বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

পাটে আসতে পারে আমাদের অর্থনীতির যৌবন
সুধীর বরণ মাঝি

পাটকে বলা সোনালি আঁশ। আর সোনালি আঁশের দেশ, পাটের দেশ, আমার প্রিয় জন্মভূমি সোনার বাংলা বাংলাদেশ। এই গাছের ভেতরে লুকিয়ে আছে কত না রহস্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাট উৎপাদনকারী দেশের চেয়ে বাংলাদেশের পাট অধিক উন্নত ও সমাদৃত। সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের পাটশিল্প ছিলো অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। পাট আমাদের জাতীয় অর্থকরি ফসল। আমাদের জাতীয় পরিচয়ের মধ্যে পাট একটি প্রধান পরিচায়ক। একসময় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান হাতিয়ার ছিল এই পাট। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে ১ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। গত অর্থ বছরে তা ১৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ২০ লাখ ডলার। যা আমাদের অর্থনীতির জন্যে মারাত্মক হুমকি। অথচ এই খাতের রায়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। এই খাতের পরিকল্পনামাফিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের অর্থনীতিতে যৌবন আনা সম্ভব। আমাদের দেশের উন্নত পাট এখন বিশ্বের অনেক দেশে গাড়ি নির্মাণ, কম্পিউটারের বডি, উড়োজাহাজের পার্টস তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া ইনস্যুলেশন, ইলেকট্রনিক্স, মেরিন ও স্পোর্টস শিল্পেও বহির্বিশে^ বেশ পরিচিত বাংলাদেশের পাট।

একদিকে সোনালি আঁশ, অন্যদিকে রূপালি কাঠি দুয়ে মিলে নতুন সম্ভবনা তৈরি করেছে পাট। পাটকাঠি থেকে উচ্চমূল্যের অ্যাকটিভেটেড চারকোল উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। যা থেকে তৈরি করা হচ্ছে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি, ফেসওয়াশের উপকরণ, ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্ট, মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ও বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী পণ্য। পাট থেকে এই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে জীবাণু-প্রতিরোধী অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নিয়ে যখন ক্রমশই উদ্বেগ ও হতাশা বাড়ছে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী একেবারে নতুন ধরনের একটি অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অ্যান্টিবায়োটিকের গঠন ও বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হচ্ছে যে এটি শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবে বলে তারা আশা করছেন। পাট থেকে এই অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করা হয়েছে যার নাম দেওয়া হয়েছে হোমিকরসিন। তারা দেখলেন স্টেফাইলোকক্বাস হোমিনিস নামের এই ব্যাকটেরিয়াটি একটি অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, যাদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না, অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে অণুজীবের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে, তাদের চিকিৎসায় এই হোমিকরসিন অ্যান্টিবায়োটিক ভালোভাবেই কাজ করবে। সুপারবাগ নামে পরিচিত যেসব ব্যাকটেরিয়া প্রচলিত কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই কাবু হয় না, তাদের সাথে লড়াই-এ হোমিকরসিন সফল হবে বলে তারা আশা করছেন। এটি শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু রোগীর প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম বলে তারা জানিয়েছেন। ২০০৯ সালে জুটিন (ঢেউটিন) এবং ২০১৮ সালে সোনালি ব্যাগ (পলিথিন) উল্লেখযোগ্য। আর ২০২১ এর এই মাঝামাঝিতে সেই পাট থেকেই দেশের গবেষকরা খুঁজে বের করলেন জীবন বাঁচানোর ঔষধ। বেশ কিছু শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে মোক্ষমভাবে লড়াই করতে পারে এই