রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

বঙ্গবন্ধু তুমি চির অমর
অনলাইন ডেস্ক

১৫ আগস্ট, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি স্বাধীনতার মহান স্থপতি হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি ছিলেন সৎ, মানবতাবাদী, সংগ্রামী নেতা। বাঙালি ও বাংলাদেশের অহঙ্কার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন রাজনৈতিক কবি।

বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্যে তৎকালীন সাড়ে ৭ কোটি বাঙালিকে একত্রিত করতে পেরেছিলেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন সত্যিই দক্ষিণ এশিয়ার সকল ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদগণ বুঝতে পাচ্ছিলেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ মানুষের একেবারে আপন আলয়ে পৌঁছাতে পেরেছেন। তাঁর সেই দরদী প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর শুনে এবং তাঁর তর্জনীর ঈশারায় নিজের জীবন-সংসার ত্যাগ করে হাজার তরুণ যুদ্ধে গিয়েছিলো।

জাতির পিতা বাংলা ও বাঙালিকে কত ভালোবাসতেন তাঁর স্মৃতিময় বক্তব্য উল্লেখ করছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে নয়াদিল্লিতে এসে পৌঁছলেন। সেদিন এক অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারণা হলো। দিল্লিতে এমন সংবর্ধনা বঙ্গবন্ধুর পূর্বে আর কেউ পাননি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানীরা যে পৈশাচিক ও কাপুরুষোচিত অত্যাচার চালিয়েছে ইতিহাসে কোনো শাসকের এ-রূপ জঘন্য অত্যাচারের কথা জানা যায়নি। তিনি আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, বাংলাদেশ বলতে গেলে এক নারকীয় তাণ্ডবের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে। এক কোটির বেশি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। পুরুষদের সামনেই মা-বোনদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়। কী অন্যায় করেছিলো বাঙালিরা? তারা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চেয়েছিলো-এটাই ছিলো তাদের অন্যায়। বাঙালিরা বাঁচতে চেয়েছিলো কিন্তু তার জবাবে তারা পেয়েছে বুলেট। বাংলাদেশ এখন একটা স্বাধীন রাষ্ট্র।

বছর ঘুরে যখন আগস্ট মাস আসে মনের গভীরে একটা বিশেষ হাহাকার শূন্যতা সৃষ্টি হয়! আহাকার-শূন্যতাটা অন্য কোনো কিছুর জন্যে নয়, শুধু বাঙালি হিসেবে নিজের প্রতি তীব্র ঘৃণা হয়। যতোদিন এই পৃথিবীর মায়ায় বেঁচে থাকবো আগস্ট আসলেই তীব্র ঘৃণা মনের মাঝে তাড়া করবেই।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে জঘন্য ঘটনা ঘটেছে বাঙালি বিপদগামী কিছু সেনা সদস্য দলবেঁধে ঢাকা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে প্রবেশ করে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, ৯ বছরের শিশু শেখ রাসেলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করে।

হত্যা করে ঘাতকরা ভেবেছিলো তাদের সব অপকর্ম লুকিয়ে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকলকেই ভুলে যাবে চিরকালের জন্যে! এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকে অন্যদিকে প্রবাহিত ব্যর্থ চেষ্টাও করা হয়। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা (বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী) এবং শেখ রেহেনা তাঁদের বাবা-মা-ভাইদের হত্যার বিচার করতে পেরেছেন। যা এখনো চলমান। হাজারো ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো চলমান। যদিও বারবার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিলো কিন্তু ঘাতকদল মেরে ফেলতে পারেনি। সর্বশেষ ঘাতকদল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হত্যাচেষ্টা করে। সেদিন অফিসার মাহবুব ঘাতকদের বুলেট নিজের বুকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বাঁচিয়েছিলেন। সেই ভয়াবহ দিনেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাগণ মানবপ্রাচীর দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জনসভায় স্টেজ থেকে নামিয়ে দ্রুত বুলেটপ্রুফ গাড়িতে তুলে দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলেন। ২১ আগস্টও বাঙালির জন্যে লজ্জাকর একটি জঘন্য ভয়াবহ দিন ছিলো। সেদিন আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ২৫/২৬ জন নেতা-কর্মী নিহত হন।

ইতিহাস ইতিহাসের গতিতে চলে ও চলবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার জন্ম হয়নি। কিন্তু মনের গহীনে তেমন একটি হত্যাকা-ের দৃশ্য আজও ভেসে উঠে। উপলব্ধি করি, কী ভয়ংকর সেই দৃশ্য! এতো শুধুই হত্যা নয় বরং বাঙালি জাতিকে মেধা-মননে চিরকালের জন্যে ধ্বংস করার প্রয়াস ছিলো। সত্যিই হত্যাকারীদের ঘৃণা জানানোরও কোনো ভাষা আমার জানা নেই। তবে ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই, আজও দেশ নিয়ে, জাতি নিয়ে, দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং তার দক্ষতা ও উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্নভাবে হিংসাত্মক তৎপরতায় ষড়যন্ত্র চলমান।

জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনের গভীরে দুঃখ পেয়ে অনেকটা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, দেশ স্বাধীন করে সবাই পেয়েছে স্বর্ণের খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি। বঙ্গবন্ধু যে আত্মসমালোচনা করেছেন, এর থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে। একজন সাধারণ মানুষ থেকে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তিনি তাঁর জীবন-যৌবনে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা আজ-কাল সত্যিই বিরল।

বাংলা ও বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি বিশ্বের মাঝে মাথা উঁচু করে চলবে। কোনো হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না, সর্বোপরি অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি তাঁর এক বাণীতে বলেছেন, আমার কাছে রাজনীতিতে হিন্দু-মুসলমান বলে কিছু নেই, আমরা সবাই মানুষ। সত্যিই বঙ্গবন্ধু আদর্শের সাথে কোনো আপস করেননি। বঙ্গবন্ধুর মতো সৎ-নির্লোভ মনের মানুষ পৃথিবীতে বিরল।

আমি নিজেকে পরম সৌভাগ্যমান মনে করছি, তা হলো, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্মরণে কুমিল্লার শম্ভু কুমার দেব (এস কুমার) রচিত ও সুরারোপিত আমার কণ্ঠে আমি আজ থেকে চার বছর পূর্বে দবছর ঘুরে ১৫ আগস্ট আসে আসছে আসবে, ভেবে ছিলো কি বাঙালি জাতি এদিনে ওরা কাঁদবে‘ গীতিকথায় গান রেকর্ডিং করেছি। যদিও আমার গানটি তেমনভাবে টেলিভিশন বা মিডিয়াতে প্রচার করতে পারিনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস এ গানটি একদিন ১৫ আগস্ট আসলেই সব জায়গায় বাজবে। হয়তো সেদিন আমিও বেঁচে থাকবো না। তবে মনে দুঃখ রয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী। তবুও কেনো বাংলাদেশের টেলিভিশনে শুধুই অর্থের ও সঠিক সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে আমার কণ্ঠের গানটি প্রচার করতে পারিনি! আমি এখনো বিশ্বাস করি এবং ভাবি একটি কবিতা, একটি ছবি, একটি গান শ্রদ্ধা জানানোর সব থেকে বড় মাধ্যম। কীর্তিমানের মৃত্যু নেই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তুমি চির অমর প্রতিজন বাঙালি মানুষের হৃদয়ের গভীরে।

পলাশ দে : সাংস্কৃতিক ও সংবাদকর্মী, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়