রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

ভালোবাসার পৃথিবী
অনলাইন ডেস্ক

গ্রীষ্মের ছুটির একটা অংশ কাটাতে আবারও স্পেনে আসা। আমার তিন সন্তানের মা তার ৮২ বছর বয়সের মা-বাবা ও পরিবারের সবার সাথে এই সংক্ষিপ্ত সময়টা কাটাতে চান। কারণ, বলা তো যায় না করোনাময় এ বিশ্বে কার হায়াত কতটুকু। তার ওপর মেজো ছেলে রিমান আবারও কানাডার মন্ট্রিয়লে ফিরে যাবে। তার আরও একবছর বাকি ডাবল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করার। অন্যদিকে বড় ছেলে রায়হান তার শিক্ষার অংশ হিসেবে যাবে সিঙ্গাপুরে। তারও সেখানে একবছর লাগবে। বাড়িতে থাকবে শুধু রোমান; তার এখন চলছে আইনশাস্ত্রের চতুর্থ বছর। আপাতত তার বাইরে যাওয়ার কোনো তাড়াহুড়ো নেই।

চারদিন আগে আমরা সবাই দেড় ঘণ্টা ফ্লাইট আর সাড়ে চার ঘণ্টা ড্রাইভ করার পর গন্তব্যে পৌঁছলাম। রোমানের ড্রাইভ করার মধ্যে খুব আনন্দ, যা আমার মধ্যেও বহুকাল আগে ছিলো। কিন্তু এখন ঘণ্টাখানেক চালানোর পরই ঘুম চলে আসে। পুরো রাস্তা রোমান একাই অনেক আনন্দের সাথে চালিয়ে আমাদের নিয়ে এলো।

বাড়িতে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময়ের পর রায়হান তার নানিকে সবার প্রিয় কুকুর টনির ব্যাপারে প্রশ্ন করলো। এর জবাব শুনে আমরা বেশ হতাশ হলাম। কেননা টনি নাকি অন্য কোথাও চলে গেছে। মাঝেমধ্যে আসে। কোনো বাড়িতে অন্য কুকুরদের সাথে থাকে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো আমাদের।

পরদিন দুপুরে হঠাৎ করে টনি এসে হাজির। আমাদের খাবারের টেবিলের নিচে এসে ঘুরঘুর করছে সেই পুরোনো অভ্যাসে। আমরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। তাকে খাবার দিলাম। সে পুরো বিকেল আমাদের সাথে রইলো। রাতে ডিনারের সময় আমরা বাবা-ছেলেরা মিলে তাকে আদর করলাম, যথেষ্ট খেতে দিলাম এবং লক্ষ্য করলাম, শেষে যে হাড়ওয়ালা মাংসটা তার দিকে ছুড়ে মেরেছিলাম, তা সে মুখে নিয়ে সোজা রাস্তা ধরে চোখের আড়ালে চলে গেলো। আমার সন্তানরা একটু মন খারাপ করে বললো, “টনিকে এতো আদর করলাম, তার পরও সে চলে গেলো? একটা বিশ্বাসঘাতক।” কিন্তু আমার ধারণাটা একটু ব্যতিক্রম। ভাবলাম, টনি হয়তো এমন এক জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে একটা ফিমেল কুকুর আছে। তার প্রেমেই বোধ হয় পুরোনো মনিবকে ছেড়ে যেতে সে দ্বিধাবোধ করেনি। মোটামুটি সেখানেই তার আস্তানা গড়ে তুলেছে। তাই আদরের সময়গুলো আমাদের সাথে কাটিয়ে রাতের বেলায় শেষ মাংসওয়ালা হাড়টা নিয়ে প্রেমিকার কাছে ফিরে গেছে।

মজার ব্যাপার হলো, টনি পরদিনই আবার ফিরে এসেছে এবং অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সাথে মিশে গেছে। আমার সন্তানেরা কোনো কারণ খুঁজে পায় না যে টনি কেনো প্রতিদিন রাতের ডিনারের পর এভাবে চলে যায়। আমার মনে হয়, ভালোবাসার মূল্যায়ন সে ঠিকভাবেই করছে। আমাদের প্রতি তার আনুগত্য ও অনুভূতির শেষ নেই। সেই সাথে তার হৃদয় উজাড় করা উত্তাপ আর ভালোবাসা তারই কোনো সঙ্গিনীর জন্যে, যা অনুভব করার বা বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই। এটা যে কোনো প্রাণী একইভাবে অনুভব করতে পারে। আমরা মানুষ হিসেবে প্রায়ই সেভাবে লক্ষ করি না।

অন্য একটা বিষয় আমার মনটাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। আমরা এবার এখানে বেড়াতে আসার দিন থেকেই লক্ষ করছি যে একটা বিড়াল বহুবারই আমাদের সামনে দিয়ে মিউ মিউ করে ছুটে বেড়াচ্ছে। আগেরবার এই বিড়ালটা দেখেছি কি না মনে করতে পারছিলাম না। প্রশ্ন করে জানতে পারলাম যে এখানে আমাদের পৌঁছানোর একদিন আগে বিড়ালটা তার একমাত্র সন্তান হারিয়েছে; বিষয়টা খুবই মর্মান্তিক। বাচ্চাটার জন্মের পরপরই মা বিড়াল তার সন্তানকে মুখে নিয়ে এদিক-সেদিক যাতায়াত করতো। কোথাও রেখে দিয়ে অন্যদিকে চলে যেতো। একসময় খামারবাড়িতে যেখানে মুরগি বা অন্যান্য গৃহপালিত জন্তুর আবাস, সেখানে আবার মাঝে মধ্যে ইঁদুরের উপদ্রপও হয়। মা বিড়াল তার দুদিনের বাচ্চাটাকে খড়ের মধ্যে রেখে কোথাও চলে গিয়েছিলো। ওই সময় খামারের মালিক, অর্থাৎ আমার ছেলেদের নানা বিড়ালের ওই বাচ্চাটাকে ইঁদুর মনে করে মেরে ফেলেন। ব্যাপারটা শুনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। একদিকে সন্তানের জন্যে বিড়ালটার আকুল ক্রন্দন, অন্যদিকে অনাহুত একটা দুর্ঘটনা-এর দোষ কার? একসময় এটা নবজাতক বিড়ালটার দুর্ভাগ্য মনে করে সান্ত¡না পাওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু মন থেকে ওই বাচ্চা বিড়ালটার অকাল প্রস্থান হয়তো কোনো দিনই মেনে নিতে পারবো না।

এ জীবনে সামান্য আলো-বাতাসের অধিকার থেকেও সে বঞ্চিত হলো। একটা হাহাকার মা বিড়ালটার মতোই হৃদয়ের রক্তক্ষরণের বিহ্বলতা আমাকে বহুদিন অনুসরণ করবে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সরবেডা ডেল সিল

উত্তর-পশ্চিম স্পেন

১১ আগস্ট ২০২১

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়