফদের চোখের সামনে ছটফট করে মারা গেছেন একাধিক রোগী। তবুও মন গলেনি তাদের। কতিপয় স্টাফ আর দালালদের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে টাকার মূল্যই বেশি।
চাঁদপুর কণ্ঠের অনুসন্ধানী সিরিজ প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্বে প্রকাশ পেয়েছিলো চাঁদপুর কচুয়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের স্ত্রীর করুণ মৃত্যুর ঘটনা। সেই ঘটনার সূত্র ধরেই বেরিয়ে এসেছে লোকচক্ষুর আড়ালে রাতের অন্ধকারে সরকারি হাসপাতালের স্টাফদের অক্সিজেন বাণিজ্যের তথ্য। খোঁজ নিয়ে জানা যায় একটি নয়, তিনটি হাসপাতালে ঘটেছে একই ধরণের ঘটনা। সেই ঘটনাগুলো নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজকের পর্বে থাকছে অনুসন্ধান-০৪।
২৫ জুলাই মধ্য রাতে অসুস্থ মাকে চাঁদপুর সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন চাঁদপুর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ সোহাগ। হাসপাতালের তৃতীয় তলার ফ্লোরে জায়গা হয়েছিলো তার মা সুফিয়া বেগমের। শ্বাসকষ্টে ভোগা মুমূর্ষু মাকে ইমার্জেন্সি রুম থেকে ভর্তি দেয়া হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু দেয়া হয়নি অক্সিজেন। হাসপাতালে অক্সিজেন চাইলে দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেছেন, নেই। সিলিন্ডারের গ্যাস ফুরিয়ে গেছে। তখনও জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট উদ্বোধন হয়নি। তবে পরদিন ২৬ জুলাই দুপুরের পর পরীক্ষামূলকভাবে লাইনের অক্সিজেন চালালে তা থেকে পাবেন অক্সিজেন। সে পর্যন্ত সুফিয়া বেগমকে করতে হবে অপেক্ষা।
সোহাগ সিলিন্ডার না পেয়ে ফিরে গেলেন তৃতীয় তলায় মায়ের কাছে। গিয়ে দেখেন মায়ের শ^াসকষ্ট আরও বেড়েছে। ৯ সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে বায়েজিদ সোহাগের কোলে শুয়ে সুফিয়া বেগম যখন বলছিলেন, ‘আমি আর বাঁচমুনারে বাবা, দম নিতে কষ্ট হয়’ তখন আর সোহাগ সহ্য করতে পারেননি।
উঠে গিয়ে বারান্দায় যখন কাঁদছিলেন, এক ওয়ার্ড বয় কাছে এসে বললেন, ‘কাঁদলে কি সমাধান হইবো? টাকা দেন সিলিন্ডার দিতাছি।’ সোহাগ পকেট থেকে ২শ’ টাকা বের করে দিলে ওই ওয়ার্ড বয় এনে দিলেন একটি সিলিন্ডার। যা দিয়ে সাময়িক শান্ত হন সুফিয়া বেগম।
নির্ঘুম থাকা সোহাগ মায়ের শয্যা পাশে বসা। মা সুফিয়া বেগম টানছেন অক্সিজেন। ঘণ্টা দুয়েক পর গোঙ্গানি শুরু হলো তার। সোহাগ কী হয়েছে জানতে চাইলে মা ইশরায় জানালেন পাইপ দিয়ে অক্সিজেন আসছে না। আবার গেলেন ওয়ার্ড বয়ের কাছে। তার এবারের চাহিদা ৩শ’ টাকা। অনেক কথা বলে সোহাগ ২শ’ টাকা দিয়ে পেলো আরো একটি সিলিন্ডার। তবে সিলিন্ডারটি পূর্বে ব্যবহৃত ছিলো। অল্প সময়ের মধ্যেই গ্যাস ফুরিয়ে যায়। এভাবে কখনও ২শ’, কখনও ৩শ’ দিয়ে আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টার জন্য সিলিন্ডার নিয়ে নিয়ে রাতটা পার করেছেন কোনো মতে।
সকাল ৭টায় সোহাগের মায়ের প্রচুর শ্বাসকষ্ট বাড়ে। তখনও হাসপাতাল থেকে এক বোতল সিলিন্ডারও দেয়া হয়নি সুফিয়া বেগমকে। সিস্টারদের কাছে অক্সিজেন চাইলে বলতেন, অক্সিজেন শেষ আর ওয়ার্ড বয়দের কাছে চাইলে বলতেন, টাকা দিন ম্যানেজ করে দিচ্ছি।