অ্যান্টিবায়োটিক। সুপার বাগ নামে পরিচিত এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে, যার প্রচলিত কোন অ্যান্টিবায়োটিকেই প্রতিকার হয় না। এগুলোর ক্ষেত্রেও সফল হয়েছে এই নতুন এন্টিবায়োটিক। বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খান পাট থেকে পলিথিন আর ঢেউটিন তৈরির রাস্তা দেখিয়েছেন। আর এবার সেই পাট থেকেই দেশের গবেষকরা পথ দেখালেন জীবন বাঁচানো অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে প্রচলিত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) অতিমাত্রায় পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সমাধানে এগিয়ে এসেছেন একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী। পাটের পলিমার এবং পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগের আবিষ্কারক এবার তৈরি করেছেন পরিবেশবান্ধব পিপিই। পিপিই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন যা মানের দিক থেকে প্রচলিত পিপিইর মতো হলেও বিষাক্ত নয়। সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তা মিশে যাবে মাটির সঙ্গে। এমন পিপিই তৈরির উপাদান প্রস্তুত হলেও বাকি বিষয়টি রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে। প্লাস্টিক পণ্য থেকে শুরু করে বিমানের ভেতরকার দেয়ালের উপাদান তৈরি শুরু করেন এবং তা হবে পরিবেশ, দেশর অর্থনীতি বান্ধব এবং তেমনি ব্যয় সাশ্রয়ী। পিপিইর প্রধান উপাদান হলো পাটের ফাইবার থেকে নেওয়া সেলুলোজ এবং কিটোসান। কিটোসান হচ্ছে কাঁকড়া, গলদা চিংড়ি এবং চিংড়ির মতো মাছের শরীরের বাইরে থাকা শক্ত আবরণ থেকে তৈরি প্রাকৃতিক তন্তুযুক্ত উপাদান। সোনালি ব্যাগের মতো পিপিইর বায়োডিগ্রেডেবল উপাদান সেলুলোজ এবং কিটোসান কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য ভাইরাস থেকে রক্ষা করবে বলে জানিয়েছেন এই বিজ্ঞানী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) কাছ থেকে এর অনুমোদন পেয়েছেন। পলিথিন, ঢেউটিন তৈরি করেছেন পাট দিয়ে। বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহ্মদ খানের আবিষ্কৃত পাটের প্লাস্টিক থেকে তৈরি সোনালি ব্যাগ পলিথিন কিংবা টিনের বিকল্প তৈরি করেছেন পাট দিয়ে। এখন ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে পাট থেকে প্লাস্টিক শিট ও ব্যাগ উৎপাদন চলছে। যদিও কিছুটা বেশি দাম এই ব্যাগের, কিন্তু পলিথিন বর্জ্য অপসারণে যে খরচ হয়, তার তুলনায় এর দাম কমই। বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়লে ব্যাগের দাম কমে আসবে। মোবারক জানালেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ব্যাগের নাম দেন ‘সোনালি ব্যাগ’। তাই পবিরেশ রক্ষা, ডলার সংকট নিরসন, প্রাণ রক্ষাকারী এই ঔষধের দ্রুত যোগান নিশ্চিতকরণে সরকারী ও বেসরকারী সব মহলের যৌথ উদ্যোগ সময়ের দাবী। পাটের আবিষ্কারগুলোর পর্যাপ্ত ব্যবহার এবং উৎপাদন নিশ্চিৎ করতে পারলে আমাদের শুধু রপ্তানি আয়ই বৃদ্ধি পাবেনা, তার সাথে পরিবেশ বাঁচবে, মানুষের জীবন রক্ষা হবে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, মাটির উর্বরতা এবং পুষ্টি বৃদ্ধি পাবে, কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে, অর্থনীতির চাকা গতিশীল হবে, দেশের অর্থনীতি উন্নত হবে, বেকার সমস্যার সমাধান হবে, নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

প্রতিবছর দেশে উৎপাদিত প্রায় ৩০লাখ টন পাটকাঠির অর্ধেকও যদি সঠিকভাবে চারকোল উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা থেকে ২০০০ হাজার ৫০০কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এছাড়া পাটকাটিংস ও নিন্মমানের পাটের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে নারিকেলের ছোরড়ার সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হয় পরিবেশ বান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী জুট জিওটেক্সটাইল, যা ভূমিক্ষয় রোধ,রাস্তা ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নদীপাড় রক্ষা ও পাহাড়ধস রোধে ব্যবহৃত হচ্ছে। জিওটেক্সটাইলের অভ্যন্তরীণ বাজার এখন ৭০০কোটি টাকার উপরে। ভেজষ হিসেবে পাটপতা বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদেয় শাক এবং শুকনো পাটপাতার পানীয়, ‘ চায়ে ‘ বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের প্রক্রিয়া উদ্ভাবণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের পাট গবেষণা ইনিস্টিটিউট (বিজেআরআই) পাটের পাতা থেকে অর্গানিক চা উৎপাদন শুরু করে এবং বর্তমানে ঢাকার উত্তরায় গুয়ার্ছি অ্যাকুয়া এগ্রো টেক নামক একটি প্রতিষ্ঠান পাটের পাতা দিয়ে তৈরি অর্গানিক চা জার্মানিতে রপ্তানি করছে। সম্প্রতি পাটের পাতা থেকে ভেজষ গুণসম্পন্ন সবুজ চা উৎপাদন বড় পরিসরে শুরু করতে জামালপুরের সরিষাবাড়িতে একটি কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আঁশ ছাড়াও কেনাফ জীব থেকে ভোজ্য তেল এবং মেস্তার মাংসল বৃতি(শাঁস) থেকে জ্যাম,জেলি, জুস, আচার, চা ইত্যাদি প্রস্তুতের ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া পাটে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ সেলুলোজ রয়েছে। পাট থেকে পাল্প তৈরি করে পুনরায় সেলুলোজ রি জেনারেট করে ভিসকস তৈরি করা সম্ভব। আর এই ভিসকস তৈরি করতে পারলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। সেই পরিচায়ক পাটকে নিয়ে চলছে দেশীয় দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারীদের গভীর ষড়যন্ত্র এবং সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত। বাংলাদেশের পাট শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য আন্তর্জাতিক চক্রান্ত শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। বিশ্বব্যাপী আমাদের পাটর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা ও সুনাম। একশ্রেণির ব্যবসায়ী আমাদের পাটের বিশ্বব্যাপী চাহিদা ও সুনাম ধ্বংস করতে মরিয়া। আমরা সবসময়ই আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী চক্র এবং তাদের দোসরদের অতিলোভ এবং লুটপাটের মানসিকতার স্বীকার। আমাদের দেশে যতই দিন যাচ্ছে ততোই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং একটার পর একটাতে সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। পাট রপ্তানী আমরা শীর্ষে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পাটই ছিল আমাদের প্রধান রপ্তনি পণ্য। তৈরি পোশাকের ভিড়েও পাট রপ্তানি আয়ের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। কৃষকরা পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় পাটের উৎপাদন এবং সরবরাহ কিছুটা কমে গেছে। তাছাড়া ভারতের পাটের চেয়ে আমাদের পাটের গুণগত মান অনেক উপরে। দেশীয় পাটের বাজার এবং উৎপাদন ধ্বংস করার জন্য একটি মহল উঠেপরে লেগেছে। যাতে আমরা পাটে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ি। এতে বিনাশুল্কে পাট আমদানীর মধ্য দিয়ে একটি বিশেষ শ্রেণি বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে। আর এভাবে যদি আমাদের উৎপাদনকে ধ্বংস করে দেওয়া যায় তাহলে আমদানিকারক আমাদেরকে জিম্মি করে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে এবং পেয়াজের মতো যখন খুশি দাম বাড়াবে যখন খুশি দাম কমাবে। এতে করে আমাদেরর রপ্তানি অর্থনীতি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে শুধু তাই নয় আমাদের কৃষি অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়বে। সিন্ডিকেটের চক্করে পড়লে দেশের পাটশিল্প (পাটকল) ধ্বংসের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। যেখানে আমাদের টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হবে। সমস্যা হলো চালের কারসাজি হলে সবাই সরবরাহ। কারণ এটি নিত্যপণ্য। কিন্তু পাটের কারসাজি নিয়ে নিয়ে কেউ কথা বলে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কাঁচাপাটের অভাবে ৯৫শতাংশ পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পাটের ওপর দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটদের যে কুদৃষ্টি পড়ছে তা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের পাটের যে ঐতিহ্য, গুণগত মান ও সুনাম রয়েছে তাকে ধরে রাখতে হবে। পাটের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও দেশের সরকারি পাটকলগুলো ধুঁকছে; বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা লোকসান গুণছে। এই থেকে আমাদেরকে নতুন এবং কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে বেড়িয়ে আসতে হবে। নতুন নতুন রপ্তানি বাজার তৈরি করতে হবে। লোকসানের কারণ চিহ্নিত করে তার দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই খাতের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। পাটগুলোকে সংস্কার করে আধুনিকায়ন করতে হবে। পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে আধুনিক কৃষিপদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দান, উন্নত বীজ বিতরণ, বীজ সংরক্ষণ এবং পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চৎ করার উপর কার্যকর পদক্ষেপ ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিতে হবে।এই খাতের প্রশাসনিক দুর্বলতাগুলোকেও চিহ্নিত করে স্থায়ী সমাদান করা। এই খাতের দুর্নীতিবাজ এবং সিন্ডিকেটদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে পাটের সুদিন ফিরে আসবে এবং সোনালি আঁশ খ্যাত পাট আমাদের অর্থনীতিতে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

২০০৮ সালে মোবারক আহ্মদ খান আবিষ্কার করেন পাট থেকে ঢেউটিন। নাম দেন জুটিন। এটা তাপ কুপরিবাহী, ফলে জুটিনের ঘর শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হয়। এটিতে মরিচাও ধরে না, শব্দরোধীও এটি। আর হালকা, খরচ কম। এই জুটিন দিয়ে ঘরের ছাদ, চেয়ার-টেবিল, টাইলস, দেয়াল, পাকা পায়খানার প্যান, কুয়ার পাত সবই তৈরি হয়। ওজনে হালকা হওয়ায় পার্বত্যাঞ্চলে এর ব্যবহারও হচ্ছে। বুলেটপ্রুফ জুটিনও তাঁরা বানিয়েছেন। তা পরীক্ষা করেও দেখা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো পাটের প্লাস্টিক বা টিনের মতো উপাদান তৈরিতে বিশেষ জাতের পাটের প্রয়োজন হয় না। পাটকলে বাড়তি পড়ে থাকা ঝুট বা ছাঁটা পাট দিয়েই কাজ করছেন এখন পর্যন্ত। এসব উপাদান তৈরিতে পাট মেশাতে হয় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। তৈরি পোশাকশিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় ভিসকস সুতা বা রেয়ন। এটা কৃত্রিম। মোবারক আহ্মদ খান পাট থেকে রেয়ন তৈরি করছেন। এর পরীক্ষামূলক ব্যবহারও শুরু হয়েছে। পলিমার বিদেশের চেয়ে তিন গুণ বেশি দামে এখানে কিনতে হয়। বিশেষ পণ্য তৈরির জন্য কম দামে পলিমার পাওয়া যায়, তবে এসবের খরচ কমে আসবে। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে আরও অনেক আবিষ্কার আছে মোবারক আহ্মদ খানের। চিংড়ির খোসা দিয়ে বানিয়েছেন প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভ, যা ফরমালিনের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিকের হাত থেকে বাঁচাবে। সামুদ্রিক শেওলা থেকে বানিয়েছেন উদ্ভিদের বৃদ্ধি সহায়ক সার, যাতে চা–গাছের উৎপাদন দ্বিগুণ করেছে, লালশাকের মতো সবজির উৎপাদন সময় অর্ধেক কমিয়ে এনেছে। গরুর হাড় থেকে তিনি আবিষ্কার করেছেন বিশেষ ধরনের ব্যান্ডেজ, যা পোড়া বা ঘায়ের ক্ষতে ব্যবহার করা যাবে। পাটের আবিষ্কার যদি আমরা পরিকল্পনা করে কাজে লাগাতে না পারি তবে তা হবে আমাদের সার্বিক উন্নয়ন ,অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য হবে আত্মঘাতী। যা আমরা কোন ভাবেই কল্পনাতেও চাই না। তাই আসুন দেশের পরিবেশ রক্ষা,সার্বিক উন্নয়ন এবং উন্নতির স্বার্থে পাটের আবিষ্কারগুলোকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগাই।

সুধীর বরণ মাঝি : শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়