প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
কক্সবাজারে লেখকদের আনন্দভ্রমণ
ভ্রমণকে উৎসাহিত করতে ‘ভ্রমণে ভ্রমর মেলে’ শীর্ষক আমার একটি নিবন্ধ দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়। আশা করছি নিবন্বটি সম্মানিত পাঠক সানন্দে গ্রহণ করেছেন। তার কিছুদিন পরেই আমরা আনন্দ ভ্রমণে ঘুরে বেড়াই। ভ্রমণের আদ্যোপ্রান্ত তুলে ধরতেই গল্পের অবতারণ।
ভ্রমণের সূত্রপাত : চাঁদপুর সাহিত্য সমাজ প্রথমবারের মতো ‘গল্পকার একাদশ’ বনাম ‘কবি একাদশ’ নামে এক প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ আনন্দঘন পরিবেশে আয়োজিত হয়। খেলা শেষান্তে আরো বিনোদনমূলক প্রোগ্রাম করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন সুহৃদগণ। মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ওই সময় ভ্রমণের উপর জোর দেন। হঠাৎ এক সন্ধ্যারাতে মুহাম্মদ ফরিদ হাসান, কাদের পলাশ, আরিফ রাসেল ও তার সহধর্মিণী ডাঃ নাজমুন নাহার মমি এবং মাইনুল ইসলাম মানিক আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভূঁইয়া সুপার মার্কেট, বাবুরহাটে হাজির। চা-চক্রে খোশগল্পে কক্সবাজার ভ্রমণের সিদ্ধান্ত জানান। প্রথমেই বাসভ্রমণে আমার অস্বস্তি জানাই। সামনে বসার শর্তারোপ করলে সবাই সহাস্যে সম্মতি প্রকাশ করেন।
কয়েক দিন পর চাঁদপুর সাহিত্য সমাজের মেসেঞ্জার গ্রুপে ২৭-৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ কক্সবাজার আনন্দ ভ্রমণে অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়। নির্ধারিত ফি দিয়ে কনর্ফাম করি ভ্রমণযাত্রা। সাহিত্য মহলে অভূতপূর্ব সাড়া জাগে। উন্মুখ হয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকি।
ভ্রমণের আনন্দ নেশা সবার মাঝেই আছে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভ্রমণে বের হওয়া যায় না। ‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়’- এই বাণী সবসময় সব ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় না। কবি-সাহিত্যিকদের প্রত্যয়ের প্রেক্ষাপটে ‘ঘর হইতে বাহির হইয়া দু নয়নে দেখার’ আগ্রহ বেড়ে যায়। এভাবেই কোনো না কোনো উপলক্ষ/প্রেক্ষাপটে ভ্রমণের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আমার ভ্রমণের স্মৃতি-আনন্দণ্ডউল্লাস-বেদনা-অভিজ্ঞতা রোমন্থন করবো সম্মানিত পাঠকের সাথে। আশা করি পাঠ শেষান্তে বেরিয়ে পড়বেন আনন্দভ্রমণ ভুবনে।
