প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
সেন্টার ফর হিস্ট্রি এন্ড কালচার রিসার্চ চাঁদপুরের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠানটির কর্নধার গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ইতিহাসনির্ভর একাধিক গ্রন্থ প্রকাশ করে বোদ্ধা মহলে সমাদৃত হয়েছেন। মূলত এটি একটি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান। তারই ধারাবাহিকতায় কাদের পলাশের সম্পাদনায় ‘দেড়শ বছরের সাংবাদিকতা ও চাঁদপুর’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সেমিনার ও বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ ও চাঁদপুর প্রবাহের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রহিম বাদশা। সাংবাদিকতা ও চাঁদপুর নিয়ে আলোচনায় সাংবাদিক এ কে আজাদ সংবাদসংগ্রহে নির্যাতন ও সংবাদ প্রকাশে তৃপ্তিবোধের স্মৃতি রোমন্থন করেন। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সাংবাদিক আবদুল গণি পজিটিভ সংবাদ পরিবেশনে এক ভিন্ন মাত্রায় অভিহিত হয়েছেন। প্রতিহিংসাপরায়ণ সংবাদ প্রকাশে অনীহা এবং সংবাদ সংগ্রহের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন। প্রকাশিত গ্রন্থে সাংবাদিক আবদুল গণি নামটি লিপিবদ্ধ হলে যুতসই হতো। প্রাসঙ্গিক ক্রমেই সাহিত্য ও সাংবাদিকতার যোগসূত্র চলে আসে। কবি ইকবাল পারবেজ সাহিত্য ও সাংবাদিক বিষয়ে চুম্বক তুলে ধরেন। প্রাজ্ঞ অতিথিগণ সাহিত্য-সাংবাদিকতা ও মানবতার বিষয়ে জোরালো আলোকপাত করেন। সাংবাদিকগণ দেশ ও জাতীয় অবদানে স্মরণীয় হয়ে স্বগৌরবে ছিলো, আছেন, থাকবেন।
চাঁদপুরের জন্মগ্রহণকারী সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাংবাদিক ও সাহিত্যকদের কলমশিল্পী ভাবা হলেও দুয়ের আলাদা আলাদ কর্মপরিকল্পনায় বিচরণ।
সাংবাদিকতা একটি পেশা। একজন সাংবাদিক বাস্তব ঘটনা তথ্য-উপাত্ত সময় পরিসংখ্যান হুবহু তুলে ধরেন। নিজের ইচ্ছে মতো কোনো সংবাদ লিখতে পারেন না। তাঁর কর্ম ঘটনার উপর নির্ভরশীল। সাংবাদিকদের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং যুদ্ধকালীন সংবাদ সংগ্রহে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। সাংবাদিক তার প্রতিষ্ঠানের ‘চেইন অফ কমান্ড’ অনুসরণ করে সংবাদ সংগ্রহ করেন। সাংবাদিকতা স্বাধীন পেশা ভাবা হলেও স্বাধীন নহে। পরাধীনতার আবহে ‘স্বাধীনতা’র সুখ অনুভব করেন মাত্র। চাকরিচ্যুত হতে পারেন যে কোন সময়।
