প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুরে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু
সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ১৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে ডেঙ্গু যাতে ছড়াতে না পারে সে লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মাইকিং করা হচ্ছে শহরে।
|আরো খবর
সরেজমিনে গিয়ে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দিন দিন ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যেখানে এপ্রিল মাসে ৪ জন, মে মাসে ৮ জন, জুন মাসে ৬৮ জন রোগী ভর্তি হন, সেখানে চলতি জুলাই মাসের ৬ দিনে ভর্তি হয়েছেন ২৯ জন। প্রতিদিনই এ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। রোগীদের সেবা দিতে ১৬ শয্যার পৃথক দুটি ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার ফিরোজপুর থেকে আসা রাজিব হোসেন নামে এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী জানান, গত দুদিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। জ্বরের পরিমাণ হয় ১০৩ ডিগ্রি। পরে গ্রামের বাজার থেকে তিনি ওষুধ কিনে খান। শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় বাজারের আরেক ওষুধের দোকান থেকেও ওষুধ কিনে খান। তাতেও কোনো উপকার না হওয়ায় হাজীগঞ্জেই চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হন। পরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হন।
চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, বর্ষায় সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। চাঁদপুরে আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী। আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সুস্থ হয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রোগী ফিরেও যাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কোনো রোগী মারা যায়নি। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় সেজন্যে সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি নাগরিককেই সচেতনতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে পৌরসভাকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীরা যাতে সহজেই চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন সেজন্যে হাসপাতালে আলাদা কর্নার করা হয়েছে। সেখানে নারী-পুরুষভেদে দু ভাগে ১৬টি বেড রয়েছে। হাসপাতালে স্বাস্থ্যগত যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা রয়েছে। ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন বলেন, চাঁদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সার্বিক পরিস্থিতি ভালো না। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিং করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু হলে বাসায়ও চিকিৎসা নেয়া যায়। শারীরিক পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে। চিকিৎসককে নিয়মিত ফলোআপ জানাতে হবে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকই সিদ্ধান্ত দিবেন রোগীর চিকিৎসা কোথায় করালে ভালো হবে। প্রেশার কমলে কিংবা কোনো খাবার খেতে না পারলে অর্থাৎ বমি হলে কিংবা রক্তের প্লাটিলেট কমে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সেবা প্রদানে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে কোনো সঙ্কট নেই। সঙ্কট থাকতে পারে মানুষের সচেতনতার। একমাত্র সচেতনতাই পারে আমাদেরকে যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদেরকে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। ফুলের টব কিংবা ভাঙ্গা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করতে হবে। যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করতে হবে। কারণ এ সময় এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে। অন্যদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার করতে হবে। এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলা ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।
সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখলে এবং ছোট ছোট কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে ডেঙ্গু জ্বর থেকে যেমন মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে, তেমনি আশপাশের মানুষও সুস্থ থাকবে।
চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ ফরিদা ইলিয়াছ বলেন, চাঁদপুর পৌরসভায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ চলছে। মশা নিধনে পর্যাপ্ত ওষুধ ক্রয় করা হয়েছে। প্রতিদিনই পৌর এলাকার ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে সুপারভাইজারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এডিস মশার লার্ভা যাতে না হয় সেজন্যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে।