বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

সাক্ষাৎকার : ডাঃ সোহেল আহমেদ

মানুষ টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে অসুস্থ হচ্ছে, আবার সুস্থতার জন্যে টাকা ব্যয় করছে

মানুষ টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে অসুস্থ হচ্ছে, আবার সুস্থতার জন্যে টাকা ব্যয় করছে
অনলাইন ডেস্ক

ডাঃ সোহেল আহমেদ। আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা মতলব দক্ষিণে। সম্প্রতি তিনি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘চিকিৎসাঙ্গন’ বিভাগের মুখোমুখি হন। এ সময় উঠে এসেছে তাঁর শৈশব-কৈশোর, বেড়ে ওঠা এবং চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে ভাবনার কথা।

সাক্ষাৎকার নেন : আলআমিন হোসাইন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

ডাঃ সোহেল আহমেদ : মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবাণীতে বেশ ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?

ডাঃ সোহেল আহমেদ : আমার জন্ম মতলব দক্ষিণে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে মতলবে। গ্রামের আলো-ছায়ায় আমার বেড়ে ওঠা।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

ডাঃ সোহেল আহমেদ : মতলবগঞ্জ জেবি পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করি। ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করি। পরে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন থেকে ইন্টারনাল মেডিসিনে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হওয়ার ভাবনাটি সূচনা হলো কীভাবে?

ডাঃ সোহেল আহমেদ : চিকিৎসকই হবো এমন কোনো চিন্তা-ভাবনা ছিলো না। সবসময় পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলাম। ইন্টারমিডেটের পর যখন বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি দিই, তখন মেডিকেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের ইচ্ছায় মেডিকেলে ভর্তি হই। সেই থেকে চিকিৎসাঙ্গনে পথচলা। মানুষের সেবা করার মাধ্যমে নিজের মনে প্রশান্তি অনুভূব করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।

ডাঃ সোহেল আহমেদ : এমবিবিএস পাস করার পর মনে হয়েছে একটি পর্যায় সম্পন্ন হয়েছে। মেডিকেলে পড়ার শুরু থেকে ভাবনায় ছিলো মানুষকে যথাযথভাবে সেবা দিতে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে হবে। তাই একটি পর্যায় সম্পন্ন করার পর আরেকটি পর্যায় অর্থাৎ উচ্চতর ডিগ্রির জন্যে প্রস্তুতি শুরু করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরে যোগদান করেছেন কবে?

ডাঃ সোহেল আহমেদ : আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ২০১০ সালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দিই। ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এফসিপিএস কোর্সের জন্যে চলে যাই। এফসিপিএস সম্পন্ন করে ২০১৩ পুনরায় চাঁদপুরে কর্মস্থলে যোগ দিই। ২০১৫ সালে এক বছরের জন্যে আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট ভোলা জেনারেল হাসপাতালে যোগ দিই। তারপর আবারো চাঁদপুরে ফিরে আসি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরের চিকিৎসাব্যবস্থার সার্বিক দিক নিয়ে কিছু বলুন।

ডাঃ সোহেল আহমেদ : অন্যান্য জেলা থেকে চাঁদপুরের চিকিৎসাব্যবস্থা অনেক ভালো। এখানে পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। তবে আমাদের আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালসহ অনেক হাসপাতালে অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। জায়গার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি। দিন দিন আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে, চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু আমাদের অবকাঠামো সেই অনুপাতে বাড়েনি। ফলে তা চিকিৎসাব্যবস্থার সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলছে। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে। সেগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। হাসপাতালের উন্নত পরিবেশ সবসময় রোগীর সুস্থতা অর্জনে অত্যাবশ্যক। এজন্যে হাসপাতালের পরিবেশ অবশ্যই সুন্দর হতে হবে। হাসপাতালের সামনে খোলা জায়গায় ফুলের বাগান করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তার উদাহরণ।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার কাছে কোন্ ধরনের রোগী বেশি আসে?

