বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার : ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল)

জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রয়োজন

জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রয়োজন
আলআমিন হোসাইন ॥

দুরন্ত শৈশব। পড়াশোনা আর খেলার মাঠে ছুটেচলা। অদম্য চেষ্টা আর অসীম সাহসে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ছিলো সঙ্গী। ছোটবেলায় যখনই সময় পেতেন তখনই হাসপাতালে রোগীদের দেখতে চলে আসতেন সৈয়দ আহমদ (কাজল)। স্বপ্ন দেখতেন চিকিৎসক হবেন। গণপূর্তে বাবার চাকুরির সুবাদে প্রকৌশলীদের সান্নিধ্যে পেলে ভাবতেন নিজেও প্রকৌশলী হবেন। আবার স্কুল শেষে যখন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতেন তখন ভাবতেন সাংবাদিক হবেন। মূলত ছোটবেলায় এমনই চিন্তা-ভাবনার জগতে বাস করতেন সৈয়দ আহমদ (কাজল)। বর্তমানে তিনি চিকিৎসক হিসেবেই মানুষকে সেবা প্রদানে নিয়োজিত আছেন। রোগীদের মুখের হাসিকেই নিজের হাসিতে রূপান্তর করেছেন তিনি।

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত। তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা চাঁদপুর শহরে। হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে চিকিৎসকের মতো মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করেন।

সম্প্রতি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘চিকিৎসাঙ্গন’ বিভাগের মুখোমুখি হন ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল)। এ সময় তিনি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মতো একটি চ্যালেঞ্জিং জায়গায় সেবা প্রদানের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : আলহামদুলিল্লাহ। পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তা’য়ালার অশেষ রহমতে ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : মুসলমানদের আত্মশুদ্ধির মাস পবিত্র মাহে রমজান অতিবাহিত হচ্ছে। এ সময় রোজাদারদের সুস্থ থাকতে করণীয় কী?

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : পবিত্র মাহে রমজান শরীরের জাকাত-স্বরূপ। রমজান মাস আমাদেরকে আত্মসংযমী হতে শেখায়। পরিমিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে শেখায়। রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক ইবাদতগুলোর একটি। নিজেকে পরিশুদ্ধ এবং আল্লাহর প্রিয়পাত্র বানানোর মাধ্যম। রোজার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে শরীর সুস্থ রাখা আবশ্যক।

রমজানে সুস্থ থাকতে অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। নিঃসন্দেহে পুরো দিন রোজা রাখার পর ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা জাগবে, কিন্তু ইফতারে বেশি খাওয়ার ফলে ক্লান্তি, পেটে ব্যথা এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া বেশি ক্যালোরি ও জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকতে হবে। খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ দুগ্ধ, প্রোটিন ও আঁশজাতীয় খাবার রাখতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : আমার জন্ম চাঁদপুরে। চাঁদপুর শহরের দক্ষিণ গুণরাজদীতে আমার শৈশব কেটেছে। সে সময় এলাকাভিত্তিক সংস্কৃতি চর্চা হতো। আমরা তাতে উল্লাস করতাম। ঘুড়ি ওড়াতাম। এটি আমার সখ। আমার মা তেঁতুলতলাস্থ দক্ষিণ গুণরাজদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সে সুবাদে খুব ছোটবেলা থেকেই মায়ের সাথে স্কুলে যেতাম। সে স্কুলে আমি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করি। আমার বাবা গণপূর্তে চাকুরি করতেন। বাবার চাকুরির সুবাদে স্ট্র্যান্ড রোডস্থ গণপূর্তের কোয়ার্টারে চলে আসি এবং ৬নং আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। চাঁদপুর প্রেসক্লাব, চাঁদপুর ক্লাব মাঠ ও ঐতিহাসিক বেগম জামে মসজিদের সামনে তৎকালে বিশাল মাঠে আমরা খেলাধুলা করতাম। এক কথায় সোনালি শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : ১৯৯৬ সালে আমি চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সব বিষয়ে লেটার মার্কসহ স্টার পেয়ে এসএসসি পাস করি। ১৯৯৮ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করি। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হৃদরোগের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলাম। কখনোই পড়াশোনায় ফাঁকি দিতাম না। হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াবস্থায় ‘পণ্ডিত স্যার’ হিসেবে খ্যাত নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী স্যারের সান্নিধ্য লাভ করি। স্যার আমাদের নিজের সন্তানের মতো করে পড়াতেন। তিনি আমাকে খুবই আদর-স্নেহ করতেন। স্যারের বাসা গুয়াখোলায়। স্যারের কাছ থেকে আমি জীবনমুখি শিক্ষা গ্রহণ করি। প্রতিযোগিতামূলক জীবনে কীভাবে টিকে থাকতে হয় স্যার আমাদের সে শিক্ষা দিতেন। স্যারের তত্ত্বাবধানে আমি ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তিলাভ করি। যা আমার শিক্ষাজীবনের গতি বহুগুণে ত্বরান্বিত করে। ফলে ক্লাস নাইনে পড়াশোনার প্রতি আরো উৎসাহী হই। আমাদের সময় অর্থাৎ এসএসসি ১৯৯৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছিলো তুখোড় মেধাবী। পড়াশোনা ঘিরে সবার মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনোভাব ছিলো। আমরা রুটিন করে পড়াশোনা করতাম। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন সম্পন্ন করে ফেলতাম। ক্লাসে আমার অবস্থান সবসময় প্রথম কিংবা দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা বিজ্ঞান ক্লাবে অংশ নিতাম। পাশাপাশি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হওয়ার ভাবনাটি সূচনা হলো কীভাবে?

