বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

কেরাই নৌকায় কাঠালিয়া
গাজী মুনছুর আজিজ

চেঙ্গাকান্দি ঘাটের দুইপাশে ছোটবড় অনেক ছইওয়ালা নৌকা। কুমিল্লার দাউদকান্দির কাঠালিয়া নদীর এ ঘাট থেকে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে মানুষ যাতায়াত করে এ নৌকার মাধ্যমে। এমন একটি ছইওয়ালা নৌকায় কবিবন্ধু রাসেল মাহমুদ আর আমি উঠি শরতের এক দুপুরে। আগের রাতে রাসেল জানালেন একদিন নৌকায় ঘুরতে চান। তার সে ইচ্ছে পূরণ করতেই এ সফর।

নৌকায় ওঠার আগে বাজারের জসিমের চায়ের দোকানে গরুর দুধের চা খেয়ে নিই। বেশ স্বাদের চা। এরপর হেঁটে আসি ঘাটে। আমাদের জন্য নৌকা ঠিক করে দেন স্থানীয় সাংবাদিক লিটন সরকার বাদল। মাঝি মো. লোকমান লিটনের স্কুলবন্ধু। আর লিটন আমার বন্ধু। আমাদের নিয়ে ইঞ্জিন চালিত ছইওয়ালা নৌকা চলতে শুরু করে।

লোকমান মাঝি জানান স্থানীয় ভাষায় এ নৌকা ‘কেরাই’ নামে পরিচিত। লম্বাটে ছইওয়ালা এ নৌকার গায়ে সামনে ও পেছনে টিন কেটে বানানো মাছ, পাখি, হাতি, ময়ূর, ফুলসহ ইত্যাদির অবয়ব বসানো। এখানকার ছোটবড় প্রায় সব নৌকাতেই এ নকশা দেখা যায়।

কাঠালিয়া নদী হয়ে আমরা চলছি। এ নদীর উৎপত্তি গোমতী ও মেঘনা। শরতের নীলাকাশ বলে নদীর পানিও মাঝেমধ্যে নীল মনে হয়। অন্যদিকে দুপুর হলেও সূর্যের তেজ তেমন নেই। তাই ছইয়ের বাইরেই আমরা বসি। দেখি আমাদের নৌকার মতো আরও অনেক নৌকা আসা-যাওয়া করছে। প্রায় সব নৌকা মানুষ ও মালপত্রে বোঝাই। মূলত দাউদকান্দী বাজার থেকে আশপাশের গ্রামের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে বাড়ি ফিরছেন বা কেনাকাটা করার জন্য বাজারে আসছেন।

নদীর অনেক স্থানেই বাঁশ দিয়ে মাছের ঘের দেওয়া হয়েছে। মূলত এ ঘের মাছ ধরার ফাঁদ। খাবার দিয়ে এ ঘেরে মাছ আনা হয়। তারপর ঘেরের চারপাশে জাল দিয়ে ধরা হয় মাছ। শীত মৌসুমেই চলে এ মাছ ধরা। ঘের ছাড়াও ছোট ছোট নৌকায় করে কেউ জাল দিয়ে আবার কেউ বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন।

ঘণ্টা খানেকের মাথায় নৌকা ভিড়ে মেঘনা থানার চর কাঠালিয়া গ্রামের ঘাটে। ঘাটে নেমে চা খেয়ে অল্প সময় বসে আবার উঠি নৌকায়। গন্তব্য আরেক গ্রামের ঘাট। এবার প্রায় আধা ঘণ্টার মাথায় আসি আলীপুর বাজার ঘাট। এটিও মেঘনা থানার এলাকা। এ ঘাটেও অনেক কেরাই নৌকা বাঁধা। বোঝা যায় এ গ্রামের মানুষও দাউদকান্দি বাজারে তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে কেরাই নৌকায় যাতায়াত করেন।

ঘাটে নেমে আশপাশটা ঘুরি। বসি ঘাটের চায়ের দোকানে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতে বলতে চা খাই। তারপর আবার উঠি নৌকায়। কিছুক্ষণ চলার পর মাঝি জানান এখন আমরা কাঠালিয়া ছেড়ে গোমতী নদী দিয়ে চলছি। প্রায় আধা ঘণ্টায় আসি ভুইয়ার বাজার। এ এলাকা তিতাস থানার। তবে এ বাজারে আমরা না নেমেই ফিরতে শুরু করি।

ফেরার পথে নৌকা আবার ভিড়ে আলীপুর বাজার ঘাটে। আমি সঙ্গে নেওয়া গামছা পরে নেমে পড়ি নদীতে। তবে রাসেল নামেনি। সে নৌকায় থেকেই গোসলের স্বাদ নিয়েছেন। খানিক ডুবিয়ে ও সাঁতার কেটে উঠি নৌকায়। বেশ আরাম বোধ করি। সত্যিই শহরের ট্যাবের পানিতে গোসলের তৃপ্তি বা প্রশান্তি কমই মেলে। শহর ছেড়ে নৌকায় নদীর বাতাসে আমরা বেশ প্রফুল্ল। সে প্রফুল্লতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কাঠালিয়ার গোসল।

নদীর দু’পাশে বাড়িঘর আছে। কিছু বাড়ি আছে নদীর পাড়ের বিলের মাঝে। কিছু বাড়ির ঘাটে মাছ ধরার নৌকা বাঁধা ও জাল শুকাতে দেওয়া। বোঝা যায়, এসব বাড়ির মানুষ মৎস্যজীবী।

কথায় কথায় লোকমান মাঝি জানান, তিনি একসময় আনসার বাহিনীর হয়ে কুস্তি খেলেছেন। অংশ নিয়েছেন সাফ গেমসেও। বিদেশেও গিয়েছেন। সব ছেড়ে এখন নৌকা বাইছেন। হাসিমুখে বলেন ‘ভালো আছি’।

বিকেলের আগে ফিরি চেঙ্গাকান্দি ঘাটে। বাজারের মুক্তিযোদ্ধা হোটেলে লিটনসহ দুপুরের খাবার খাই কয়েক পদের মাছ দিয়ে। এ মাছ কাঠালিয়া নদী থেকেই ধরা। এরপর লিটনকে বিদায় দিয়ে বাসে চেপে আসি পুটিয়া। এখানে আমাদের জন্য আগে থেকেই বসে আছেন অগ্রজ বন্ধু মতিন সৈকত ও বন্ধু এসএম মিজান। তারা দু’জনই পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। বসি মহিউদ্দিনের চায়ের দোকানে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের এ চায়ের দোকানে আড্ডা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সঙ্গে মহিউদ্দিনের তৈরি গরুর দুধের চা আর ঝালমুড়ি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়