ডাঃ সোহেল আহমেদ : আমি একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মূলত সমন্বিতভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। আমার কাছে যারা আসেন, তাদের অনেকেরই একাধিক সমস্যা থাকে ক্রনিক কেয়ার রোগী। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক-এ ধরনের রোগী বেশি আসেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?

ডাঃ সোহেল আহমেদ : মনে রাখতে হবে, আমাদের অনেক রোগ এমনিতেই সুস্থ হয়ে যায়। এজন্যে আমাদের অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে। হুট করে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়া যাবে না। অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবেই না। বর্তমান আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় চিকিৎসক এবং রোগী উভয়রই পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল হতে হবে। সোস্যাল মিডিয়ার এ যুগে বিভিন্ন কারণে অনেক জিনিস খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে। রোগ সম্বন্ধে অনেক চটকদার তথ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে মানুষ কুসংস্কার ও সামাজিক ট্যাবুতে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে এসবের ফাঁদে পড়ে নিজেদের সর্বস্ব হারাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব করা যাবে না। গুজবে কান দেয়া যাবে না। যে কোনো প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাজীবনের একটি সুখের এবং একটি দুঃখের স্মৃতির কথা বলুন।

ডাঃ সোহেল আহমেদ : প্রতিনিয়তই কিছু সুখের স্মৃতি থাকে। আমি ভোলা সদর হাসপাতালে থাকাবস্থায় একদিন বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামালের মা আমার চেম্বারে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে একজন বীরশ্রেষ্ঠের মাকে চিকিৎসাসেবা দেয়া আমার জীবনের অন্যতম সুখের স্মৃতি। আমি যতোদিন ভোলা ছিলাম তিনি আমার কাছে সেবার জন্যে আসতেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?

ডাঃ সোহেল আহমেদ : মানুষের সচেতনতার অভাব। চাঁদপুরে প্রচুর চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা মধ্যস্বত্বভোগী নির্ভর হয়ে পড়ছে। এতে মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যায়। এটি একটি প্রতিবন্ধকতা। সচেতন হতে হবে। আমাদের এখানে উন্নত ডায়াগনস্টিকের অভাব রয়েছে। কেননা শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র লিখেন। চিকিৎসাসেবা দেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে প্রথম যে তিনটি কাজ করতেন?

ডাঃ সোহেল আহমেদ : প্রথমত, ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস সিস্টেমের মাধ্যমে আমি চিকিৎসকদের নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতাম। বর্তমানে বিসিএস প্রক্রিয়ায় চিকিৎসকরা আমলা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যাদের অনেকেই চিকিৎসাব্যবস্থার সার্বিক দিক সম্পর্কে অবগত নন। এজন্যে আমি চাইবো, আমাদের জুডিসিয়াল সার্ভিসের মতো চিকিৎসকদের নিয়োগ দিতে। দ্বিতীয়ত, রোগীর উন্নত সেবা প্রদানের জন্যে একেবারে প্রান্তিক পর্যায় থেকে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের জন্যে রেফারেল সিস্টেম চালু করবো। তৃতীয়ত, দেশের সকল হাসপাতালে উপজেলা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কোনো রোগী ফ্লোরে সেবা নিতে পারবে না। হাসপাতালে যে ক’টা সিট থাকবে, ঠিক ততোজন রোগী ভর্তি হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

ডাঃ সোহেল আহমেদ : রোগমুক্ত জীবনযাপনের জন্যে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাবন করতে হবে। নিজের জন্যে সময় রাখতে হবে। কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। জীবনে ভালো থাকার জন্যে সবসময় অল্পতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। প্রতিযোগিতা করে সুখি হওয়ার মন-মানসিকতা বর্জন করতে হবে। মানুষ টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে, আবার শেষ জীবনে স্বাস্থের উন্নতির জন্যে সব টাকা খরচ করে। তাই সবসময় স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়