রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

ছোটদের মানস গঠনে শিশুসাহিত্য
অনলাইন ডেস্ক

সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে শিশুসাহিত্য সর্বজনস্বীকৃত। আনন্দ গ্রহণ করার অধিকার যেমন বড়দের রয়েছে তেমনি ছোটরাও যাতে এ রস থেকে বঞ্চিত না হয় লেখকরা সেদিকেও দৃষ্টি রেখেছেন। তবে সব সাহিত্য ছোটদের সামনে হুট করে চলে এলে বিপদের আশঙ্কা থাকে। ছোটরা স্বাভাবিকভাবে স্বভাবের দিক দিয়ে অত্যন্ত কোমল চরিত্রের হয়; অনেকটা কুমারের হাতে থাকা নরম কাদার মতো। তাই তাদের যদি সুন্দরভাবে গড়ে তোলা না যায় তাহলে সেটা একটা সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্যে সমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।

শিশুদের মানস গঠনের চিন্তা মাথায় রেখে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে অনেক আগেই শিশু-কিশোরদের উপযোগী বইপত্র লেখা শুরু হয়েছে। অনেক অনেক বছর আগে হ্যান্স এন্ডারসন তার ফেয়ারি টেলস, এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড বই দুটি ছোটদের সামনে এনে তাদের একেবারে অভিভূত এবং চমকে দিয়েছিলেন। আমরা দেখেছি শত শত বছর ধরে সেই বইগুলো ছোট-বড় সবাইকে সমান আনন্দ দিয়ে এসেছে। শিশুসাহিত্য পাঠ করে শুধু যে শিশুরাই আনন্দ লাভ করতে পারে বিষয়টা কিন্তু তেমন নয়। বরং ছোটদের কথা মাথায় রেখে লেখা অসংখ্য বই পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী সব পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়ে এসেছে। জে কে রাওলিংয়ের নাম সবাই জানি। তার লেখা ‘হ্যারি পটার’ সিরিজটি বিশ্বব্যাপী তুমুল আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে।

একটা সময় শিশুসাহিত্য এবং তার রচনাকারী মূলধারায় খুব একটা পাত্তা পেতেন না। তবে সময়ের পরিবর্তনে ধারণা পাল্টেছে। পৃথিবীর সবাই দেশেই শিশুসাহিত্যিকরা মর্যাদার সঙ্গে তার লেখা অব্যাহত রেখেছেন। বাংলায় শিশুসাহিত্যের সূচনা হয় ‘নীতিকথা’ নামক একটি বইয়ের মাধ্যমে। যদিও এটি একাডেমিক বই হিসেবে লিখিত হয়েছিলো, তথাপি শিশু-কিশোরদের মনে খুব সহজেই জায়গা করে নিতে পেরেছিলো। বাংলা ভাষায় লিখে যে সমস্ত লেখক তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন তাদের সবাই ছোটদের জন্যে কিছু না কিছু লিখে গেছেন। এই তালিকায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রায় সবাই আছেন।

এখন অনেক লেখকই আছেন যারা নিজেদের শুধু শিশুসাহিত্যিক হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন। সুতরাং শিশুসাহিত্য যে তার ‘শিশু’ অবস্থা থেকে একটা পরিণত অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছোটরা শিশুসাহিত্য কেনো পড়বে? মাথায় রাখা উচিত আজকে আমরা শিশুদের যেভাবে গড়ে তুলবো তারা সেভাবেই বেড়ে উঠবে এবং নিজেদের আচার-আচরণে তার প্রতিফলন ঘটবে। ছোটবেলা থেকেই আমি প্রচুর পরিমাণে পড়াশোনা করি। শিশুসাহিত্যের নানান শাখায় পূর্বে যেমন বিচরণ করতাম এখনও তেমনই করি।

কয়েকদিন আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। সেখানে কথা বলার এক ফাঁকে উপস্থাপক আমাকে জানালেন, আমার কথা শুনে তিনি বুঝতে পারছেন বেশ ভালো রকম পড়াশোনা করি। দেখুন, আমি নিজে কিন্তু আমার আচরণ এবং কথাবার্তার পরিবর্তন বুঝতে পারিনি। কিন্তু তারা ঠিকই ধরে ফেলেছেন। এটা হলো ছোটকাল থেকে পড়াশোনা করার ফলাফল। সাধারণত স্ক্রিনে ভিডিও দেখলে যে প্রতিক্রিয়া হয়, বই পড়লে তার চেয়ে বেশি ফলাফল পাওয়া সম্ভব। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে আমরা বইয়ের কাছ থেকে সরে এসে পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছি। আমাদের বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও আজ ব্যাপকহারে আধুনিক প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। প্রযুক্তিকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারি না।