সাহিত্য : সাহিত্য ব্যাক্তিগত অনুশীলন কর্ম। কাল্পনিক বিচরণ। ইচ্ছেমতো দিক দিগন্তে পাড়ি দিয়ে নিজেকে জানান দেন পাঠকসমাজে। পরাধীনতার শৃংখল লেস মাত্র নেই। সাহিত্যকর্মী কল্পনা জগতে হাবুডুবুতে থাকেন মগ্ন। তথ্য সময় পরিসংখ্যান সবকিছুই নিছক কাল্পনিক। ইচ্ছেমতো প্রেমণ্ডবিচ্ছেদ -সংসার-সমাজ-রাজ মুকুট ‘পরেন’। ভালোবাসার মানুষকে- ‘পরান’। রাজ সিংহাসন ছেড়ে বনবাসে দেন- পাড়ি। ভালোবাসার গল্পে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে এভারেস্ট চূড়ায় দাঁড়িয়ে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসে চাঁদণ্ডসূর্য। প্রেয়সীর কপালে আদুরে হাতে প্রার্থনাসভার কোল-ঘেঁষে মাখিয়ে দেয় চাঁদ টিপ, গলায় জড়িয়ে দেয় সূর্যমালা। জলের উপর কৃষ্ণচূড়ার ঝরাপাতার দোল খাওয়া অপূর্ব জলরাশিতে হয়ে যায় ভালোবাসার পূর্ণস্নান।
সাহিত্যের সাথে সাংবাদিকদের শব্দ বিনিময়ের একটি ‘ঘটনা’ নি¤েœ তুলে ধরলাম।
সাহিত্য ও সাংবাদিক দুই সহোদর। ঘটনা : ঝড় তুফানের কবলে চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ পড়ে আছে।
সাংবাদিক : মৌসুমী বায়ূর প্রভাব ও নিম্ন লঘুচাপের কারণে ঝড়-তুফানের কবলে পরে চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের ঘোষেরহাট এলাকায় একটি ‘কৃষ্ণচূড়া গাছ’ রাস্তার পরে থাকায় জনদুর্ভোগ পোহাচ্ছে জনসাধারণ। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা অফিস আদালতে সময়মত হাজির হতে না পারায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। মুর্মুষু রোগীদের যথাসময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় মৃত্যু সন্ধিক্ষণে অনেকে। এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলেও বৈদ্যুতিক তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। দীর্ঘ সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার পরেও বিদ্যুৎ এবং সড়ক বিভাগের কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। জনদুর্ভোগ এড়াতে প্রশাসনের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগী জনসাধারণ।
সাহিত্য : প্রেমিকার সাথে অভিমান করে প্রেমিক উদাস মনে রাস্তার হাঁটছে। প্রেমিকা দৌড়ে এসে পিছন থেকে দু হাতে জাঁপটে ধরছে প্রেমিককে। দুজনে অভিমানী ঝড় বাদলে জড়াজড়ি করে ‘কৃষ্ণচূড়া’র রঙচটা সোনালি রঙ্গের গালিছায় ফুলশয্যায় বিমোহিত হয়ে প্রেমিক চিৎকার করছে-- ভালোবাসি ভালোবাসি। দুজন দুজনার হাত ধরে এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে কাদামাটি দিয়ে হাঁটতে গিয়ে ব্যথায় প্রেমিকা ও আহ্-ও আহ্ গুণ গুণ শব্দ করছে। পাশের রুম থেকে কান্না মিশেল শব্দ শুনে এগিয়ে এসে বাবা ছেলের গায়ে পরশমাখা হাত রাখতেই ঘুম ভেঙে হতচকিয়ে উঠে বসে- ‘প্রেমিক’!
