রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ
অনলাইন ডেস্ক

গত ক’দিন আগে ফরাসী পত্র-পত্রিকায় একটা খবর এখানকার মানুষের মধ্যে বিরাট প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি করেছে। ফ্রান্স এবং ইটালী সীমান্ত শহর ভান্তিমিলায় এক সতের বছরের তরুণ বাংলাদেশী ট্রেনের ছাদে উঠে ফ্রান্সে প্রবেশকালে ইলেক্ট্রিফাইড হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। বাংলাদেশের সিলেটের গোলাপগঞ্জের এই তরুণের বিদেশের রঙিন স্বপ্ন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অধরা রয়ে গেলো।

অপরদিকে গত এক মাসে প্রায় তিনশত বাংলাদেশী বিভিন্ন পন্থায় ফ্রান্সে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। এটা নিশ্চিত করেছে এ সব নবাগত অভিবাসীরা এবং ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এরা মূলত বাংলাদেশের সিলেট এবং মাদারীপুরের বাসিন্দা। মধ্যপ্রার্চের দেশগুলো থেকে তারা দালালের মাধ্যমে রোমানিয়া এবং সার্বিয়া হয়ে বিভিন্ন পথে ফ্রান্সে পৌঁছেছে।

অনেক কষ্ট আর বিড়ম্বনার পরও তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে ভীষণভাবে আনন্দিত। তারা মনে করে যে তাদের এদেশে আসার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বা কার কি প্রতিক্রিয়া সেটা মুখ্যবিষয় নয়। দালালচক্রের নানা ব্যবহার এবং অনেক আর্থিক মূল্য দিয়ে এ পর্যন্ত এনে দেয়ার জন্যে অনেকেই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা শুধু তাদের জীবন উন্নয়নের জন্যে এদেশে পৌঁছানোটা একটা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে করে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি কাউকে না চিনলেও তারা বিভিন্নভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্যের আবেদন করছে। বাসস্থান, টাকা-পয়সা এবং খাবারের আবেদনই বেশি। এখানকার স্থানীয় বাংলাদেশীরাও যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করছে বলে তারা আমাকে জানিয়েছে। আরো অনেকেই তাদের মতো, একইভাবে ইউরোপে আসার জন্যে রাস্তায় আছে। তারাও সবাই জানে যে ইউরোপীয়ান দেশগুলো বেআইনি বাংলাদেশীদের এই আগমন বন্ধ করার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের উপর বিশেষ চাপ দিচ্ছে।

তাদেরই যারা বিভিন্ন পন্থায় ইউরোপ এসে এখানকার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তারাই বড় গলায় আজ যারা বিশেষত এদেশে নিজ জীবন প্রতিষ্ঠায় আসতে চায় তাদের নানা যুক্তি আর মানব পাচারকারীদের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের দেশপ্রেম দেখাচ্ছেন। তারাও যে একদিন দালালের মাধ্যমেই এ দেশগুলোতে এসেছিলেন তা আজ ভুলে গেছেন বলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আমার সমস্যা হলো এই পরিস্থিতিতে আমার সাংগঠনিক আর ব্যক্তিগত রোল কি হতে পারে? আমার সীমাবদ্ধতাও অনেক। রাষ্ট্রের স্বার্থ পবিত্র হলেও আমি সীদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার সামনের এই দুঃস্থ মানুষগুলোকে যথাসম্ভব সাহায্য করার। তারা আমার দেশের মানুষ, যেভাবেই তারা এদেশে আসুক না কেনো, আমি তাদের রাস্তায় ফেলে দিতে পারি না। অনেকেই বলবেন এতে করে মানব পাচারকারী দালালদেরই সাহায্য করা হয়। তারা আরো জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আরো অসহায় মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিবে।

এটা নিশ্চিত যে তারপরও দালালদের তৎপরতা বন্ধ হবে না ততোদিন, যতোদিন না আমাদের দেশের মানুষ স্বচ্ছল এবং নিরাপদ জীবনের অন্বেষায় দেশ-দেশান্তরে ছুটে যাবে।

তারপরও আমাদের মানবিক মানুষ হয়ে যথাসম্ভব এই আর্তপিড়ীত মানুষগুলোকে সাহায্য করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। অন্তত আমার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা-ই মনে হয়।

কথাগুলো যদি কারো বিবেককে সামান্যতম জাগ্রত করে, মানুষের মধ্যে মানুষের জন্যে একটা সহানুভূতির সৃষ্টি হয় তাহলেই আমার কথাগুলো তার স্বার্থকতা খুঁজে পাবে।

* সুচিন্তা বিভাগে লিখুন আপনিও...

প্রিয় পাঠক, সুচিন্তা বিভাগে লিখুন আপনিও। সমসাময়িক বিষয়াবলি নিয়ে লেখা পাঠান আমাদের ঠিকানায়।

লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়