প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
মমতাময়ী সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী
জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়
মহীয়সী চিকিৎসক সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী। তিনি স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী একজন সমাজহিতৈষী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের সেবায় অনন্য অবদানের জন্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করে। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত একটি জাতীয় এবং দেশের সর্বোচ্চ ‘বেসামরিক পুরস্কার’।
|আরো খবর
ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরীর নাম আমি প্রাইমারি স্কুলে থাকতেই শুনেছি, তবে চোখে দেখিনি। ১৯৯৬ সালে সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুরের সাহিত্য আড্ডার সুবাদে তাঁকে প্রথম দেখি। তবে কাছে যাওয়ার সাহস পাইনি। এরপর দীর্ঘ সময় আর দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। তাঁর স্বামী প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরী। তিনিও ভালো মানুষ ছিলেন, আন্তরিক ছিলেন।
২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশে বইমেলায় আমার লেখা কবিতার বই ‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’ প্রকাশিত হয়। আমি চাঁদপুর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য হওয়ায় বিশ্ব রেডক্রস দিবসের অনুষ্ঠানে আপার সাথে দেখা হয় এবং আমার লেখা বইটি শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ‘হৃদয় চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত তোমার প্রতিটি নিউজ এবং লেখা আমি পড়ে’। সেখান থেকে বিদায় নিয়ে এলাম। মহামারি করোনার কারণে আর দেখা হয়নি।
২০২১ সালে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বিশেষ আয়োজন ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : প্রবাসীদের ভাবনা’ শীর্ষক ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে ৫০ জনের ভাবনা একত্রিত করে আমি ‘প্রবাসী ভাবনা’ বইটি প্রকাশ করি। মূলত মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের উৎসাহে আমি বইটি বের করি। মুহাম্মদ ফরিদ হাসানকে সাথে নিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী আপার চেম্বারে হাজির হলাম। আপা আমাদের দেখেই চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন। তিনি হাসিমুখে বলতে লাগলেন ‘আমার কি সৌভাগ্য দুই লেখক একই সাথে’। সেদিন স্বল্প সময়ে অনেক কথা হয়েছে। কথার এক ফাঁকে আপা কেঁদে দিয়ে বলতে লাগলেন, ‘এক সময় আমি থাকবো না চলে যাবো। সব পড়ে থাকবে। ক্ষণিকের জীবনে তোমাদের দোয়া আর ভালোবাসা ছাড়া আমার আর কিছুই দেয়ার নেই। আমি নিয়মিত তোমাদের লেখা পড়ি।’ তাঁর কথা শুনে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। একজন মানুষ কতোটা উদার ও আন্তরিক হতে পারেন। বিদায় নেয়ার আগে ‘প্রবাসী ভাবনা’ বইটি আপার হাতে তুলে দিলাম। আপাও আমাকে একটি শুভেচ্ছা উপহার দিয়েছেন।