এটাই হলো সাহিত্যে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে কাল্পনিক বিচরণ। এখানে-
সাংবাদিক ও সাহিত্যের তুলনামূলক পার্থক্যের রূপায়ন করেছি মাত্র। এদের যুগল ব্যাপ্তির সমাচার বিভিন্নভাবে মিল-অমিল ফুটে উঠে।
সাহিত্য ও সাংবাদিক : একটি লাল জবা অন্যটি সাদা জবাফুল। এই দু ফুলের রূপ রস গন্ধ ঘ্রান সৌন্দর্যের নির্যাসে একক ও যৌথভাবেভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে।
প্রকৃতির সাথে মিশে সাংবাদিক থেকে সাহিত্যে বিচরণ করে সাংবাদিক ও সাহিত্যক নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সংবাদপত্রে কাজের সুবিধা নিয়েই এদের পথচলা। সাহিত্যনির্ভর লেখা প্রকাশ করে নিজের সাহিত্য-ভাবনা অনায়াসে পাঠক সমাজে তুলে ধরতে পারেন। সংবাদ সংগ্রহ গিয়ে ঘটনা বা প্রকৃতির ছোঁয়ায়
কবিতা গল্পের প্লট পেয়ে যায়। হয়ে যায় সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। এই দুয়ের রুপক হওয়া দুরূহ অধ্যবসায়।
প্রকারন্তে- সাহিত্য থেকে সাংবাদিক হয়ে বিচরণ করা সহজতর। একজন সাহিত্যিক কল্পনা জগতে বিচরণ করলেও সমাজ রাষ্ট্র প্রকৃতি নিয়ে ভাবনায় এগিয়ে থাকে। যা কবিতা গল্পে ফুটে উঠে। ঘটনা-দুর্ঘটনা, পজিটিভণ্ডনেগেটিভ যে কোন সংবাদ একজন সাহিত্যিক সাহিত্যের শৈলীরূপে পারঙ্গমতা দিয়ে হৃদয়গ্রাহী মমতায় সংবাদটি অনন্য করে তুলেন। পাঠক সমাজ সহজেই বুঝতে পারেন। সংবাদপত্রের কাটতি বেশি হয় বলে, বেশির ভাগ সংবাদপত্রের কর্নধার সাহিত্যি সুহৃদের ভালোবেসে সংবাদপত্রে কর্মপরিবেশ দিয়ে তৃপ্তি ও গর্বভোধ করেন। সাহিত্যের লেখনী সংবাদপত্রে ভূমিষ্ট হওয়ায় এর দিকপালের ভালোবাসা সানন্দে গ্রহণ করে একজন সাহিত্যকর্মী।
এতে সাহিত্যের ব্যত্যয় ঘটে না। শব্দের ঝংকার ও কর্মের গতিময় চাঞ্চল্যতায় সাফল্যের সিঁড়িতে সাংবাদিক ও সাহিত্যিক থেকে সাহিত্যিক ও সাংবাদিক অক্ষর ভঙ্গিতে খ্যাতির শীর্ষে।
এ ক্ষেত্রে নিকট অতীতে কবি শামসুর রাহমান বর্তমানে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন উল্লেখযোগ্য। পূর্বেই উল্লেখ করেছি-
সাংবাদিক ও সাহিত্যের যুগল ব্যাপ্তি লাল সাদা জবা ফুল। এর ব্যাবচ্ছেদ ব্যাপ্তি গভীরতা ব্যাপক। নিবন্ধন সংক্ষিপ্তকরণের প্রয়াসে আমার স্বল্প সক্ষমতায় আলোচনা করেছি মাত্র।
সাহিত্য সাংবাদিকতা ও মানবতা : সাংবাদিক প্রতিনিয়ত সংবাদ পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেন। এতে দৈনন্দিন খোঁজ খবর পাঠক পড়েন। জানেন। রাষ্ট্র ও সমাজের চিত্র দ্রুত উঠে আসে। জনগণ সহজেই বুঝতে পারেন দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপট। রাষ্ট্রের ক্রাইসিস মুহূর্তের সংবাদ জনসাধারণকে জানান দেয়া নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়ে। আমাদের কলম জাতির ক্রান্তিকালে নিরব? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে গণহত্যায় নেতৃত্ব শূন্য করে দিল! বিশ্ব হতবাক। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কলমের কালি ঝরে না! ব্যার্থতায় আজও সাংবাদিক সমাজ ব্যথিত। সাহিত্যের বিষাদের কালো কালিতে কবিতা গল্পে
অক্ষরের প্রতিবাদে সোচ্চার হয় মানবতার বিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে। ব্যর্থতার গ্লানি মোচনে পনের আগস্ট এবং পরবর্তী সকল সিরিজ মানবতাবিরোধী অপকর্মের ঘটনার তুলে ধরা সময়ের দাবি। রাষ্ট্র ও মানবতাবিরোধী অপকর্মের তথ্য জনগণকে জানালেই সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় মানবতার জয় ধ্বনিতে উদীত হবে স্বস্তি শান্তি নিরাপত্তার স্বনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ।