বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

জনবল সঙ্কটেও চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে

জনবল সঙ্কটেও চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে
আলআমিন হোসাইন ॥

জনবল সঙ্কটেও চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে। সন্তোষজনক সেবা প্রদানে জেলায় মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় কমেছে মা ও শিশু মৃত্যুর সংখ্যা। বেড়েছে স্বাভাবিক প্রসব সেবা। তবে দুর্গম চরাঞ্চলে নদীর ক্রমাগত ভাঙ্গনের ফলে সেখানে স্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় অন্য স্থানের মতো মানুষজন নিয়মিত সেবাগ্রহণ করতে পারছেন না। ফলে চরাঞ্চলের নারীরা সরকারিভাবে বিদ্যমান বিনামূল্যের পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া সব ধরনের পরামর্শ ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত থাকছেন কিশোরীসহ গর্ভবতীরাও। তাই প্রয়োজন দেখা দিয়েছে ভাসমান স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনের। আর জনবল সঙ্কট পূরণে প্রয়োজন শূন্যপদে নিয়োগ।

চাঁদপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জেলায় জন্মদানে সক্ষম দম্পতির সংখ্যা ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬শ’ ৫৭ জন। এর মধ্যে অস্থায়ী পদ্ধতি হিসেবে খাবার বড়ি গ্রহণ করছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮শ’ ৬৭, কনডম ২৬ হাজার ৩শ’ ৩২ ও ইনজেকটেবলস ৭২ হাজার ৮শ’ ৮৪। দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি হিসেবে আইইউডি ১৫ হাজার ২শ’ ৪৮, ইমপ্ল্যান্ট ২৬ হাজার ৪শ’ ৪৭। স্থায়ী হিসেবে ৫ হাজার ২শ’ ৫৫ জন পুরুষ ও ৩৫ হাজার ৬শ’ ৮০ জন নারী পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুরে শহর অঞ্চলের মতো গ্রামাঞ্চলেও নারীরাই বেশি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির আওতায় আছেন। প্রাপ্ত সরকারি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চাঁদপুরে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো খাবার বড়ি ও ইনজেকশন। বিশেষ করে খাবার বড়ি সম্পর্কে কম-বেশি সব নারীর ধারণা আছে বলে মনে করেন পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা।

চাঁদপুর জেলায় ৮টি মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। মানোন্নীত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে ৩১টি, সপ্তাহের ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা ডেলিভারি সেবা দেয়ার মতো কেন্দ্র রয়েছে ৬১টি, সদর ক্লিনিক ৭টি, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৪টি এমসিএইচ ইউনিট, স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে ৩শ’ ৭২টি, স্বাস্থ্য বিভাগীয় রুরাল ডিসপেনসারি (আরডি) ১৪টি ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ২শ’ ১৮টি (চলমান) এবং কৈশোরবান্ধব কর্নার ১৮টি। জেলা পর্যায়ে একটি এবং উপজেলা পর্যায়ে ৫টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে।

সেবা পরিস্থিতি

জেলায় বিগত বছরে প্রসব সেবার তুলনামূলক বিবরণ সন্তোষজনক। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাভাবিক প্রসব ছিলো ৩ হাজার ১শ’ ৬৯ জন, সেখানে গেল ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১০ হাজার ৪শ’ ৩১ জন। অর্থাৎ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত জেলায় সর্বমোট প্রসব হয়েছে ৩৯ হাজার ৮শ’ ২৬। এর মধ্যে স্বাভাবিক প্রসব সেবা ২৭ হাজার ৭শ’, যার হার ৭০; সিজারিয়ান প্রসব ১২ হাজার ১শ’ ২৬, যার হার ৩০। উক্ত সেবার বিবরণ থেকে জানা যায়, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাভাবিক প্রসব ১৬ হাজার ৭শ’ ৩০, যার হার ৬০; বাড়িতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা ৮ হাজার ৫৮, যার হার ২৯ এবং প্রশিক্ষণবিহীন ব্যক্তি দ্বারা ২ হাজার ৯শ’ ১২, যার হার ১১। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রসব হয়েছে ৬ হাজার ৫শ’ ৭৪, যার হার ৩৯; মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৮শ’ ৪০, যার হার ৫; সিজারিয়ান ১শ’ ১৭, যার হার ১। উক্ত সময়ে ১শ’ ৩০ নবজাতক (২৮ দিন বয়সী) এবং ২৭ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। সে সময় দিনে ২৪ ঘণ্টা সপ্তাহে ৭ দিন প্রসব সেবা কেন্দ্রের সংখ্যা ছিলো ৭৮টি।

জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২১ সালে জেলায় সর্বমোট প্রসব হয়েছে ৪০ হাজার ২শ’ ৯০। এর মধ্যে স্বাভাবিক প্রসব সেবা ২৮ হাজার ৪শ’ ৫৪, যার হার ৭১; সিজারিয়ান প্রসব ১১ হাজার ৮শ’ ৩৬, যার হার ২৯। সেবার বিবরণ থেকে জানা যায়, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ১৮ হাজার ৮শ’ ৩৯, যার হার ৬৬; বাড়িতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা ৬ হাজার ৯শ’ ৫৯, যার হার ২৪ এবং প্রশিক্ষণবিহীন ব্যক্তি দ্বারা ২ হাজার ৬শ’ ৫৬, যার হার ৯। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রসব হয়েছে ৭ হাজার ৯শ’ ৬৪, যার হার ৪২; মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসব ১ হাজার ৫৩, যার হার ৬; সিজারিয়ান ৬৫, যার হার ১। উল্লেখিত সময়ে ১শ’ ৭১ নবজাতক এবং ১৯ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। সে সময় দিনে ২৪ ঘণ্টা সপ্তাহে ৭ দিন প্রসব সেবা দেয়ার মতো কেন্দ্রের সংখ্যা ছিলো ৬১টি।

জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২২ সালে জেলায় সর্বমোট প্রসব হয়েছে ৪০ হাজার ৮শ’ ৫২। এর মধ্যে স্বাভাবিক প্রসব সেবা ২৮ হাজার ২শ’ ৩৯, যার হার ৬৯; সিজারিয়ান প্রসব ১২ হাজার ৬শ’ ৬১, যার হার ৩১। জানা যায়, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ২০ হাজার ৫শ’ ৭৮, যার হার ৭৩; বাড়িতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা ৫ হাজার ৫শ’ ৮০, যার হার ২০ এবং প্রশিক্ষণবিহীন ব্যক্তি দ্বারা ২ হাজার ৮১, যার হার ৭। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রসব হয়েছে ৮ হাজার ২শ’ ৯১, যার হার ৪০; মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসব ১ হাজার ২শ’ ৫১, যার হার ৬; সিজারিয়ান ৭৯, যার হার ১। উক্ত সময়ে ১শ’ ২০ নবজাতক এবং ২৯ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। সে সময় দিনে ২৪ ঘণ্টা সপ্তাহে ৭ দিন প্রসব সেবা কেন্দ্রের সংখ্যা ছিলো ৫৮টি।

২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে চাঁদপুর জেলার ১৫ বছরের সেবার তুলনামূলক বিবরণ পর্যালোচনা করে জানা যায়, মোট প্রজনন হার হ্রাস পেয়েছে ০.৬৬। বৃদ্ধি পেয়েছে খাবার বড়ি গ্রহীতা, যার সংখ্যা ৪১ হাজার ৬শ’ ৮৮ জন, হার ৪.৪৩; কনডম গ্রহীতা ১৪ হাজার ৯শ’ ৩৯ জন, যার হার ২.৭৫; ইজেকটেবলস ৪ হাজার ৪শ’ ৯৩ জন, যার হার -১.১০; আইইউডি গ্রহীতা ৬ হাজার ৮শ’ ৬০ জন, যার হার ১.১৯; ইমপ্ল্যান্ট গ্রহীতা ২৩ হাজার ৬শ’ ৯ জন, যার হার ৪.৮০, পুরুষ বন্ধ্যাকরণ ২ হাজার ৬শ’ ৮২, যার হার ০.৪৮; মহিলা বন্ধ্যাকরণ ৮ হাজার ৭৭ জন, যার হার ০.৮৫। এ সময়ে সর্বমোট গ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৩শ’ ৪৮ জন এবং সর্বমোট হার ১৩.৩২।

সফলতা

জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অর্জন ঈর্ষণীয়। বিশেষ অর্জনসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এই বিভাগের ইনোভেশন কার্যক্রম নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণ এবং মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যু হার কমানোর অনলাইন পর্যবেক্ষণ সফটওয়্যার ‘মা ও শিশু সেবা ব্যবস্থাপনা’ এবং www.pregnantmothercare.gov.bd -এর গর্ভবতী, প্রসব এবং প্রসব-পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা সেবা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যু হার হ্রাস পাওয়ায় চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ২০১৯ সালে জনপ্রশাসন পদকে ভূষিত হন। ২০২০ সালে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের নতুন ইনোভেশন কার্যক্রম ‘চরাঞ্চলে নিরাপদ প্রসব’ হাইমচর উপজেলার প্রমত্তা মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে ৪নং নীলকমল ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করা হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ইনোভেশন কার্যক্রম ‘নাইওর’ সর্বপ্রথম চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন এবং চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত নাইওর প্রোগ্রাম প্রশংসিত হওয়ায় আইইএম ইউনিট কর্তৃক সারাদেশে ‘নাইওর চাঁদপুর মডেল’কে অনুসরণ করার পরিপত্র জারি করে।

চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনার সকল পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করার জন্যে বিশেষ ট্র্যাকিং ব্যবস্থা গ্রহণ, জেলার সকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাদের বাসস্থানে দিনে ২৪ ঘণ্টা সপ্তাহে ৭ দিন অবস্থান নিশ্চিতকরণ এবং করোনাকালে জেলায় বিভাগীয় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা বৃদ্ধি ও সিজারিয়ান প্রসব সেবার হার হ্রাস করার কার্যকারিতা প্রতিপন্নে গুরুত্বারোপ করা হয়। এদিকে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণের মাধ্যমে সেবার মান বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রসব সেবা বৃদ্ধিতে ২৪/৭ সেবা কেন্দ্র চালু রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। এ প্রশংসনীয় কাজটির জন্যে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাদের কোয়ার্টারে অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। যেখানে সকল পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও মহিলা স্যাকমোগণ তাদের জন্যে নির্ধারিত কোয়ার্টারে অবস্থান করেন। ফলে এসব সেবা কেন্দ্রে প্রসব সেবার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর্মীদের কর্মস্থলের বাসায় অবস্থান নিশ্চিতকল্পে অফিস সময়ের পর আয়া/নিরাপত্তা প্রহরীকে ফোনকলের মাধ্যমে এবং পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, মহিলা স্যাকমোকে উক্ত ফোন থেকে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সেবা কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। যে সকল সেবা কেন্দ্রে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা এবং স্যাকমো (মহিলা) উভয়ই পদায়ন রয়েছেন, তাদের মধ্যে যে কোনো একজনকে পার্শ্ববর্তী সেবা কেন্দ্রে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংযুক্ত আদেশ/বদলির মাধ্যমে ২৪/৭ সেবা কেন্দ্র চালু রাখা হয়। চাঁদপুর জেলায় নিরাপত্তাপ্রহরীর পদ সংখ্যা ৫৭, বর্তমানে কর্মরত ৪০। আয়ার পদ সংখ্যা ৬৫, বর্তমানে কর্মরত ৫২। তন্মধ্যে সদর ক্লিনিক, এমসিএইচ ইউনিট ও এমসিডব্লিউসিতে আয়া পদায়নকরত বাকিদের অন্যান্য সেবা কেন্দ্রে পদায়ন করা হয়েছে। ২৪/৭ প্রসব সেবা চলমান রাখার স্বার্থে যে কেন্দ্রে আয়া আছে সে কেন্দ্রে নিরাপত্তাপ্রহরী রাখা হয়নি এবং যে কেন্দ্রে নিরাপত্তা প্রহরী আছে সে কেন্দ্রে আয়া রাখা হয়নি। সেবা কেন্দ্রের বাসস্থান খালি থাকা সাপেক্ষে আয়াকে সেবা কেন্দ্রের বাসায় অবস্থান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ জানান, তিনি দায়িত্ব গ্রহণকালে ২০১৬ সালে কার্যক্রমে ৬৩তম জেলা ছিলো চাঁদপুর। বর্তমানে প্রসব সেবার সাথে জড়িত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাগণের কর্মস্থলের বাসায় অবস্থানসহ ২৪ ঘণ্টা সপ্তাহে ৭ দিন প্রসব সেবা প্রদানে সারাদেশে শীর্ষে চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। এছাড়া প্রসব সেবার সংখ্যায় পবিরার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বিভিন্ন জেলার মধ্যে শীর্ষ চারে আমাদের অবস্থান। গত সেবা সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম এবং সারা দেশে পঞ্চম হয় চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম। নিয়োগ কার্যক্রম সম্পর্কে ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ বলেন, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৮ সালে দুটিসহ মোট ৬টি রাজস্ব নিয়োগ এবং চুক্তিভিত্তিকভাবে ছয়টি উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী নির্মাণ পরিকল্পনায় হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভবন নির্মাণ, হাইমচরের চরভৈরবী, নীলকমলে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। জেলার ২২টি একতলাবিশিষ্ট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রকে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে তিনতলায় উন্নীতকরণ এবং ফরিদগঞ্জের কড়ৈতলী ও শাহরাস্তির নাওড়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র পুনঃনির্মাণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রতি মাসে স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম, দলগত উঠোন বৈঠক, বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাউন্সেলিং বা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়। জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আওতাধীন ৮১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে ৬১টিতে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদায়ন রয়েছে। বাকি ২০টিতে স্থানীয় পরিকল্পনায় সপ্তাহে দুদিন উক্ত কর্মীদের দ্বারা সেবা দেয়া হয়।

ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ বলেন, চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে জনবল সঙ্কট দূর করতে হবে। দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য পৌঁছে দিতে জনবলের প্রয়োজন রয়েছে। যেহেতু চরাঞ্চলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপনে ঝুঁকি রয়েছে, তাই সেখানকার জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানে ভাসমান স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা প্রয়োজন। এতে সেখানকার মানুষজন খুব সহজেই নিজেদের হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়