প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক
ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার
শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। চীনের উপহার হিসাবে পাওয়া সিনোভ্যাকের টিকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে শুরু হয়েছে এ কর্মসূচি। এখন পর্যায়ক্রমে স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবাইকে টিকা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী সেপ্টেম্বরে খোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রায় সবার জন্যে টিকা সংগ্রহের কাজটি দৃশ্যমান হচ্ছে এবং অধিকাংশ টিকা দেশে চলে এসেছে। তবে আপাতত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় এনে সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) খোলার ব্যাপারে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এরপর প্রথমে আটকে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো আগে নেয়া হবে। পরে পরিস্থিতি বুঝে ধাপে ধাপে কলেজ ও বিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সারাদেশের চার লাখ ৪০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকসহ সর্বস্তরের শিক্ষকদের টিকাদান কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। সরকারি পর্যায়ের শতভাগ শিক্ষক এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩ লাখ ৬৩ হাজার ২২২ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ টিকা দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ হাজারের বেশি শিক্ষক টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের মধ্যে টিকা দেয়া হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি, যা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক এবং সুখের বিষয়।
|আরো খবর
উল্লেখ্য, সরকার দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে পর্যায়ক্রমে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা অনেক আগেই ঘোষণা করেছিল। সে লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ছয়দিনে ৩২ লাখ মানুষকে গণটিকাদান কর্মসূচি চলেছে দেশজুড়ে। গ্রামেগঞ্জের মানুষের মধ্যে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যেও এ টিকা কর্মসূচি চলবে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে নিবন্ধন ছাড়াও প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এমনকি দুর্গম অঞ্চলে হেলিকপ্টার দিয়েও প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এভাবে আগস্টজুড়ে টিকার বাইরে থাকা সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষককে টিকা দেয়ার কাজ চলেছে। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত ২২ বার দফায় দফায় ছুটি বাড়াতে হয়েছে এবং টানা ১৭ মাস ধরে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত দেশের সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী যার যার বাড়িতে অবস্থান করছে এবং অনলাইনে কোনোরকমে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঘরবন্দি ছাত্র-ছাত্রীরাও ক্লাসরুমে দ্রুত ফিরতে চায়, ফেলতে চায় স্বস্তির নিঃশ্বাস। এ লেখার সময় পর্যন্ত টিকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৬ হাজার ৭২ জন। সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার আগে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া শেষ হবে। স্বতঃস্ফূর্ত টিকাদান কর্মসূচি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার প্রতিফলন। নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য শোকের মাসে এটি একটি সুখের খবর।
করোনাকালীন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জটে আটকা ছিল। ফলে গত ১৭-১৮ মাস তারা শিক্ষাজীবন থেকে পিছিয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সরকার তাদের জন্য চাকরিতে ঢোকার মেয়াদ ২১ মাস বর্ধিত করেছে। অর্থাৎ যাদের জীবন থেকে চাকরিতে প্রবেশ করার জন্য ইতোমধ্যে ২১ মাস নষ্ট হয়ে গেছে, তারাও এখন যথাযথ নিয়মে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবে। ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ৬ হাজার ১৬০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছিল। দীর্ঘ ৪০ বছর পর ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। বেসরকারি ৪ হাজার ১৫৯ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবি চলমান, যা অবশ্যই সরকার সাধ্যমতো বিবেচনায় নেবে বলে আশা করা যায়। কোনোরকম ঘুস ও তদবির ছাড়া মেধার ভিত্তিতে হাজার হাজার বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবার জন্য বয়ে এনেছে সম্মান ও মর্যাদা। নতুন করে আরও প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুল, বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেনগুলো সরকারি সহায়তা পেলে উপকৃত হবে। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যও দূর করা উচিত। সবার জন্য আধুনিক ও গুণগত বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিন্ত করার লক্ষ্যে শিক্ষামন্ত্রীর এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক, যা জাতির জন্য বয়ে আনবে অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।
মুক্তবাজার অর্থনীতি, অবাধ তথ্যপ্রবাহ, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অভ্যন্তরীণ সম্পদের উন্নয়ন, রেমিট্যান্সের সাফল্য, নিজস্ব অর্থায়নে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, কূটনৈতিক সুসম্পর্ক ইত্যাদি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অত্যন্ত মজবুত। অর্জিত এ সাফল্য ধরে রাখতে হবে। কোনো অন্যায় ও অপরাধের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কোনোদিন আপস করেননি, বঙ্গবন্ধুকন্যাও করছেন না। আমাদেরও সেই পথেই চলতে হবে। অর্থাৎ এ সুখ ও শান্তি স্থায়ী হবে, যদি আমরাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশকে সহযোগিতা করি। দেড় বছরেরও অধিককাল ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, খোলার পর কীভাবে পুষিয়ে নেয়া যায় সেই পরিকল্পনা করতে হবে। তাই আসুন, আমরা অবস্থান নেই সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, মিথ্যা ও অন্যায়ের বিপক্ষে। আবেগের বশবর্তী হয়ে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে শিক্ষিত ও তরুণ সমাজকে রক্ষা করি, দেশকে রক্ষা করি অপসংস্কৃতি থেকে।
ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার : অধ্যাপক ও পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।