প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
শিশুর ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা প্রতিরোধে করণীয়
শীতের সকাল খুব ঠাণ্ডা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়ে। আবার সন্ধ্যা বা রাতে জেঁকে বসে শীত। কখনো হয়তো শুষ্ক-দমকা বাতাসে হুট করেই বেড়ে যায় শীতের তীব্রতা। আবহাওয়ার এমন তারতম্যের সঙ্গে যে কারও খাপ খাওয়ানো কঠিন। শিশুদের ক্ষেত্রে তো আরও সমস্যা। এ কারণে এই সময়ে শিশুদের কমন কোল্ড বা সাধারণ ঠা-া লাগা খুবই স্বাভাবিক। যে ঠা-া থেকে হতে পারে জ্বর, গলাব্যথাসহ অন্যান্য অনেক জটিলতা। এসব সমস্যা থেকে শিশুদের নিরাপদে রাখার জন্য ঠাণ্ডার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়গুলো জানা দরকার।
ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার প্রকারভেদ
১. কাশি
শিশুরা ঠা-াজনিত যে কয়েকটি সমস্যায় ভোগে, কাশি তার মধ্যে অন্যতম। ক্রুপ কাশি, শুকনা কাশি, হুপিং কাশিসহ কয়েক রকম কাশি রয়েছে।
ক্রুপ কাশি : এই কাশিতে শিশুর ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালি ফুলে যায়। স্বরতন্ত্র ফুলে যাওয়ার কারণে কাশির সময় একধরনের আওয়াজ হয়।
শুকনা কাশি : এটি সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের জন্য হয়ে থাকে। এ ধরনের কাশি ঘুমের সময় বা উষ্ণ তাপমাত্রায় শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
সিক্ত কাশি : শ্বাসনালিতে শ্লেষ্মা জমে যাওয়ার কারণে এই কাশি হয়।
হুপিং কাশি : শিশুর হুপিং কাশি হলে বারবার কাশি হতে থাকে। অনেক সময় কাশি শুরু হলে একবারে ৫ থেকে ১৫টি কিংবা আরও বেশি কাশি হতে পারে। মূলত রাতের দিকে এ ধরনের কাশি বাড়ে। এই কাশি হলে শ্বাস নেয়ার সময় শব্দ হয়।
শিশুদের কাশির কারণ
বিভিন্ন কারণে শিশুদের কাশি হতে পারে। তবে এগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ফ্লু বা ঠা-া লাগা। গলায় জমে থাকা শ্লেষ্মা এবং গলা ও শ্বাসনালি ফুলে যাওয়ায় সৃষ্ট অস্বস্তির কারণে কাশি হয়ে থাকে।
২. সর্দি বা ঠা-া লাগা
শিশুদের সর্দি লাগার ফলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক ও চোখ থেকে পানি পড়ে। প্রচ- মাথাব্যথা হয়। এমনকি কখনো কখনো সর্দির কারণে জ্বরও আসতে পারে।
৩. ফ্লু
ফ্লুর সংক্রমণ হলে সাধারণ সর্দি কাশির মতোই লক্ষণ দেখা দেয়। এ অবস্থায় শিশুর নাক দিয়ে পানি পড়ে। কখনো কখনো জ্বর এমনকি ডায়রিয়া বা বমিও হতে পারে। ফ্লুর কারণে কাশি সাধারণত শুষ্ক হয়ে থাকে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
ঠা-া লাগা, জ্বর, সর্দি, কাশি-এগুলো শিশুদের খুবই সাধারণ সমস্যা। তাই অধিকাংশ সময়ই এসব সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যথাযথ যতœ ও বিশ্রামেই শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে যদি নি¤েœাক্ত লক্ষণগুলো দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
* সাতদিনের বেশি সময় ধরে শিশু যদি শুকনা কাশিতে ভোগে।
* যদি কাশির সঙ্গে সর্দি ও জ্বর থাকে।
* শ্বাস নেয়ার সময় যদি কোনো ধরনের আওয়াজ হয় এবং বার বার কাশি হতে থাকে।
* যদি আক্রান্ত শিশুর ক্ষুধা এবং ওজন কমে যায়।
* কাশির কারণে যদি শিশু ঘুমাতে না পারে।
* শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে, যেমন-দ্রুত শ্বাস বা বুকের নিচের অংশ ভিতরের দিকে ঢুকে যেতে থাকলে।
ঠা-াজনিত সমস্যা প্রতিরোধের উপায়
নি¤œলিখিত উপায়ে আপনার শিশুকে ঠা-াজনিত সমস্যার প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পারেন।
* ঠা-া আবহাওয়ায় শিশুর শরীর চাদর বা গরম জামাকাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন।
* হাঁপানির কারণে যদি বারবার কাশি হয়, তবে হাঁপানির জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
* শিশুকে সংক্রমণ প্রতিরোধের টিকা দিন।
* সাধারণ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। যেমন-নিয়মিত বিরতিতে হাত ধোয়া, নাকে-মুখে হাত না দেয়া ইত্যাদি।
শিশুর কাশিতে বাড়িতে করণীয়
* বুকের দুধসহ স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যাওয়া।
* শিশুকে গরম রাখার জন্য পর্যাপ্ত কাপড় পরিধান করানো।
* হালকা গরম শর্ষের তেল বা অলিভ-ওয়েল দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করা।
* ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ানো।
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখাসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক যে কোনো প্রশ্ন পাঠান।
ই-মেইল : [email protected]