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : আগেই বলেছি, আমি চাঁদপুরের সন্তান। চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সামনে আমাদের বাসা এবং তৎসংলগ্ন স্কুলে আমার প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ। সে সূত্রে যখনই সময় পেতাম হাসপাতালে চলে আসতাম। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোগীদের কাছে যেতাম। কথা বলতাম। ফলে আমার ভেতরে চিকিৎসক হওয়ার ভাবনা জন্মে। এর পেছনে উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে আমি মনে করি, একমাত্র চিকিৎসক এবং শিক্ষকতা পেশায় স্বাচ্ছন্দ্যে সৎভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব।

আবার বাবার চাকুরি সুবাদে প্রকৌশলীদের সান্নিধ্য লাভ করেছি। তাঁদের দেখে মাঝে মাঝে আমারও মনে হতো, প্রকৌশলী হবো। আবার যখন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে যেতাম, তখন মনে হতো আমি সাংবাদিক হবো। রঙিন এমন অনুভূতি তখন মনকে ভীষণ নাড়া দিতো। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ভর্তি পরীক্ষায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ লাভ করি। পরে আমি মেডিকেলেই ভর্তি হই। আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহ আমাকে চিকিৎসক হিসেবে কবুল করেছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্ন শেষে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)-এর সনদ লাভ করি। ২০০৭ সালে জন্মস্থান চাঁদপুরে ফিরে বেসরকারি চাঁদপুর মিডল্যান্ড হাসপাতালে যোগ দিই। হাসপাতালটি তখন রহমতপুর কলোনীতে ছিলো। সেখানে প্র্যাকটিস করার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিই। আমার এখনো মনে পড়ে, একজন বৃদ্ধ রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্যে আমাকে বাসায় যেতে হয়। আমি সে বৃদ্ধকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ করে তুলি। ফলে তিনি আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন। একজন নবীন চিকিৎসক হিসেবে সে দিনের প্রশান্তি আজও মনে অনুভব করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরে যোগদান করেছেন কবে?

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : ২৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৯ সালে মতলব উত্তরের বাগানবাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করি। পরে ২০১৩ সালে চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে যোগ দিই। এর মাঝে উচ্চতর ডিগ্রির জন্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। ডিগ্রি সম্পন্ন করে পূর্বের কর্মস্থলে ফিরে এসে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থার সার্বিক দিক নিয়ে কিছু বলুন।

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : হাসপাতালটি আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট হলেও আমাদেরকে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হয়। বলে রাখা ভালো, এই হাসপাতালে শুধু চাঁদপুর জেলার মানুষই নন, পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর, নোয়াখালী, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর ও লাকসাম থেকেও বহু রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। ফলে অনেক সময় আমাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হবে। তবে রোগীদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা কখনোই অবহেলা কিংবা গড়িমসি করি না। রোগীদের সেবা প্রদানের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করি। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান আরো বৃদ্ধি করতে স্থায়ী নিয়োগের মাধ্যমে জনবল বাড়াতে হবে। কেননা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে অনেক সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাদের জবাবদিহিতা খুব বেশি একটা থাকে না। জনগণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রয়োজন। সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার কাছে কোন্ ধরনের রোগী বেশি আসে?