দীর্ঘ প্রায় তিন মাসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দৌড়গড়ে। সন্ধিক্ষণ পর্যন্ত ছিলো টান টান আনন্দ উত্তেজনা। মাহেন্দ্রক্ষণ হাজির। ভ্রমণের প্রবাদ অনুযায়ী- ‘প্রস্তুতি’ যতো ভালো হবে, ট্যুর ততোধিক নিরাপদণ্ডসাশ্রয়ী হবে। সে লক্ষে, যাওয়া-আসা-খাওয়া-দাওয়া বিনোদন ভ্রমণের স্পট সময়সূচিতে পরিকল্পনা করা হয়। যাকে বলে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি। এর আগেই জানিয়ে দেওয়া হয় ভ্রমণকালীন করণীয়সমূহ। আমার সহধর্মিণী ও দুই কন্যা কেয়া-জয়া দুদিন আগেই আমার সবকিছু গুছিয়ে রাখে। পরিবারের পক্ষ থেকে উৎসাহ পেলে ভ্রমণ হয় নির্ঝঞ্ঝাট। আনন্দণ্ডঅনুভূতি বেড়ে যায়। প্রয়োজনীয় সব কিছু গুছিয়ে ট্রাভেল বেগে সংরক্ষণ করে রাখি। মানসিকভাবেও প্রস্তুত।
২৭ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে রাত সাড়ে আটটায় নির্ধারিত বাস ছাড়ার সূচি থাকলেও বাস কর্তৃপক্ষ বেঁকে বসে। কুমিল্লা বিশ্বরোড হয়ে যাওয়া তাদের রূট পারমিট নেই। তা তারা আগে বলেননি। গোপন রেখেছে। ওয়্যারলেস মোড় হয়ে লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী বিশ্বরোড বিআরটিসি বাসের নির্ধারিত রূট পারমিট। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাস্তবতা মেনে নিয়ে সবাই বাধ্য হলাম। এদিকে আমাদের ট্যুর পার্টনার শাদমান শরীফ হাজীগঞ্জে, মাইনুল ইসলাম মানিকের আপনজনরা ট্যুরে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ‘দোয়াভাঙ্গা’ স্টেশনে অপেক্ষমান। অগ্যতা তাদের ওয়্যারলেস মোড়ে আসতে হলো। কুমিল্লা থেকে উঠার কথা রাকিবুল হাসানের। পড়ে ফেনী থেকে তুলে নিবো সিদ্ধান্ত হয়। সন্ধ্যা সাতটায় বাস কর্তৃপক্ষ গুছিয়ে অবগত করলে দুই ঘণ্টা বিড়ম্বনায় পিছিয়ে পড়তে হতো না। রাত প্রায় সাড়ে দশটায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে শুভাগমন। বলে রাখা ভালো, ভ্রমণে অবশ্যই যাত্রার রোডম্যাপ জেনে-শুনে রির্জাভ গাড়ি ভাড়া করা/ট্রান্সপোর্ট সুবিধা ওয়াকিবাল হতে হবে। নচেৎ বিড়ম্বানা পোহাতে হবে। বিলম্ব বিড়ম্বনায় প্রায় দুই ঘণ্টা ‘তর’ সইছে না আমাদের। যেমনটি হয় বিয়ে বাড়ির গেইটে ‘বর’কে আটকে রাখা পর্যন্ত।
ভ্রমণের অমীয় বাণী- যাত্রার ক্ষণে হয়ে যায় অর্ধেক ভ্রমণ। বাস ছাড়ার সাথে সাথে এমনটি অনুভব হলো। যাই হোক, সামনে নির্ধারিত আসনে বসি। আমার জন্যে বাস ভ্রমণ ‘বিষাদের’ প্রথমেই বলেছি।
প্রাকৃতিক বাতাস আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা থাকায় স্টাফ সিটে বসে কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছি। রাতের সড়কপথের সৌন্দর্য উপভোগে অস্বস্তি কিছুটা লাঘব হয়। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ, লাল-নীল বাহারি বাতি। শফিংমলের চোখধাঁধানো লাইটিং, আলোর নৃত্য ফোয়ারা। মনে হচ্ছে পর্যটকদের ন্যে রাতে রূপসী বাংলার রূপ ফুটেছে। চলার পথে মনোরম দৃশ্যের ঝিলিক দেখার মতো। সড়কের মসৃণতা। ছোট-বড় ব্রিজ, ওভারব্রিজ নান্দনিক কাঠামো ভ্রমণযাত্রী হিসেবে মনের ভেতর ভিন্নতায় মুগ্ধ হই। বাসের ভেতরে প্রথম থেকেই আনন্দ হাস্য-রসাত্মকে মেতে উঠেন কবি, লেখক ও সুহৃদরা। পথিমধ্যে সবার জন্যে হালকা নাস্তা পরিবেশন করা হয়।