কিন্তু সেটা যে সবসময় উপকারই শুধু করে চলেছে বিষয়টা তেমন নয়। বই পড়তে গেলে সেখান থেকে একটা লাইন অথবা একটা শব্দ আমাদের ভাবায়; চিন্তার জগতে একটা আলোড়ন তোলে। আমাদের কল্পনার একটা বিস্তৃত জগতে নিয়ে যেতে পারে বইয়ে পড়া একটা ঘটনা। বড়দের ক্ষেত্রে এটা যেমন স্বাভাবিক; ছোটদের জন্যে তার চেয়েও বেশি স্বাভাবিক। বই মানুষের কল্পনাশক্তি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে; মানুষের ভেতর ন্যায়-নীতিবোধ প্রবলভাবে জাগিয়ে তোলে। একজন বইপড়ুয়া আর যাই করুক না কেনো মন থেকে কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারে না।

বই মনকে পবিত্র এবং নিষ্কলুষ রাখতে সহায়তা করে। আপনার যদি সত্যিকারার্থে দেখার মতো চোখ থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই বইপড়ুয়া এবং না-পড়ুয়াদের মধ্যকার পার্থক্যটা ধরতে পারবেন। সমাজের বাবা-মায়েরা তার সন্তানকে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কোনো গল্প কিংবা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়তে কঠোরভাবে নিষেধ করেন। আবার প্রাথমিক শিক্ষাক্রম এমন যে একটা শিশু তার স্কুলের পড়া শেষ করে সৃজনশীল কোনো বই পড়বার সুযোগই পায় না। এটা শিশুদের মানস গঠনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

একটা শিশু ভেতরে ভেতরে বড় হতে থাকে। সে-সময় তার ভেতরকার বোধশক্তিও জাগ্রত হতে থাকে। আমরা যদি এই সময়ে তাদের জন্যে একটা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারি; তাদের মধ্যে সৃজনশীল কোনো চিন্তা জাগ্রত করতে না পারি তাহলে সে ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক অবস্থা থেকে দূরে সরে যেতে পারে। একটা ভালো শিশুসাহিত্য শিশুদের মনে উৎপাদন করতে পারে সেই সৃজনশীলতা।

সময় পেলে প্রায়ই বিশ্বের বিখ্যাত মানুষদের আত্মজীবনী পাঠ করি। একটা বিষয়ে সবার মধ্যেই দারুণ মিল লক্ষ করেছি শৈশব-কৈশোরে তারা প্রচুর পরিমাণ পড়াশোনা করেছেন। ফলে তাদের জানাশোনার পরিধি বিস্তৃত থেকে বিস্তৃততর হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আরেকটা বিষয় হলো সৃজনশীল কোনো চিন্তা ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। মানুষের বেঁচে থাকার একটা উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা নষ্ট হয়ে গেলে জীবন মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আজকের পৃথিবীটা একদিনেই এখানে এসে পৌঁছেনি।

বহু মানুষের পরিশ্রম এবং সৃজনশীল চিন্তার কারণে পৃথিবীর এই অবস্থান। একজন বিজ্ঞানী চিন্তা করেন নতুন কোনো আবিষ্কারের, একজন দার্শনিক চিন্তা করেন পৃথিবীর নানান কিছু নিয়ে। এই চিন্তাগুলো তাদের মধ্যে জাগ্রত হয় কীভাবে? বই মানুষের সামনে চিন্তার একটা নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। বইয়ের রাজ্যে প্রবেশ করলে একজন মানুষ ভেতরে ভেতরে এমনভাবে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে তখন পৃথিবীর বাকি সবকিছু তার কাছে তুচ্ছ হয়ে ওঠে।

আমার শৈশব শুরু হয়েছে রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা পাঠের মাধ্যমে। কিশোর, মুসা এবং রবিন যখন কোনো অভিযানে যেতো পড়ার সময় মনে হতো আমিও যেনো তাদের সঙ্গে উপস্থিত রয়েছি। বইয়ের প্রতিটা পাতা অদ্ভুত শিহরণ ছড়িয়ে দিত শরীরের প্রতিটি কোষে। বহুদিন তিন গোয়েন্দার মধ্যে বুঁদ হয়ে থেকেছি। এরপর জুল ভার্নের দারুণ সব বই আমি শৈশবেই পড়ে ফেলেছি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘কাকাবাবু’ নামে পুরো একটা সিরিজ লিখেছেন। কী অসাধারণ সেই গল্পগুলো! বই পড়া যে নিছক আনন্দের জন্যে নয়; সেখান থেকে কিছু জ্ঞানও আহরণ করা যেতে পারে এবং পরবর্তীকালে সেটা নতুন চিন্তার দুয়ার খুলে দিতে পারে, সেটা জেনেছি কাকাবাবু পড়ে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়