সকালে সুফিয়া বেগমের অবস্থা যখন আশঙ্কাজনক তখন পাগলের মত সেই ওয়ার্ড বয়কে খুঁজে বেড়িয়েছেন সোহাগ। কিন্তু তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। আরেকজন স্টাফের কাছে কান্নাকাটি করেও মিলেনি অক্সিজেন। এবার ২শ’ টাকা নয় ৫শ’ টাকা দিতে রাজি হয়েছিলেন সোহাগ। স্টাফের একই কথা, অক্সিজেন শেষ। রিফিল করলে আবার দেয়া যাবে।
মায়ের চিৎকার দূর থেকে শুনতে পাচ্ছিলেন সোহাগ। যে করেই হোক তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হবে। দু-একজন সোহাগকে শুনিয়ে বলছিলেন, ‘আহারে অক্সিজেন না দিলেতো এই মহিলা এখনই মারা যাবে।’ মায়ের মৃত্যু হচ্ছে শুনে দৌড়ে গিয়ে সেই স্টাফকে ১ হাজার টাকার ১টি নোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ভাই ১ হাজার টাকা দিলাম। এবার অন্তত একটা সিলিন্ডার দেন।
হাসপাতালের সেই স্টাফ ১ হাজার টাকার নোট দ্রুত পকেটে ভরে বলেছিলেন, দাঁড়ান, ব্যবস্থা করতেছি। দুমিনিটের মধ্যে একটি সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন তিনি। দেয়া হলো সুফিয়া বেগমের মুখে। অক্সিজেন পেয়ে আবারো শান্ত হয়েছিলেন সুফিয়া বেগম। চোখের পানি মুছতে মুছতে সোহাগ সেই স্টাফকে বলেছিলেন, ‘আমার মা মারা যাচ্ছে আর আপনারা টাকার জন্য অক্সিজেন দিচ্ছেন না। আপনারা এমন ক্যান ভাই?’ প্রতিউত্তরে সেই স্টাফ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছিলেন, ‘আরে ভাই, আমিতো আপনার উপকার করলাম। টাকা কি আমি খাইছি? কতজনরে দিয়া সিলিন্ডারটা বের করে আনলাম।’
সোহাগকে দেওয়া হাসপাতালের স্টাফের এই বক্তব্যের সত্যতা খুঁজতে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে যায় চাঁদপুর কণ্ঠের টিম। ‘অক্সিজেন বাণিজ্যের টাকা কি শুধুই স্টাফদের পকেটেই যায় নাকি আসলেই উপরস্থ কাউকে ভাগ দিতে হয়’ -তা নিয়ে কথা বলা হয় হাসপাতালে কর্মরত একাধিক স্টাফের সাথে। সংবাদকর্মী পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় তাদের লুকোচুরি খেলা। দু একজনের সাথে কথা বললে তারা নিজেদেরকে আদর্শ স্টাফ দাবি করে বলেন, জেনারেল হাসপাতালে নাকি এমন কোনো ঘটনাই ঘটে না।
তবে কি বায়েজিদ সোহাগ যা বললেন তার পুরোটাই মিথ্যে? মায়ের মৃত্যু নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কোনো সন্তান কি এমন মিথ্যে বলতে পারেন? প্রশ্নের উত্তর যখন মিলছে না তখন নিজের খোলস পাল্টালেন প্রতিবেদক। সততার বুলি ফোটানো হাসপাতালের সেই স্টাফের ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হলো। ছদ্মবেশে কান্না জড়িত কণ্ঠে ফোন করা হলো তাকে। বলা হলো, ‘ভাই আমি হারুনুর রশিদ। কচুয়া হাসপাতাল থেকে বলছি। আমার বোন ভীষণ অসুস্থ। সদর হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। করোনা ইউনিটে সিট ও নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যুৎ চলে গেলে দিতে হবে সিলিন্ডার অক্সিজেন। আপনি কি কোনো সাহায্য করতে পারবেন?’ পূর্বে নিজেকে ফেরেস্তা দাবি করা সেই স্টাফের আচরণ এখন পুরোটাই বিপরীত। বললেন, ‘সাহায্য করাটাইতো আমার কাজ। তবে কাজ শেষে খুশি করে দিয়েন।’ ফোনের এ পাশ থেকে হারুনুর রশিদ (ছদ্মনাম) জানতে চাইলেন, কীভাবে খুশি করবো, কীভাবে পেমেন্ট হবে যদি একটু খুলে বলতেন। এবার তিনি খরচের পথ দেখালেন হারুনুর রশিদকে। জানালেন, ‘অক্সিজেন সিলিন্ডার একটা ২ ঘণ্টা চালালেই শেষ হয়ে যায়। ওটা নিচে থেকে রিফিল করে আনতে হয়। প্রতিটি বোতল রিফিলে ৫শ’ থেকে ৬শ' টাকা খরচ হয় তার। রিফিলের জন্য আনা-নেয়া গাড়ি ভাড়াতো আছেই। তাই প্রতি বোতলে দিতে হবে ৮শ’ টাকা! এবার যত বোতল লাগে ততর লগে আটশ’ গুণ দিলে যত টাকা হয় তত টাকা দিবেন।’
ফোনের এ পাশ থেকে বলা হলো, ‘শুনেছি সদর হাসপাতালে সিট নাই। রোগী ফ্লোরে গড়াগড়ি খায়। সিট দিতে পারবেন তো?’ এবার আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বললেন, ‘আরে হারুন ভাই, আপনি এখনো আমারে চিনেন নাই। রোগী যতই ফ্লোরে গড়াগড়ি খাক, সিট দেয়ার দায়িত্ব আমার। আপনে রোগী পাঠান। আমি এখনই সিট একটা রাইখা দিতাছি। তবে প্রতি সিটের জন্য দিতে হবে ৫ হাজার টাকা।’
‘এত টাকা কেন ভাই?’ জানতে চাইলে বলেন, আরে ভাই টাকা কি আমি একা নিমু? কতজনরে কতভাবে খুশি করানো লাগে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকেন। সেবা পাইবেন একশ’ একশ’।
‘পেমেন্ট কিভাবে করবো’ জানতে চাইলে বললেন, রোগীর লগে পাঠান। নইলে বিকাশ মাইরা দেন। আমি পুরা বন্ধুর মত সেবা দিমু। সেবায় কোনো ত্রুটি থাকবো না। আপনে আপনার রোগীর কাছ থেইকা জাইনা লইয়েন।
এতক্ষণে বায়েজিদ সোহাগের দেয়া তথ্যের সত্যতা মিললো। গভীর রাতে হাসপাতালে গিয়ে বেড না পাওয়া, মায়ের জীবন বাঁচাতে দফায় দফায় টাকা দিয়ে অক্সিজেন কেনা, অবশেষে অক্সিজেন সংকটে মৃত্যু! সবটাই দিনের আলোর মত পরিষ্কার। টাকা দিলে বেড হয়, টাকা দিলে অক্সিজেন হয়, টাকা দিলে পাওয়া যায় বন্ধুর মত সেবা। যার টাকা নেই সে হাসপাতাল চত্বরে অসহায়, নিরূপায়। যেমনটি ঘটেছিলো সুফিয়া বেগমের ক্ষেত্রে। এমন ডজন খানেক সুফিয়া বেগম মারা গেলেও তাদের কিচ্ছু আসে যায় না। ‘মহামারি করোনা’ তাদের কাছে একটি ব্যবসায়ের নাম।
এ ঘটনা শুধু চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালেই নয়, একই ধরণের অভিযোগ পাওয়া যায় আরও দুটি হাসপাতাল থেকে। মতল উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে ফোন করা হয় বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সারা ফাউন্ডেশন’কে। বলা হয় হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট। জরুরিভাবে অক্সিজেন না পেলে রোগী বাঁচবে না। সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে দেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। পরদিন আবারো ফোন করা হয় নতুন আরেকটি সিলিন্ডার চেয়ে। ওই সময়ে সারা ফাউন্ডেশনের হাতে রিফিল করা কোনো সিলিন্ডার না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়। তাতেই রেগে গেলেন রোগীর স্বজন। স্বেচ্ছাসেবীদের বলেছিলেন, ‘আগের সিলিন্ডার দিয়ে তো অনেকগুলা টাকা নিলেন। এখন দিবেন না কেন? টাকা কি কম দিচ্ছি নাকি?’