রাত গভীর হচ্ছে। ঘুমেরা হাজির। ঘুম পরানি মাসিপিসি দু চোখের পাঁপড়ি এক করে আলতো আবেশে বাসের সিটে হেলিয়ে দেয় মাথা। রাতের রাস্তা ফাঁকা। হাঁকিয়ে এগুচ্ছে বাসের চাকা।
আরামদায়ক ভ্রমণে চলতি পথে দুবার যাত্রাবিরতি হয়। দুরন্তপনায় ছুটছে বাসের গতিবেগ। ভোরের নির্জনতা কাটিয়ে, ঊষালগ্নের শুভেচ্ছাদূত আমাদের জড়িয়ে। সড়কের উপরে সাঁটানো তোড়নে লেখা- স্বাগতম কক্সবাজার জেলা। কক্সবাজারের আদি নাম ফালাংকি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামানুসারে ‘কক্স সাহেবের বাজার’ থেকে ‘কক্সবাজার’ নামকরণ হয়। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তায় মন জুড়ানোর দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতি শিল্পীর তুলিতে সবুজের বসতি। বিশালাকৃতি মাটির দেহ বুকে জড়িয়ে আমাদের অবিবাদন জানাচ্ছে পাহাড়ি দেবতা। ভোরের কুয়াশা আগেই ইঙ্গিত দিচ্ছে ঋতু পরিবর্তনের। রূপসী বাংলার রূপের পালাবদল। ঊষালগ্নে ফুলের সৌন্দর্য্য কৈশোরী কন্যার রূপে ধরা দেয় নিষ্পাপ নিরহংকার প্রকৃতি। শুধু চেয়ে থাকতে মন চায়। গাছে গাছে পাখিরা ডানা মেলে আমাকে জানান দিচ্ছে তুমিও ছুটবে কয়েক ঘণ্টা পড়ে এদিক-ওদিক। পথ চলতে থাকি আর হিসাব কষে কিলোমিটার কমতে থাকে। সামনে বসায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতি কিলোমিটারঅন্তর সাইন বোর্ডে কক্সবাজারের পথ কমতে দেখে দেখে ধৈর্যের অনুভূতি-উদ্দীপনা উতরে পড়ে। সূর্যমামার কিরণে ঝলমলিয়ে স্নিগ্ধ সকাল সাড়ে সাতটায় ‘বে মেরিন হোটেল’ কর্তৃপক্ষ চেক-ইনের মাধ্যমে বরণ করে নির্দিষ্ট রুমে রুমে আপ্যায়িত করেন। আমার রুম নং ৭-এফ। তিন কামরাবিশিষ্ট দুইটি কক্ষের একটিতে আমি ও ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম ফরহাদ এবং অন্য কক্ষে ম. নূরে আলম পাটোয়ার ও কাজী সাইফ (তারা দুজন ভায়রা ভাই)।
সারা রাত বাসযাত্রায় ক্লান্ত। ফ্রেশ হয় সকালের নাস্তা খেয়ে সবাই পূর্ণ বিশ্রামে। বিশ্রাম কি আর হয়! সাগরকন্যা ডাকছে আমায়। এক পলক দেখা করে এলাম।
২৮ সেপ্টেম্বর ভ্রমণ সিডিউল অনুযায়ী মধাহৃভোজ শেষে চান্দের গাড়িতে (বইয়ের ভাষায় জীপ গাড়ি) উঠি। সূর্যের আলোঘেরা ইট-পাথরের বসতি পেড়িয়ে সমুদ্রের কোলঘেঁষে গাড়ি এগুচ্ছে। পূর্বদিকে পাহাড়। পশ্চিমে হেলান দেয়া সূর্যের রোদমাখা পাহাড়ের একপৃষ্ঠের উজ্জ্বলতা দেখে মনে হবে পর্যটকদের আনন্দ দেয়ার জন্যে সাজুগুজু করে সেজে আছে বৃক্ষলতারা। মাঝ দিয়ে পিচঢালা রাস্তা। আরেক দিক দিয়ে সারি সারি ঝাউগাছেরা দলবেঁধে ছায়া দিচ্ছে অভিমানী সাগর