মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

প্রবাসী সন্তানের চিঠি

কবির হোসেন মিজি
প্রবাসী সন্তানের চিঠি

প্রিয় মা-জননী,

পত্রের প্রথমে আমার শ্রদ্ধেয় সালাম ও হৃদয় নিংড়ানো সবটুকু ভালোবাসা নিও। জানি না তুমি এবং তোমরা সকলে কেমন আছো গাঁয়ের ওই ছোট্ট কুঁড়ের ঘরটিতে। আমি ভালো না থাকার মাঝেও বিদেশের এই উঁচু উঁচু দালান-কোঠা গড়া চার দেয়ালের মাঝে তোমাদের দোয়ায় বেশ ভালোই আছি।

যাই হোক মা আজ কেনো জানি তোমাদের কথা বারবার খুব মনে পড়ছিলো। তাই সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষ করে ক্লান্তময় শরীরে তোমার কাছে দু কলম লিখতে বসেছি। আমি জানি মা তুমি আমাকে নিয়ে সবসময়ই অনেক চিন্তিত থাকো। আমি কোথায় আছি, কেমন আছি আমি কবে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফেরবো, সেই আশায় পথ চেয়ে বসে থাকো। আমাকে নিয়ে তুমি মোটেও চিন্তা করো না। এভাবে অযথা চিন্তা করলে তোমার শরীর খারাপ করবে। আর তুমি যদি অসুস্থ হয়ে পড়ো তাহলে যে তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে কুরে কুরে খাবে। তোমাকে হারানোর কথা ভাবতেই যেনো দেহ থেকে প্রাণ চলে যায়। এমনিতেই আমি বিদেশে আসার দু বছর পরেই বাবাকে হারিয়েছি, বাবাকে শেষবারের মতো একনজর দেখার সৌভাগ্যও আমার কপালে লিখা ছিলো না। তাই বলছি মা তুমি আমাকে নিয়ে একদম চিন্তা করো না। আমি বেশ ভালোই আছি। খুবই সুখে আছি। তবে কষ্ট শুধু এইটুকু মা, এখানে ঘাসের ডগায় ভোরের শিশির ভেজা সেই সোনালি সকাল দেখি না, দেখি না মেঘনা কিংবা ডাকাতিয়া নদীর কোলজুড়ে পূর্বের আকাশে রক্তিম সূর্যের হাসি। হিজলের ডালে বসে দোয়েল পাখির শিষ দেয়া মিষ্টি-মধুর সুর। ঢেউয়ের ভাঁজে ভাঁজে হেলে-দুলে বয়ে যাওয়া মাঝির ভাটিয়ালি গান। গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে নোলক পরা গায়ের বধূর কলসী কাঁধে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য। ফসলের ক্ষেতে কৃষকের শরীরে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাটির গন্ধ। চারদিকে শুধু বড় বড় অট্টালিকা দানবের মতো দাঁড়িয়ে আছে। যেদিকে চাই যেদিকে ফিরি তোমার ওই মায়াভরা বদনখানি কোথাও দেখি না।

তোমাকে একনজর দেখতে খুব ইচ্ছে করে মা। কিন্তু আমার ইচ্ছে শুধু ইচ্ছেই থেকে যায়। কী করবো মা আমি যে ভাগ্যের কাছে বন্দি। তোমার বাজান তো আর সোনার চামচ মুখে নিয়া জন্মায়নি তাই নিয়তি তোমার বাজান রে তোমার কোল থেকে অনেক দূরে নিয়ে এসেছে। তোমার চোখে অশ্রুর বন্যা রেখে যে স্বপ্ন-আশা নিয়ে আমি এদেশে পাড়ি জমিয়েছি, সেই চোখের জল মুছে দিয়ে আমি যদি তোমার মুখে সুখের হাসি ফুটাতে পারি তবেই আমার সেই স্বপ্ন সার্থক হবে। আর সেজন্য প্রয়োজন তোমার আশীর্বাদ।

মা তুমি শুধু মন খুলে আমাকে আশীর্বাদ করো। আমি যেনো ভাগ্যকে জয় করে ভালোই ভালো তোমার কোলে ফিরে আসতে পারি। আর হ্যাঁ মা একটি কথা লিখতে একদম ভুলেই গেছি, তা হলো আগামী মাসে তো বাবার মৃত্যুবার্ষিকী তাই এই চিঠির সঙ্গে বিশ হাজার টাকাও পাঠালাম, কয়েকজন মৌলভী ডেকে মিলাদ পড়িয়ে দিও। সেই সাথে ক’জন এতিম এবং ফকির-মিসকিন খাইয়ে দিও। আর তোমাকে আবারও বলছি মা, তুমি প্রতি সপ্তাহে বাজারে গিয়ে মশু ডাক্তারের কাছে প্রেশার মাফিয়ে আসবে এবং নিয়মিত ঔষধ খাবে। ছোট বোন রিতাকে আমার স্নেহ-ভালোবাসা জানাইও।

আমার চিঠি পড়ে উত্তর দিও মা, সেই সাথে তোমার আর রিতার এককপি ছবি দিতে ভুল করো না। অনেক কথা হলো মা আর আর নয় আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আবারো কথা হবে ততোদিন পর্যন্ত তুমি ভালো থেকো।

ইতি

তোমার বাজান শিশির।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়