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : আমি যেহেতু হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত, সেহেতু জরুরি বিভাগে আসা যে কোনো রোগীকেই সেবা প্রদান করে থাকি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : রোগীদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, শারীরিক যে কোনো সমস্যায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। কোনোভাবেই চিকিৎসক ব্যতীত অন্য কারো পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করবেন না। সরকারি হাসপাতালে চব্বিশ ঘণ্টাই চিকিৎসকগণ সেবা প্রদান করে থাকেন। সর্বোপরি, নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা অবলম্বন করুন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাজীবনের একটি সুখের এবং একটি দুঃখের স্মৃতির কথা বলুন।

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে মানুষকে সুস্থ করে তোলাই আমার সুখের স্মৃতি। দুঃখের স্মৃতি তেমন নেই, তবে যখন রোগীর স্বজন চিকিৎসক কিংবা চিকিৎসাসেবার সাথে জড়িতদের সাথে খারাপ আচরণ করেন তখন খুব দুঃখ লাগে। দুঃখ পাই এই ভেবে যে, আমরা কাদের সেবায় নিয়োজিত আছি। আমাদের গবেষণা, আমাদের মেধা-শ্রম তো রোগীদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই। মনে রাখতে হবে, চিকিৎসক এবং রোগীর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই রোগমুক্তির অন্যতম সোপান। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব নীতিমালা থাকে, রোগীদের সে নীতিমালা অনুযায়ী সেবা গ্রহণের মন-মানসিকতা থাকতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : আগেই বলেছি, যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হলে আমাদেরকে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জনবল বাড়াতে হবে। কম জনবল দ্বারা একজন চিকিৎসক যেমন সেবা দিয়ে আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন না, আবার একজন রোগীকেও অনেক সময় দ্রুত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না। ফলে চিকিৎসক যতোই আপ্রাণ চেষ্টা করুক না কেনো, রোগীকে আর সন্তুষ্টি করতে পারেন না। এতে রোগীদের অভিযোগের শেষ থাকে না। এ সমস্যা নিরসনে জনবলে ঘাটতি রাখা যাবে না।

আমাদের মনে রাখতে হবে, যে কোনো হাসপাতালের জন্যে জরুরি বিভাগ একটি চ্যালেঞ্জিং জায়গা। এজন্যে জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়। এছাড়া একটি সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের রোগী আসেন, এজন্যে একজন চিকিৎসক অনেক সময় রোগনির্ণয়ে গবেষণার প্রয়োজন হয়, সে সুযোগ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে প্রথম যে তিনটি কাজ করতেন?

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে চিকিৎসাব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতাম। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতাম। তৃতীয়ত, স্বাস্থ্য বীমা চালু করতাম, যেমনটা বহির্বিশে^ চালু রয়েছে। বিশ্বে স্বাস্থ্য বীমা একটি জনপ্রিয় আর্থিক সেবা মাধ্যম। একজন ব্যক্তির অসুস্থতায় চিকিৎসা ব্যয় বহন করার জন্যে বীমা কোম্পানির সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়ে থাকে, সেটাই স্বাস্থ্য বীমা। অসুস্থ হলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে সাধারণত স্বাস্থ্য বীমা তালিকাভুক্ত হাসপাতালগুলোতে ‘ক্যাশলেস’ সেবা অথবা সেবা গ্রহণ পরবর্তীকালে গ্রাহককে বীমার অর্থ প্রদান করে থাকে। একজন ব্যক্তি নিজের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বিপরীতে নির্দিষ্ট অংকের অর্থ এই উদ্দেশ্যে জমা করেন যেন দুর্ঘটনা বা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে ওই বীমা প্রতিষ্ঠান সেই ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়ের একটি অংশ বা একটি বড় অংশ প্রদান করে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : রোগমুক্ত থাকার প্রধান এবং অন্যতম উপায় হলো ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। প্রত্যেককেই নিজ নিজ ধর্মের প্রতি অনুরাগী হতে হবে। একজন মুসলমান যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্যে ওজু (পবিত্রতা অর্জন) করেন তখন কিন্তু তিনি একেবারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এতে করে শরীর ও মন ভালো থাকে, মনে প্রশান্তি অনুভূত হয়। শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন হয়। পাশাপাশি মাদকমুক্ত থাকতে হবে। নিয়মিত হাঁটাচলা এবং ব্যায়াম করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি গ্রহণ করতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমোতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসরে কী করেন?

ডাঃ সৈয়দ আহমদ (কাজল) : অবসরে পরিবারকে সময় দেয়াই আমার মূল লক্ষ্য। এছাড়া ধর্মীয় বই ও সংবাদপত্র পড়ি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়