কোলে। বয়ে চলেছি ইতিহাস-ঐতিহ্য খ্যাত পৃথিবীর দীর্ঘতম ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘের সমুদ্রের পানে চেয়ে চেয়ে। একের ভেতরে তিন। পাহাড়-সাগড়-বনভূমি। এ যেনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিলনমেলা। চোখে পড়বে প্যারাসুট দিয়ে আকাশ-সাগর-পাহাড়-বনভূমির মাঝে উড়ে উড়ে আনন্দণ্ডউচ্ছ্বাসের মহড়া। চান্দের গাড়ির সামনে সিটে বসা থাকলে লোভাকাতুর হয়ে বলতে পারেন আমিও উড়বো সমুদ্রের দিগন্তে। এই ‘গাড়ী থামুন’। গাড়ি যতো এগুবে আনন্দ দোলা দিবে। প্রকৃতির মাঝে চোখে পড়বে- সাম্পান। মনে পড়ে যাবে জনপ্রিয় গান- ও ও ও আমার সাম্পানো নাইয়া, তুই আমারে করলি দেওয়ানা। গানের কলি শেষ না হতেই ভ্রমণের প্রথমে ‘মিনি বান্দরবান স্পষ্টে’ পা রাখি। মুহূর্তেই অঝোরধারা বৃষ্টিতে আমাদের শীতল করে দেয়। চারদিকে পাহাড়। মধ্যখানে একটি একচালা টি-স্টলে দাঁড়িয়ে বাতাসের গতিবেগে এদিক-ওদিক নড়ে বৃষ্টিতে না ভেজার কৌশলী আশ্বয়। পাহাড়ের ঢালুতে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের রসুলপুরের আসমানীর গৃহের ন্যায় জীর্ণশীর্ণ বসতঘর। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষার জন্যে কিশোরের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। মনে দুঃখ ভর করছে। অন্যদিকে শিশুদের বৃষ্টিভেজা আনন্দে বাক্যালাপে মিশে যাই। বৃষ্টির গুন গুন শব্দ। বিদ্যুৎ চমকানো। চা পান সব মিলিয়ে ভ্রমণ উপজীব্য হয়ে উঠে। অঝোরধারা বৃষ্টিবিলাসের সাথে ছিলেন মুহাম্মদ ফরিদ হাসান, আনিস ফারদীন, নূরে আলম পাটোয়ারী, জাহিদ নয়ন, কাজী সাইফ, নূরুল ইসলাম ফরহাদ।
বৃষ্টি থেমে গেলো। পাহাড় প্রকৃতির সুগন্ধি অনুভব করলাম বৃষ্টির আগে এবং পরের। প্রকৃতির সুগন্ধির নির্যাস সবার ইন্দ্রীয়তে অনুভূত হয় না। প্রকৃতিপ্রেমিদের গায়ে আপন মহীমায় জড়িয়ে যায়। এর মাঝেই আমার ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস জয়া মোবাইলে কুশল বিনিময়ের পর ‘আনারকলি’ ফলের কথা বলে। সাথে সাথে ক্রয় করি। আমাদের অঞ্চলে এই ফল পাওয়া যায় না। সময়ের সাথে হিসেব মিলিয়ে ‘ইনানী’ ভ্রমণ স্পটে আসার পথে সবুজের ছায়াঘেঁরা পথে একাধিক চিংড়ির হ্যাচারি প্রতিষ্ঠান চোখে পড়ে। চান্দের ড্রাইভারের সাথে আলাপকালে বললেন, বিরূপ আবহাওয়া ও অতিলোভী ব্যাবসায়ীদের কারণে এখন পূর্বের তুলনায় চিংড়ি ব্যবসায় মন্দা। এখানকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভালো থাকলে লোক সমাগম পর্যটক বেশি আসে। আয়-রোজগার বেশি হয়। আমরা খুশি। এক সময় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে ‘জলের সোনা’ খ্যাত চিংড়ি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন/ভেজালের কারণে বিদেশি গ্রাহকরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। সঠিক পরিকল্পনা-অর্থায়ন-প্রশিক্ষণ, মৎসচাষী ও প্রকৃত ব্যবসায়ীদের দেশপ্রেম জাগ্রত করে পর্যায়ক্রমে অগ্রসর হলে ‘মাছের পোনা’ ‘জলের সোনা’ বৈদেশিক মুদ্রায় হাসি ফুটাবে।