‘সারা ফাউন্ডেশনের’ স্বেচ্ছাসেবীরা হাসপাতালে গিয়ে রোগীর স্বজনের কাছে সব কিছু জানতে পারেন। হাসপাতালের এক দালাল সারা ফাউন্ডেশনের কথা বলে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে টাকা। বলা হয়েছিলো টাকা না দিলে সংগঠন সিলিন্ডার ফেরৎ নিয়ে যাবে। তাই বিপদগ্রস্ত রোগীরা যা চেয়েছেন তা-ই দিয়ে সন্তুষ্ট করেছিলেন অপরিচিত সেই দালালকে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ঘটেছে একই রকম ঘটনা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সোশ্যাল এইডার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনকে সাংবাদিক পরিচয়ে এক ব্যক্তি হাসপাতালে জরুরি অক্সিজেন লাগবে মর্মে ফোন করেন। স্বেচ্ছাসেবীরা সিলিন্ডার নিয়ে পৌঁছালে জানতে পারেন উক্ত ফোন নম্বরের ব্যক্তি মূলত কোনো সাংবাদিক নন বরং হাসপাতালে হেঁটে হেঁটে যে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন সেই রোগীর অক্সিজেন এনে দিবেন বলে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। পরে মানবিক কথা বলে, বিভিন্ন পেশার পরিচয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে ফোন করে থাকে। করোনাকালে আপাতত এটাই তার বিজনেস।
একই অভিযোগ পাওয়া যায় শাহরাস্তি দিশারী সমাজকল্যাণ সংস্থার কাছ থেকে। শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এক ব্যক্তি ফোন করেন স্বেচ্ছাসেবীদের। জানান রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। একটি সিলিন্ডার পৌঁছে দেয়ার জন্য। স্বেচ্ছেসেবী সংগঠনের সদস্যরা সিলিন্ডার নিয়ে রোগীকে দেখতে চান। কিন্তু কোনো রোগীকেই দেখাতে পারেননি তিনি। হাসপাতালের অন্যান্য রোগীর কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে অক্সিজেন দিয়ে থাকেন। রোগীদের কাছ থেকে সিলিন্ডার রিফিলের মূল্য বাবদ নিয়ে থাকেন ৫শ’ টাকা করে।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে টাকা দিয়ে অক্সিজেন কেনার বিষয়ে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধারক ডাঃ মোঃ হাবিব-উল-করিম বলেন, এ ধরণের অভিযোগ আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। অক্সিজেনেরতো সংকটই থাকার কথা নয়। আবুল খায়ের গ্রুপের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সেবা তখন চলছিলো, এখনো চলছে। আমাদের অগোচরে কিছু ওয়ার্ড বয় রোগীদের জিম্মি করে এমন ব্যবসা চালাতে পারেন তা আমি ভাবতেও পারিনি। এ অনিয়মটি আমার কল্পনার বাইরে ছিলো। চাঁদপুর কণ্ঠকে ধন্যবাদ। আপনাদের অনুসন্ধানে যা বেরিয়ে এসেছে তা যেন সামনে আর না ঘটে তার ব্যবস্থা আমি শীঘ্রই নিচ্ছি।
যার যায়, সে বোঝে কী হারায়। অতিমারির সুযোগ নিয়ে যারা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন, মৃত্যুপথযাত্রীদের জিম্মি করে জীবনের চেয়েও নিজের অবৈধ জীবিকাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন তাদের থামানো না গেলে স্বাস্থ্য বিভাগের মানবিক ডাক্তার ও আদর্শ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের যেই ভাবমূর্তি তা ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি এই অঙ্গনের প্রতি আস্থা হারাবে সাধারণ মানুষ। ওয়ার্ড বয় বা স্টাফ এরাতো স্বল্প শিক্ষিত, নিম্ন শ্রেণির কর্মচারি। চাইলেই এদের অপরাধ দমন করা সম্ভব। কিন্তু এমবিবিএস পাস করা কতিপয় চিকিৎসকের হেয়ালিপনায় যদি প্রাণ যায় কোনো নিরীহ মানুষের, তবে তাদের দমন করবে কে? মৃত্যুর ১০ দিন আগেই মেরে ফেলা হয়েছিলো চাঁদপুরের আরো একজন মা-কে। নিজের মাকে বাঁচাতে অনভিজ্ঞ সন্তান ছিলেন চিকিৎসকের ভূমিকায়। চাঁদপুর কণ্ঠের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে উপজেলা ভিত্তিক তেমনই আরেকটি ঘটনা। জানতে চোখ রাখুন অনুসন্ধান-০৫-এ।
চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক অনুসন্ধানে যখন একের পর এক বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল তখন স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই আপসে আসার, আপসে বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন যেখানে, আপস করারতো প্রশ্নই উঠে না। মৃত্যুর মিছিলের রহস্য, স্বাস্থ্য বিভাগের অপ্রকাশিত সংকট ও সমস্যা একের পর এক সামনে আসছে। সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পদক্ষেপ নিবেন কি-না তা সময়ই বলে দিবে।