চলে আসি ইনানী স্পটে। চোখের প্রশান্তি জুড়ে বালুর বুকে গাড়ি রেখে এগুতে থাকি সমুদ্র মিতালীতে। কী অপরূপ দৃশ্য। চোখের চৌহর্দিতে শুধু আকাশ আর সাগরজলের সমারোহ। জল আর বালুর বুকে পাথর বিছানো। প্রকৃতি সমাদরে বসার আকুতি জানালেও অন্যমনস্কতায় হারিয়ে যাই। বিচ বাকিং ও ঘোড়ায় চড়ে সমুদ্রের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার মজাই আলাদা। বিশেষ করে অভিভাবকগণ আদুরে সন্তানের আবদার রক্ষায় এই মজায় মেতে উঠে। ক্যামেরাবন্দির পর পা থেকে জুতা খোলার বিড়ম্বনায় থমকে দাঁড়ায় ভ্রমণসঙ্গীরা। উৎসাহ দিয়ে আনিস ফারদীনকে পাঁজরে তুলে এক চিলতে জলের বিরম্বনা থেকে ওপাড়ে নিয়ে গেলাম। সাথে সাথেই জুতা খুলে ফরিদ হাসান, জাহিদ নয়ন পানি মাড়িয়ে শাদমান শরীফ লাফ দিয়ে চলে আসে। শুরু হলো ঢেউয়ের সাথে সাথে সামনে- পিছনের খুনসুটি। এমন পড়ন্ত সূর্যের হলুদের আবরণে সাগরের জলরাশি দেখতে মনে হবে ‘হলুদসন্ধ্যার’ অঙ্গ সাজে ঢেউয়ের নিত্য। মৃদু ঢেউয়ের রোমান্টিকতা উপভোগে স্বচ্ছ নীলাভ হলদে রংয়ের সাগর জলে পায়চারী করা হলো বেশ সময়। ভ্রমণটি দলগতভাবে। ইচ্ছা থাকলেও সূর্যাস্ত দেখা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মনে মনে ভীষণ যন্ত্রণায় কাতরালাম।
পরবর্তী গন্তব্য ছিলো হিমছড়ি স্পট। পথে সরু ব্রিজ হওয়ায় বিজিবি শৃঙ্খলভাবে যানবাহন পারাপার করছে। ড্রাইভারদের তাড়া নেই। সবাই শৃঙ্খলা অনুযায়ী চলছে। নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি থামানো হলো হিমছড়ি স্পটে। কিন্তু হিমছড়ি দেখা হলো না! সে এক অজানা রহস্য। আস্তে আস্তে রহস্যঘেরা জাল উন্মোচিত হয়। কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন গাওয়া। এ আর কী! হোটেল কক্ষে চলে এলাম। ভ্রমণের প্রথমদিনেই টক জাল মিষ্টি তিক্ততা অনুভব করতে লাগলাম। আমরা চারজন রুমমেট হোটেল কক্ষে অস্বস্তিদায়ক পীড়া নিয়ে খানিক বিশ্রাম নিই। সন্ধায় সমুদ্রতীরে আপন গতিতে আনন্দ উপভোগে বেরিয়ে যাই। সারারাত যাত্রায় নির্ঘুম ছিলাম। আজ আর নয়। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমের ঘোরে আমরা। (চলবে)
মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া : আশিকাটি, বাবুরহাট, চাঁদপুর। জন্ম ১৯৭৭ সাল। পড়ালেখা চাঁদপুর সরকারি কলেজ; রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ চাঁদপুর সাহিত্য মেলা-২০২৩ ও চাঁদপুর কণ্ঠ পাঠক ফোরাম আয়োজিত ফিচার প্রতিযোগিতার পুরস্কার লাভ।